Advertisement

সুনামগঞ্জে আবারও ভারী বৃষ্টি, সুরমায় পানি বেড়েছে ৩৪ সেন্টিমিটার

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৫ জুন, ২০২৫

সুনামগঞ্জে আবারও ভারী বৃষ্টি, উজানের ঢলে নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে। সদর উপজেলার চলতি নদীর সোনাপুর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তোলাছবি: প্রথম আলো
সুনামগঞ্জে আবারও ভারী বৃষ্টি, উজানের ঢলে নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে। সদর উপজেলার চলতি নদীর সোনাপুর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার সকালে তোলাছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জে মাঝে বৃষ্টি কিছুটা কমায় মানুষের মনে যে স্বস্তি উঁকি দিয়েছিল, বুধবার রাতের ভারী বৃষ্টিতে সেই স্বস্তির রেশ কেটে গেছে। তার বদলে ‘ছোট-বড় যা–ই হোক এবার একটা বন্যা হয়ে যেতে পারে’, এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তবে সুনামগঞ্জে এখন যে পরিস্থিতি এটি বর্ষা মৌসুমে অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, আবার ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়ছে। তবে এখনো কোনো নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

১৫ দিন ধরে টানা কখনো হালকা, কখনো মাঝারি আবার কখনো টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে। মানুষজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। অনেকেই মনে করেছিলেন এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় হয়তো দিন ভালো থাকবে। কিন্তু মানুষ এখন আশাহত। বরং বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, এই আশঙ্কায় আছেন। গত বছর ঈদুল আজহার সময়েও সুনামগঞ্জে বন্যার ভোগান্তিতে ছিলেন মানুষ।

সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মনে করছিলাম ঈদের আগে আগে দিন ধরব (আবহাওয়া ভালো হবে), এখন দেখি আরও উল্টা অর। বইন্যা অই যার। কষ্ট বাড়ের।’

সুনামগঞ্জে গত তিন দিন ভারী বৃষ্টি না হলেও উজানের ঢল নেমেছে। এতে জেলার প্রধান নদী সুরমাসহ সব নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে।

সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় (যে স্থানে নদীর পানির উচ্চতা মাপা হয়) আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৩২ মিটার। একই স্থানে গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৯৮ মিটারে। এখানে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৩৪ সেন্টিমিটার। বর্ষা মৌসুমে এখানে সুরমা নদীর পানির বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৮০ মিটার।

সুনামগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮৮ মিলিমিটার। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় মাত্র ১৮ মিলিমিটার। উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে তখন বৃষ্টি হয়েছিল সুনামগঞ্জের চেয়ে আরও কম, ১৬ মিলিমিটার।

পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, সুনামগঞ্জে ও উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে একই সময়ে, একই সঙ্গে বৃষ্টি কম হওয়া স্বস্তির। এতে পাহাড়ি ঢলের চাপ কম থাকে। সুনামগঞ্জে নদী ও হাওরে পানি স্থিতিশীল থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবার ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, জগন্নাথপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বেড়েছে। ছাতকে সুরমা নদী ও জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি আছে। তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খসরুল আলম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে হাওরে পানি বেড়েছে। এভাবে বৃষ্টি হলে, ঢল নামা অব্যাহত থাকলে বন্যা হয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রেনু মিয়া বলেন, ‘বুধবার রাইত পানি বেশি বাড়ছে। মেঘ (বৃষ্টি) ত থামছে না। মেঘ না থামলে পানি আরও বাড়ব।’

পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেছেন, মূলত ভারী বৃষ্টি হওয়ার কারণেই আবার পানি বাড়ছে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এভাবে বৃষ্টি হলে পানি আরও বাড়তে পারে।

Lading . . .