Advertisement

ময়মনসিংহ শহরে চাচার বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয় ওমর ফারুককে

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৪ জুন, ২০২৪

ওমর ফারুকছবি : সংগৃহীত
ওমর ফারুকছবি : সংগৃহীত

ময়মনসিংহে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী ওমর ফারুককে (সৌরভ) তাঁর চাচা বাসায় ডেকে নিয়ে হত্যা করেন। এ কাজে সহায়তা করেন তাঁর শ্যালক। পরে তাঁরা চাপাতি দিয়ে ওমর ফারুকের মাথা ও দুই পা বিচ্ছিন্ন করেন। প্রাইভেট কারে করে সেই লাশ নিয়ে নদীতে ফেলে দেন। চাচাতো বোনকে বিয়ে করার কারণে ওমর ফারুককে হত্যা করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

ওই ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন ওমর ফারুকের চাচা ইলিয়াস উদ্দিন, তাঁর শ্যালক আসাদুজ্জামান ও প্রাইভেট কারের চালক আবদুল হান্নান আকন্দ।

গত রোববার সকালে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মনতলা এলাকায় সেতুর নিচে মাথা ও দুই পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ওমর ফারুকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাতে গ্রামের বাড়িতে ওমর ফারুকের মরদেহ দাফন করা হয়।

ওই হত্যাকাণ্ডের পর থানা-পুলিশ, ডিবিসহ অন্যান্য সংস্থা তদন্ত শুরু করে। কোতোয়ালি থানা ও ডিবি পুলিশের যৌথ অভিযানে মঙ্গলবার ভোরে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম থেকে ইলিয়াস উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর আসাদুজ্জামান ও আবদুল হান্নান আকন্দকে গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা থেকে। লাশ গুমের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটিও জব্দ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গ্রেপ্তার তিনজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা। তিনি জানান, গত ১২ মে ওমর ফারুক তাঁর চাচাতো বোনকে ঢাকার একটি বাসায় বিয়ে করেন। মেয়ের বিয়ের বিষয়টি মেনে নেননি ইলিয়াস উদ্দিন। বিয়ের পর ওমর ফারুককে হত্যার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি। পরে ১৬ মে তাঁর মেয়েকে কানাডায় পাঠিয়ে দেন। তাঁর মেয়ের তিন বছর আগেই অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল। আগের বিয়ের কথা জানতে পেরে গত রোববার ময়মনসিংহে আসেন ওমর ফারুক। তিনি চাচাতো বোনের প্রথম স্বামীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন। তাঁর নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া চাচাতো ভাই মুঠোফোনে তাঁকে বাসায় আসতে বলে। নগরের গোহাইলকান্দি এলাকার বাসায় আসার পর ওমর ফারুকের মাথায় ছুরি মেরে হত্যা করেন ইলিয়াস ও আসাদুজ্জামান।

পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা জানান, হত্যার পর লাশটি বাসার শৌচাগারে রেখে দেন ইলিয়াস উদ্দিন। রাত আটটার পর নগরের গাঙ্গীনাপাড় এলাকা থেকে একটি ট্রলি ব্যাগ কিনে বাসায় যান তিনি। ওই ট্রলি ব্যাগে লাশটি গুম করা হয়েছিল। ইলিয়াস উদ্দিনের বাসাতেও তল্লাশি চালিয়ে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, শ্যালকের সহায়তায় ইলিয়াস উদ্দিন চাপাতি দিয়ে প্রথমে ওমর ফারুকের মাথা ও পরে দুই ঊরু বিচ্ছিন্ন করেন। পরিচয় যেন শনাক্ত না হয়, সে কারণে তাঁর হাতের আঙুলের চামড়া বিচ্ছিন্ন করেন। হাতে গ্লাভস পরে মরদেহ টুকরা করা হয়। পরে দেহ ও দুই পা ট্রলি ব্যাগে এবং মাথা শপিং ব্যাগে নিয়ে তাঁরা প্রাইভেট কার ভাড়া করেন। সুতিয়াখালী নদীর মনতলা সেতুর নিচে ফেলে পালিয়ে যান তাঁরা।

ওই ঘটনায় ওমর ফারুকের বাবা ইউসুফ আলী বাদী হয়ে গত রোববার রাতে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়। কোতোয়ালি থানার ওসি মাঈন উদ্দিন জানান, ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আগামীকাল বুধবার তাঁদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।

আজ সংবাদ সম্মেলনের সময় পুলিশ সুপার কার্যালয় চত্বরে ছিলেন ওমর ফারুকের বাবা ইউসুফ আলী, মা পারুল আক্তার, বোন ফারজানা আক্তারসহ অন্য স্বজনেরা।

ফারজানা আক্তার আহাজারি করে বলছিলেন, ‘নৃশংসভাবে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ওদের ফাঁসি চাই।’ যাঁরা হত্যার জড়িত, সবাইকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানান তিনি।

নিহত ওমর ফারুকের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারাটি গ্রামে। তবে তাঁর পরিবার স্থায়ীভাবে ঢাকায় মতিঝিলে বসবাস করে। ওমর ফারুক গুলশানের বেসরকারি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

Lading . . .