রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন চলছে, ইউজিসির সভা বৃহস্পতিবার
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট, ২০২৫

ছাত্রসংসদের দাবিতে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন করছেন শিক্ষার্থীরা। ৪৮ ঘণ্টার এই আমরণ কর্মসূচিতে ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৫ জনকে। এর মধ্যে ২ শিক্ষার্থী সুস্থ হয়ে আবার আন্দোলনের যোগ দিয়েছেন। এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ শিক্ষার্থী।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের খসড়া গঠনতন্ত্রটি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদনের জন্য পরীক্ষা ও চূড়ান্ত করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গঠিত কমিটির সভা ২১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ইউজিসিতে অনুষ্ঠিত হবে।
আজ মঙ্গলবার ইউজিসির জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব (লিগ্যাল) শেখ আনিসুজ্জামানের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত রোববার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর ফটকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ১০ শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন। তাঁদের অভিযোগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে ছাত্রসংসদের বিষয়টি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ছাত্রসংসদ বাবদ ফি নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধন করে একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছেন।
আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের উত্তর গেটে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন করছেন। এ সময় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রহমানকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। গতকাল রাত দুইটার দিকে হাসপাতালে নেওয়া হয় গণিত বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আরমান হোসেনকে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী নয়ন মিয়া বলেন, ছাত্রসংসদের দাবিতে আমরণ অনশনে এখন পর্যন্ত ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছাত্রসংসদের রোডম্যাপ ঘোষণা না করে কালক্ষেপণ করছে।
এদিকে, আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরুর ৩৬ ঘণ্টা পর উপাচার্যের বিবৃতি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অনশন ভেঙেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিবলি সাদিক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মুশফিকুর রহমান।
এ সময় শিবলি সাদিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত ৩৬ ঘণ্টা থেকে আমরণ অনশন করছিলাম। আমরা চাচ্ছিলাম, ছাত্রসংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিবৃতি দিক। উপাচার্য বিবৃতি দিয়েছেন। ১০ কার্যদিবসের সময় চেয়েছেন তিনি। আমি এটার সঙ্গে একমত। আমার শারীরিক পরিস্থিতিও খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে ওয়াদা দিয়েছে, তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে আমি অনশন ভাঙছি।’
ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি উল্লেখ করে ১০ কার্যদিবসের সময় চেয়েছেন উপাচার্য শওকাত আলী। সোমবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের সহকারী পরিচালক এহতেরামুল হকের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রসংসদের বিষয়টি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে নেই। তবে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্রসংসদ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। ছাত্রসংসদের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থ একটি ব্যাংক হিসাব খুলে জমা রাখা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে সেটা শুধু ছাত্রসংসদের জন্যই খরচ করা যায়।
ছাত্রসংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য উপাচার্য একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কমিটির সদস্যরা চারটি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি, রাবি, চবি ও জাবি) থেকে গঠনতন্ত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও তিনটি আবাসিক হলের জন্য আলাদা করে ছাত্রসংসদের জন্য একটি গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করেছেন। সেটা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ফেরদৌস রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা প্রশাসনিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।