Advertisement

সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামে জামালপুরের শাবনূর

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৪ জুন, ২০২৫

জামালপুর শহরের অলিগলি ঘুরে কাগজ, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, পুরোনো লোহা, কাচের বোতল ও বিভিন্ন ভাঙারি কেনেন শাবনূর। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের মুসলিমাবাদ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো
জামালপুর শহরের অলিগলি ঘুরে কাগজ, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, পুরোনো লোহা, কাচের বোতল ও বিভিন্ন ভাঙারি কেনেন শাবনূর। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের মুসলিমাবাদ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

মাত্র ১৫ বছর বয়সে শাবনূরের বিয়ে হয় ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা শহরের রুবেল মিয়ার সঙ্গে। ফেরি করে শিশুদের খেলনাসহ হরেক পণ্য বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন রুবেল। টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে ১০ বছর আগে মারা যান তিনি। রেখে যান এক বছর বয়সী ছেলে। ছেলের পড়ালেখা ও খেয়ে–পরে বাঁচতে ভ্যানগাড়ি নিয়ে পথে নামেন শাবনূর।

ভ্যানে কোনো যাত্রী বহন করেন না শাবনূর (২৭)। সারা দিন তিনি জামালপুর শহর ঘুরে কাগজ, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, পুরোনো লোহা, কাচের বোতল ও বিভিন্ন ভাঙারি কেনেন। পরে সন্ধ্যায় এসব পণ্য ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন। দিন শেষে জোটে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। এই দিয়ে চলছে মা–ছেলের সংসার। ছেলেটির বয়স এখন ১০ পেরিয়েছে। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে সে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শাবনূরের সঙ্গে কথা হয় জামালপুর শহরের মুসলিমাবাদ এলাকায়। জীবনসংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, পারিবারিকভাবেই রুবেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। স্বামী দরিদ্র মানুষ ছিলেন। কোনো জমিজমা ছিল না। তবে সংসারে সুখ ছিল। কারণ, প্রতিদিন ফেরি করে ভালো আয় করতেন স্বামী। এই দিয়ে ভালো চলছিল। স্বামীর মৃত্যুতে শিশুসন্তানকে নিয়ে অথই সাগরে পড়েন তিনি। সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি জামালপুর শহরে চলে আসেন। তখন অনেকেই বিয়ে করতে বলেছিলেন। কিন্তু বিয়ে করলে সন্তানের কী হবে, সেটা ভেবে আর বিয়ে করেননি তিনি।

কিছুদিন আগেও জামালপুর শহরের মুসলিমাবাদ এলাকায় সন্তানকে নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শাবনূর। কিন্তু ভাড়া দিতে না পারায় সম্প্রতি একই এলাকায় বাবার বাড়ির একটি ছাপরায় উঠেছেন। তাঁর বাবাও একজন হতদরিদ্র।
প্লাস্টিকের বোতল ও কাগজ বিক্রি করে যে টাকা পান, তা দিয়ে চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনেন। শাবনূর বলেন, জিনিসের দাম বাড়ায় আর কুলাতে পারছেন না। ভাঙারি বিক্রি করে তেমন আয় হয় না। মাঝেমধ্যে ধারদেনাও করতে হয়।

নিজের নয়, একমাত্র সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তা হয় শাবনূরের। নিজের কোনো জমি নেই। মাথা গোঁজার মতো কোনো স্থায়ী আশ্রয়ও নেই। তবু নতুন আশা বুকে নিয়ে প্রতিদিন সকালে ভ্যান নিয়ে বের হন। সন্ধ্যা পর্যন্ত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরে সন্তানকে সময় দেন।

শাবনূর আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘ছেলের পড়ার খরচ জোগাড় করতেই অবস্থা খারাপ। ঠিকমতো ভাতই তো জুটে না। মাছ–গোশত কিনার টেহা (টাকা) পামু কুথায়? ভ্যানগাড়ি ঠেলে ভাঙারি কিনতে কষ্ট হয়। ছেলের মুখে এক মুঠ ভাত তুলে দিতেই এত কষ্ট করি। এহন আর ভ্যান ঠেলতে পারি না। অন্য কোনো কাম করতে পারলে ভালা হইতো।’

শাবনূর তাঁর সন্তানের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন বলে জানান জামালপুরের মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম। তিনি বলেন, ‘ওই নারীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁকে নিয়ে আমি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছিলাম। তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সন্তানের কথা ভেবে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। শত কষ্ট হলেও তিনি সন্তানকে মানুষ করতে চান।’ তিনি সবাইকে শাবনূরের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান।

Lading . . .