প্রকাশ: ১৫ জুন, ২০২৫

ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৩৫ মনের 'কালো মানিক'-কে উপহার দিলেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের ঝাটিবুনিয়া গ্রামের এক কৃষক ও বিএনপি কর্মী মো: সোহাগ মৃধা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তিনটি ট্রাকসহ ৫০ জন বিএনপির কর্মী নিয়ে আমড়াগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাটিবুনিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তিনি ঢাকার উদ্যশে রওয়ানা দিয়েছেন।
এদিকে বেগম জিয়াকে ষাঁড় উপহার দেয়ার কথা শুনে তার বাড়িতে ভীড় করেন শত শত উৎসুক মানুষ ও নেতাকর্মীরা।
জানা গেছে, ষাঁড়টি ঢাকায় পৌঁছে দিতে এনজিও থেকে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। ৫০ জন কর্মী সবার গায়ে রয়েছে সাদা রঙের জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির লোগো সম্বলিত টি-শার্ট। সাথে রয়েছে অভিজ্ঞ একটি ব্যান্ড দল। তাদের ঢালের বাদ্য, বাঁশির সুর এবং কাঁশার ঝনঝনিতে মুখরিত পুরো এলাকা। এছাড়া মিনি ট্রাকগুলো সাজানো হয়েছে তাজা ধানের শীষ দিয়ে। এসব ট্রাকের সামনে রয়েছে জাতীয় ও দলীয় পতাকাসহ ঈদ উপহার সম্বলিত বিএনপির ব্যানার। ট্রাকের ভিতরে ঢাকের বাদ্যে চলছে নাচ। এভাবে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে বেগম জিয়াকে কোরবানির জন্য ষাঁঢ় উপহার দিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ান দিয়েছেন কৃষক সোহাগ মৃধা।
২০১৮ সালের শেষের দিকে হৃদয়ের গভীর থেকে সবচেয়ে বেশি আবেগ ও সত্যিকারের ভালোবাসায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এই বিএনপি কর্মী স্থানীয় চৈতা বাজার থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার টাকায় একটি ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী ক্রয় করেন। সপ্তাহ যেতে না যেতেই গাভীটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। পরে গাভীটি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে দেন আর বাছুরটিকে ভুসি, খৈল, সবুজ ঘাস, খড়কুটা খাইয়ে পরিবারের সদস্যরা মিলে ছয় বছর ধরে লালন-পালন করেন। সেই গাভীর বাচ্চাটিকেই তিনি লালন-পালন করেছেন। এখন যার ওজন প্রায় ১৪০০ কেজি। দৈর্ঘ্য ১০ ফুট। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি। বাজারে এই ষাঁড়ের দাম উঠেছিল ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু সোহাগ বিক্রি করেননি। কারণ তার মনে এক বিশেষ উদ্দেশ্য। তিনি চান তার ‘কালো মানিক’-কে ঈদুল আজহার কোরবানির পশু হিসেবে তার প্রিয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহার দিবেন। গরুটি কালো হলেও ভালোবেসে দৃষ্টিনন্দন এ ষাঁড়টির নাম রাখেন 'কালো মানিক'। সে মোতাবেক সকালে বেগম জিয়ার ঢাকার ফিরোজার বাসভবনে উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন সোহাগের দল। দরিদ্র হয়েও বিএনপি প্রেমীর এমন বিরল ভালোবাসার জন্য সবাই সোহাগের প্রশংসা করেন।
কালো মানিকে দেখতে আসা মো: রবিউল ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে গরু উপহার হিসেবে নিয়ে যাওয়ার কথা শুনে এখানে এসেছি। সোহাগ মৃধার জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন দেখে মনটা ভরে গেছে।’
সুবিদখালী গ্রামের আতিক মিয়া বলেন, ‘সোহাগ মৃধা অনেক দরিদ্র শ্রেণীর কৃষক। আসলে বড় মন না থাকলে এভাবে বড় ত্যাগ কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ঢাকঢোল এবং নাচ গানে মেতে ষাঁড়টি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আশা করছি, বেগম জিয়া ষাঁড়টি গ্রহণ করবেন।’
সোহাগ মৃধা বলেন, ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ নেত্রীকে এক কৃষক একটি গরু উপহার দিয়েছিল। তখনই পন করি আমার নেত্রী জননেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও আমি আমার ষাঁড়টি উপহার দিবো। পরে ষাঁড়টি আমার সন্তানের মতো যত্ন করে লালন-পালন করেছি। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে ষাঁড়টি বড় করেছি। আমার নেত্রীর উদ্দেশ্যে ষাঁড়টি নিয়ে রওয়ানা দিতে পেরে আমি শুকরিয়া আদায় করছি। তবে সে গ্রহণ করুক বা না করুক আমি ষাড়টি নিয়ে তার বাসভবন পর্যন্ত যাবো।
তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘এটি ভাইরাল হওয়ার জন্য নয়, আমার আবেগ থেকে করা একটি উদ্যোগ। নেত্রী যদি উপহারটি গ্রহণ করেন, সেটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
আমড়াগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সোহাগ মৃধা গরিব হলেও তার মনটা আকাশের মতো বিশাল। সে পন করেছে ষাঁড়টি বেগম জিয়াকে উপহার দেয়ার জন্য নিয়ে যাবেই। তাই তাকে আমরা ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতা করেছি।