Advertisement

শুধু অটোমেশন নয়, দুর্নীতি রোধে চাই স্বাধীন নিরীক্ষা

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট, ২০২৫

মোহাম্মদ সেলিম
মোহাম্মদ সেলিম

বাজেট-পরবর্তী এক আলোচনায় এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বন্ড লাইসেন্স নবায়নে দুর্নীতি রোধে অটোমেশনের ভূমিকায় জোর দেওয়া হবে। প্রকৃত অর্থেই অটোমেশনপ্রক্রিয়া যুগোপযোগী পদক্ষেপ। তবে প্রশ্ন হলো মানবিক বিবেচ্য বিষয় যেখানে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে শুধু অটোমেশন দিয়ে কি দুর্নীতি বন্ধ সম্ভব? অভিজ্ঞতা বলছে, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন নিরীক্ষকের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

অটোমেশন ও ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুফল পাওয়া গেছে। যেমন এমআইএস তথ্যের হেরফের প্রতিরোধ করে, রেকর্ডের নির্ভুলতা নিশ্চিত করে ও নথিপত্রের প্রবাহে শৃঙ্খলা আনে। ফলে তথ্যভিত্তিক প্রশাসন আরও কার্যকর ও দক্ষ হয়ে ওঠে।

তবে উৎপাদন তথ্য যাচাই, অপব্যয় মূল্যায়ন, মজুত পণ্য গণনা ও চলতি কার্যের হিসাব—এসবই মূলত মানুষনির্ভর। এখানেই তৈরি হয় দুর্বলতা। কোম্পানি প্রতিনিধি ও কাস্টমস কর্মকর্তার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় অনৈতিক সমঝোতার সুযোগ থেকে যায়। ফলে অটোমেশন কেবল ভুল কমাতে পারে, কিন্তু অনৈতিক লেনদেন পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে পারে না।

স্বাধীন নিরীক্ষক এ শূন্যস্থান পূরণ করেন। কোম্পানি আইন ১৯৯৪ (ধারা ২২০) অনুযায়ী, তাঁদের আইনি ও পেশাদার স্বীকৃতি রয়েছে। তাঁরা তৃতীয় পক্ষ হিসেবে কাজ করেন। এর ফলে নিরপেক্ষ ও পেশাদার প্রতিবেদনের নিশ্চয়তা মেলে; উৎপাদন ক্ষমতা, কাঁচামাল ব্যবহার ও মজুতের সঠিক বিশ্লেষণ হয়; এমআইএস তথ্যের ওপর বিতর্ক সীমিত হয়; কোম্পানি ও কাস্টমস কর্মকর্তার যোগসাজশের পথ সংকুচিত হয় ।অর্থাৎ স্বাধীন নিরীক্ষক শুধু তথ্য যাচাই করেন না; বরং ন্যায্যতা নিশ্চিত করেন।

বিষয়টি হলো এমআইএস অটোমেশন ও স্বাধীন নিরীক্ষকের বিকল্প নয়; বরং সুশাসনের ক্ষেত্রে একে অপরের পরিপূরক। এমআইএস ও অটোমেশনের স্বাধীন নিরীক্ষার সুবিধা হলো অটোমেশন সময়মতো সঠিক তথ্য সরবরাহ করে আর স্বাধীন নিরীক্ষক সেই তথ্যের বিশেষজ্ঞ ব্যাখ্যা ও প্রাসঙ্গিক বোধ্যগম্যতা নিশ্চিত করেন। এতে করণিক ত্রুটি অনেক কমে আসে ও নিরপেক্ষ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। অটোমেশন উন্নত তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলে আর নিরীক্ষক সেই তথ্যের ওপর জবাবদিহি ও নিশ্চয়তা প্রদান করেন। স্বচ্ছ তথ্য প্রদানের পাশাপাশি পেশাগত তত্ত্বাবধান আস্থা তৈরি কর। ফলে পুরো প্রক্রিয়া আরও বিশ্বস্ত ও কার্যকর হয়ে ওঠে।

বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন মেট্রিক্স, মজুত গণনা, চলতি কার্যের হিসাব—এসব অত্যন্ত জটিল বিষয়। আইসিএমএবির সদস্যরা এসব কাজে উচ্চস্তরের পেশাদারত্ব ও বস্তুনিষ্ঠতা দেখিয়ে থাকেন। তাঁদের যুক্ত করলে প্রতিবেদনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বহুগুণে বাড়বে।

অটোমেশন ও স্বাধীন নিরীক্ষক বিকল্প নয়; বরং সুশাসনের জন্য একে অপরের পরিপূরক। বন্ড লাইসেন্স নবায়নপ্রক্রিয়ায় এই দ্বৈত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে শুধু দক্ষতা নয়; বরং স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সময় এসেছে এনবিআর, বিজেএমইএ ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের যৌথভাবে এ পদক্ষেপ গ্রহণের।

মোহাম্মদ সেলিম, এফসিএমএ: সাবেক সভাপতি ও কাউন্সিল মেম্বার, আইসিএমএবি

Lading . . .