স্ত্রীর কিডনিতে সুস্থ হয়ে ডিভোর্সি প্রেমিকার ঘরে স্বামী
প্রকাশ: ৮ জুলাই, ২০২৫

প্রেম, ত্যাগ আর বিশ্বাসের অনন্য নিদর্শন হয়ে উঠতে পারত এই সংসার। যেখানে এক নারী নিজের কিডনি দান করে সুস্থ করে তুলেছেন প্রাণপ্রিয় স্বামীকে। কিন্তু সে ভালোবাসার প্রতিদান এসেছে নির্যাতন, প্রতারণা আর পরকীয়ার রূপে। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে সাভারের ১নং কলমা এলাকায়।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সাভার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাভার থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো: গোলাম মোস্তফা নয়া দিগন্তকে জানান, এ ধরনের একটি ঘটনা আমি জানতে পেরেছি।
তিনি আরো জানান, আমি নিজেও মর্মাহত, কিছু কিছু কাজ করলে আল্লাহ খুশি হন। আইনগত ও সামাজিকভাবে ব্যাপারটি দেখব।
জানা যায়, ৩৫ বছর বয়সী উম্মে সাহেদীনা টুনি নিজের কিডনি দান করে স্বামী মোহাম্মদ তারেককে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিন্তু সুস্থ হয়ে ওঠার পর সেই স্বামীই জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া ও অনলাইন জুয়ার জালে। একপর্যায়ে টুনিকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং পরকীয়া প্রেমিকার সাথে বসবাস শুরু করেন।
২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে মালয়েশিয়া প্রবাসী তারেকের সাথে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় টুনির। এক বছর পরই একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। সংসার চলছিল ভালোই, কিন্তু ২০০৮ সালে ধরা পড়ে তারেকের দুটি কিডনি প্রায় অচল। স্ত্রী টুনি তখন সদ্য মা হয়েছেন। প্রথমে তিনি নিজের বাড়িতে বিউটি পার্লার, নিজের স্বর্ণ, মায়ের পেনশনের টাকা ও বুটিকসের কাজ কর চিকিৎসা করিয়েছেন স্বামীর। পরে আরো বিভিন্ন সম্পদ বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন। আর সেই চিকিৎসা করাবেন ভারতে।
দীর্ঘ ১০ বছর চিকিৎসার পর ২০১৯ সালে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে টুনি নিজের একটি কিডনি স্বামীর শরীরে প্রতিস্থাপন করান। তখনো ভেবেছিলেন, ভালোবাসার এই পরীক্ষা এবার সফল হলো। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তই যেন হয়ে দাঁড়ায় জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল।
জীবন বাঁচিয়ে শুরু হলো নির্যাতনের অধ্যায়- কিডনি প্রতিস্থাপনের পর থেকেই তারেকের আচরণ পাল্টে যেতে থাকে। আইসিইউ থেকে কেবিনে ফিরে স্ত্রীকে হেনস্তা করতে শুরু করেন। সুস্থ হওয়ার পর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। পাশাপাশি আসক্ত হয়ে পড়েন পরকীয়ায় ও অনলাইন জুয়ায়। একপর্যায়ে টুনিকে বাড়ি থেকে বের করে দেন এবং ডিভোর্সি প্রেমিকার সাথে গিয়ে বসবাস শুরু করেন।
টুনি বলেন, যে মানুষটার জন্য নিজের কিডনি পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছি, সেই মানুষটাই আজ আমাকে খালি হাতে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। আমার শরীর দিনদিন খারাপ হচ্ছে, চিকিৎসকেরা বলেছেন- আমি দীর্ঘদিন বাঁচব না। অথচ সে চায় আমি ডিভোর্স দিয়ে বাড়িটাও লিখে দিই তার নামে।
শেষমেশ আইনি পথে হাঁটলেন টুনি। ফেব্রয়ারিতে থানায় অভিযোগ দেন, এরপর এপ্রিল মাসে নারী নির্যাতন ও যৌতুকের মামলায় তারেক গ্রেফতার হন। তবে জুনে জামিনে বের হয়ে আবার প্রেমিকার বাড়িতে ফিরে যান।
টুনির আইনজীবী জানান, এই ঘটনার বিচার হওয়া জরুরি। শুধু নারী নির্যাতন নয়, মানবদেহ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে প্রতারণার অভিযোগেও মামলা করা যেতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, এটি শুধু একটি নির্যাতনের ঘটনা নয়; বরং বিশ্বাসঘাতকতার জঘন্য উদাহরণ। এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
এ বিষয়ে টুনির মা বলেন, ‘আমার মেয়ে ওর স্বামীকে ভালোবেসে টাকা, শরীর, কিডনি সব দিয়েছে। অথচ সেই অকৃতজ্ঞ মানুষটি আজ মেয়েটাকে ঠকিয়ে নিজের পথ ধরে হাঁটছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।
তারেক জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। মোবাইল নম্বর বদলেছেন, পরিবারও মুখ খুলতে নারাজ। টুনি ও তার পরিবার আজও অপেক্ষায় ন্যায়বিচারের, সম্মানের, এবং জীবনের কাছে ন্যূনতম সুবিচারের।
আরও পড়ুন