লিটন কেন ব্যর্থ হন? কারণ খুঁজে বের করলেন কোচ সালাউদ্দিন

লিটন কেন ব্যর্থ হন? কারণ খুঁজে বের করলেন কোচ সালাউদ্দিন

মাঝে মধ্যে না, বেশিরভাগ সময় মনগড়া শট খেলতে গিয়ে আউট হন। তার ডিফেন্স ভেদ করে, ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক গলে বল বেরিয়ে গিয়ে স্টাম্প ভাঙার নজির কম। বলের ম্যুভমেন্ট ও সুইং না বুঝে আনাড়ির মত উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেনও কম। বেশির ভাগ সময় মনগড়া শট খেলতে গিয়েই অকাতরে উইকেট দিয়ে আসেন লিটন দাস।

হয় স্লগ সুইপ খেলতে গিয়ে লেগবিফোর উইকেট, না হয় ডিপ মিডউইকেট আর ডিপ স্কোয়ার লেগের আশপাশে সীমানার কাছে ক্যাচ হন। না হয় সুইপ কিংবা স্কুপ বা রিভার্স সুইপের মতো আত্মঘাতী শট খেলে সম্ভাবনাময় ইনিংসের অপমৃত্যুই ঘটান বেশি। সে কারণেই লিটন দাসের ব্যাট থেকে বড় ইনিংস বেরিয়ে আসার সংখ্যা কম। ভালো খেলতে খেলতে বাজে ও দায়িত্বজ্ঞানহীন শট খেলে কম রানে সাজঘরে ফেরাই যেন লিটন দাসের ব্যাটিংয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাই সীমিত ওভারের ক্রিকেটে লিটন দাসের নিকট অতীত ও সাম্প্রতিক সময়ের পারফরমেন্স খুব খারাপ। ৫০ ওভারের ফরম্যাটে শেষ ১৪ ম্যাচে ফিফটি নেই একটিও। আর শেষ ৮ ম্যাচে ( ৬,১, ০, ০, ২,৪, ০, ০) দুই অংকেই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। চারবার আউট হয়েছেন শূন্য রানে।

প্রায় একই অবস্থা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও। ২০ ওভারের খেলাতেই ১৩ ম্যাচ পর ফিফটির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মোটামুটি পরিপাটি টেকনিক, ক্রিকেট ব্যাকরণের সব শট খেলার পারদর্শিতা থাকার পরও লিটন দাসের এমন হতশ্রী অবস্থার কারণ খুঁজে পান না অনেকেই।

তবে কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের ধারনা, লিটন একটু বেশি চিন্তা করেন নিজেকে নিয়ে এবং দুশ্চিন্তাও করেন। হয়তো বা সে কারণেই তার ব্যাটের ধারাবাহিকতা কম। জানা অংক ভুল করার মতো উইকেটে গিয়ে ভালো খেলতে খেলতে একটা বাজে শট খেলে আউট হয়ে যান।

লিটন দাসের ফর্মহীনতা ও তার ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে না পারার কারণ খুঁজতে গিয়ে টাইগারদের ব্যাটিং কোচ সালাউদ্দিনের মনে হয়েছে, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা ক্রিকেটকে খুব বেশি উপভোগ করেন না। তারা আপনা-আপনি কিছু চাপ নিয়ে নেন।

পুরো ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে ক্রিকেট খেলতে হলে সমালোচনা সহ্য করতেই হবে। এটাই স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা অনেক উপভোগ করেন ক্রিকেটকে। ব্যর্থ হলেও তাদের জন্য অনেক অপশন থাকে। তারা অন্য একটা চাকরি করতে পারেন। চাকরি না করলেও সরকার তাদের বেকার ভাতা দেবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের ওই অবস্থা নেই। তাদের ভালো খেলার চাপটা অনেক বেশি। তারা জানে ভালো খেলতে না পারলেই জাতীয় দল থেকে বাদ পড়তে হবে। আয় কমে যাবে। এসব সাত-পাঁচ ভেবে তাদের ওপরে সংক্রিয়ভাবে অতিরিক্ত কিছু চাপ চলেই আসে। কারণ, দলে থাকা হবে কি না, দলের বাইরে গেলে কীভাবে পরিবার চালাতে হবে, সবকিছু চলেই আসে। এই ছেলেরা কোনো চাকরিও করতে পারবে না। সুতরাং ক্রিকেটটাই তাদের সব।

সালাউদ্দিন জানান, ক্রিকেটারদের এসব ভাবনা থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা চলছে। এখান থেকে বের হওয়া চেষ্টা করছি। কারণ আমাদের বের হতেই হবে। ছেলেরা যেন ক্রিকেট উপভোগ করে, তাদের মানসিকতা যেন উন্নত হয়, সেই চেষ্টাই করছি। একটা ছোটখাটো ব্যাপারে তাদের ওপর চাপ আসতে পারে। হয়তো একটা লেখার কারণেই চাপ আসতে পারে। এগুলো থেকে ক্রিকেটারদের বেরিয়ে আসতে হবে। তাদের শিখতে হবে।

জাতীয় দলের এই কোচ বলেন, লিটনকে যখন আমি সামনাসামনি দেখি বা কথা বলি, সে অনেক গভীর চিন্তা করে। একজন অধিনায়ক হিসেবে এটা বেশি জরুরি। মাঝেমধ্যে হয়তো একটু দুশ্চিন্তাও করে। সেটি করলে খেলাটা খুব বেশি উপভোগ করা যায় না। এ কারণে তার পারফরম্যান্স মাঝে মাঝে খারাপ হয়। এখান থেকেও সে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে সে আরও ভালো অধিনায়কত্ব করবে।