তিন দিন খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেল অসুস্থ হাতিকে, দেওয়া হলো চিকিৎসা
প্রকাশ: ৩১ মে, ২০২৪
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনে তিন দিন খোঁজাখুঁজির পর হাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। পরে হাতিটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়েছে বন্য প্রাণী বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল।
ওই বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ছিলেন গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আজ শুক্রবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে তাঁরা অসুস্থ হাতিটির খোঁজ শুরু করেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে তখন ঝড়বৃষ্টি চলছিল, কোথাও খোঁজ মিলছিল না হাতিটির। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে বনের শেষ প্রান্তে পার্শ্ববর্তী বড়লেখা উপজেলার ৭ নম্বর পুঞ্জি (ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাসের স্থানকে পুঞ্জি বলা হয়) এলাকার কাছে হাতিটির সন্ধান মেলে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চিকিৎসার জন্য হাতিটিকে ধরতে প্রথমে চেতনানাশক ট্রাঙ্কুলাইজার গান (বিশেষ ধরনের বন্দুক) ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তা কাজ করেনি। প্রায় এক ঘণ্টা হাতিটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর ট্রাঙ্কুলাইজার গান দিয়ে হাতিটিকে দূর থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয়। পরে এটি জঙ্গলে ঢুকে পড়ে।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, হাতিটির বয়স ৬০ বছরের বেশি মনে হয়েছে। এটির শারীরিক অবস্থা ভালো মনে হয়নি। পেছনের পায়ে কিছু ক্ষত দেখা গেছে। তবে এ ক্ষত ধীরে ধীরে শুকাচ্ছে। হাতিটি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। তবুও হাতিটিকে পর্যবেক্ষণে রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকার বন বিভাগের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত খবর জানাতে বলা হয়েছে।
হাতিটির চিকিৎসাকালে অন্যদের মধ্যে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের মৌলভীবাজার কার্যালয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম, বন বিভাগের জুড়ী কার্যালয়ের রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন, মৌলভীবাজার সদর বন্য প্রাণী বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা সারওয়ার আলম, বড়লেখার রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাশ ও প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্রান্তীয় চিরসবুজ লাঠিটিলা বনে চারটি বন্য হাতি দল বেঁধে বিচরণ করত। এর মধ্যে একটি হাতি বেশ কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে। হাতিটি দলছুট হয়ে একা ঘুরে বেড়ায়। মাঝেমধ্যে আশপাশের লোকালয়ে চলে যায়। তবে মানুষের কোনো ক্ষয়ক্ষতি করেনি।
খবর পেয়ে স্থানীয় বন বিভাগ ও মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা সম্প্রতি বনের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে হাতিটির অবস্থান জানার চেষ্টা করেন। কিন্তু এটিকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেখান থেকে ফিরে বন্য প্রাণী বিভাগের কর্মকর্তারা অসুস্থ হাতিটির চিকিৎসায় পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে গাজীপুর সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি দল পাঠানো হয়। দলের অন্য দুই সদস্য হলেন গাজীপুর সাফারি পার্কের কম্পাউন্ডার সুমন বাড়ই ও মাহুত (হাতি দেখাশোনাকারী ব্যক্তি) আবু তাহের।
হাতিটির বিষয়ে গত সোমবার প্রথম আলোর অনলাইনে ‘মৌলভীবাজারে অসুস্থ হাতিটি খুঁজে বের করে চিকিৎসা দেবে বন বিভাগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।