দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে ৪৫ প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠনের বিবৃতি
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দুর্গাপূজা নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, সুইডেনসহ বিভিন্ন দেশের ৪৫টি প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠন। এক যৌথ বিবৃতিতে সংগঠনগুলো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন ফর এথনিক এন্ড রিলিজিয়াস মাইনওরিটিজ ইন বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক শর্মিষ্ঠা সাহা সংগঠনগুলোর পক্ষে এই বিবৃতি বার্তা পাঠান।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দুর্গাপূজায় মদ-গাঁজার আসর বসানো যাবে না।’ ওই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সংগঠনগুলো বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজাকে মাদক ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে তিনি শুধু হিন্দুধর্মকে অপমান করেননি, বরং দেশের নাজুক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকেও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলেছেন। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিকে গভীরভাবে আঘাত করেছে এবং দুর্গাপূজার মতো পবিত্র উৎসবকে ‘মদ-গাঁজা’র সঙ্গে যুক্ত করে বিভ্রান্তিকর বার্তা দিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের অত্যন্ত দায়িত্বশীল অবস্থানে থেকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন বর্ণবাদী ও উসকানিমূলক বক্তব্য উগ্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর জন্য বিপজ্জনক অজুহাত তৈরি করবে। বিশেষত কথিত ‘তৌহিদি জনতা’ গোষ্ঠী এসব মন্তব্যকে কাজে লাগিয়ে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠানসমূহকে ভুয়া অজুহাতে অপবাদ দেওয়া, আক্রমণ বা বিঘ্ন ঘটানোর সুযোগ পেতে পারে। শোভাযাত্রা ও বিসর্জন অনুষ্ঠানেও ইচ্ছামতো বিধিনিষেধ আরোপ করে তিনি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও চর্চার মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছেন।
সংগঠনগুলোর দাবি, এ বক্তব্য জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত চুক্তির (ICCPR) ২০(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতিগত, বর্ণগত বা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক প্রচারণা যা বৈষম্য, শত্রুতা বা সহিংসতায় প্ররোচনা দেয়, তা নিষিদ্ধ করবে রাষ্ট্র।
বিবৃতিতে যে চার দফা দাবি উত্থাপন করা হয় তার মধ্যে রয়েছে, অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার অবমাননাকর মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন এবং বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে প্রকাশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইবেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ক্ষমা না চাইলে তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এ ধরনের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থাকবে এবং সারা দেশে দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে। ভবিষ্যতে কোনো ধর্মীয় উৎসব বা আচার-অনুষ্ঠানকে সরকারি বক্তব্যের মাধ্যমে অবমাননা বা সীমাবদ্ধ করা হবে না। একই সঙ্গে হিন্দুসহ সব ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ ও বৈশ্বিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন এ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষায় বাধ্যবাধকতা পালনে তাগিদ দেন।
বিবৃতির শেষে প্রবাসী সংগঠনগুলো বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতি অবিচল সংহতি পুনর্ব্যক্ত করে বহুত্ববাদ, আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানবিক মর্যাদার মূল্যবোধ রক্ষার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
যেসব সংগঠন যৌথভাবে এই বিবৃতি দিয়েছে সে সংগঠনগুলো হচ্ছে- আগমনী অস্ট্রেলিয়া ইনকরপোরেটেড, অস্ট্রেলিয়ান বেঙ্গলি হিন্দু এসোসিয়েশন ইনকরপোরেটেড, অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেশন ফর এথনিক অ্যান্ড রিলেজিয়াস মাইনোরিটিস ইন বাংলাদেশ লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়ান ফোরাম ফর মাইনোরিটিস ইন বাংলাদেশ (এএফএমবি) ইনকরপোরেটেড, বেঙ্গলি সোসাইটি ফর পূজা অ্যান্ড কালচার ইনকরপোরেটেড, বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া পূজা অ্যাসোসিয়েশন ইনকরপোরেটেড (ক্যানবেরা), বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ক্যালিফোর্নিয়া (যুক্তরাষ্ট্র), বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অব ইউএসএ, বাংলাদেশ পূজা অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি ইনকরপোরেটেড, কুইন্সল্যান্ড, বাংলাদেশ পূজা অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়া ইনকরপোরেটেড (বিপিসিএসএসএ), বাংলাদেশ পূজা অ্যাসোসিয়েশন ইনকরপোরেটেড, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর পূজা অ্যান্ড কালচার ইনকরপোরেটেড, বাংলাদেশি কানাডিয়ান হিন্দুস (কানাডা), বেঙ্গলি পূজা অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি অব ভিক্টোরিয়া ইনকরপোরেটেড (অস্ট্রেলিয়া), বেঙ্গলি সোসাইটি অব মেলবোর্ন ইনকরপোরেটেড (অস্ট্রেলিয়া), ব্যুরো অব হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড জাস্টিস (বিএইচআরজে) ফ্রান্স, বুয়েট আহসানউল্লাহ হল নর্থ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস অ্যালামনাই অস্ট্রেলিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক রিজিয়ন (বাহনা) ইনকরপোরেটেড, চেমসফোর্ড হিন্দু সোসাইটি যুক্তরাজ্য, সিপিসিএল অস্ট্রেলিয়া, দেবীপক্ষ ইনকরপোরেটেড অস্ট্রেলিয়া, দর্পণ কালচারাল অ্যান্ড রিলিজিয়াস অ্যাসোসিয়েশন; সিডনি ইনকরপোরেটেড; অস্ট্রেলিয়া, গ্লোবাল বেঙ্গলি হিন্দু কোয়ালিশন (জিবিএইচসি) কানাডা, গ্লোবাল বেঙ্গলি হিন্দু কোয়ালিশন যুক্তরাষ্ট্র, হিন্দু কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ সেন্টার যুক্তরাষ্ট্র, হিন্দু ফোরাম সুইডেন, ইলাওয়ারা বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া, ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য সারভাইভাল অ্যান্ড রাইটস অব হিন্দুস ইন বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়া ইনকরপোরেটেড, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব কানাডা, জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন যুক্তরাজ্য, লোকনাথ ব্রহ্মচারী মিশন সিডনি ইনকরপোরেটেড অস্ট্রেলিয়া, মাইনরিটি লিগ্যাল টিম যুক্তরাজ্য, নবরূপ সিডনি ইনকরপোরেটেড অস্ট্রেলিয়া, পূজা অ্যান্ড কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অব নর্দার্ন টেরিটরি ইনকরপোরেটেড অস্ট্রেলিয়া, রাধা কৃষ্ণ গৌড়ীয় মন্দির ইনকরপোরেটেড অস্ট্রেলিয়া, সনাতন অ্যাসোসিয়েশন যুক্তরাজ্য, সর্বজনীন পূজা উৎসব অব ভিক্টোরিয়া (এসপিইউভিআইসি) ইনকরপোরেটেড অস্ট্রেলিয়া, সেক্যুলার বাংলাদেশ মুভমেন্ট যুক্তরাজ্য, সেক্যুলার সিটিজেন্স বাংলাদেশ জার্মানি শঙ্খনাদ ইনকরপোরেটেড অস্ট্রেলিয়া, শ্রী শ্রী লোকনাথ ভক্ত পরিষদ যুক্তরাজ্য, ত্রিনয়নী ইনকরপোরেটেড অস্ট্রেলিয়া, ইউনাইটেড হিন্দু কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন লন্ডন (যুক্তরাজ্য), ইউনাইটেড হিন্দুস অব ইউএসএ, ভক্ত মন্দির সিডনি ইনকরপোরেটেড (অস্ট্রেলিয়া)।