বরিশালে ক্ষতিগ্রস্ত ২২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ, কৃষি-মৎস্য খাতে ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকা
প্রকাশ: ৩০ মে, ২০২৪
ঘূর্ণিঝড় রিমালে বরিশাল বিভাগে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত রোববার ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার পর বিভাগের ছয় জেলার ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছে বিভাগীয় প্রশাসন।
ওই তালিকা অনুযায়ী এই বিভাগের ৫ লাখ ২৮ হাজার পরিবারের প্রায় ২২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাত।
বিভাগীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, ঝড়ে বরিশাল বিভাগে ১৩ জন মারা গেছেন। গাছচাপা ও দেয়াল ধসে তাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন। আর ঝড়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৫৩১টি বসতঘর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৭২ হাজার ১৬৩টি ঘর। এর মধ্যে বরিশাল জেলায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ২২৫টি ঘর, আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৬৭টি ঘর। পটুয়াখালীতে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৬ হাজার ৮২টি ঘর, আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৫ হাজার ১৫৮টি; পিরোজপুরে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৩ হাজার ২০৫টি ঘর, আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১৮ হাজার ১১টি; বরগুনায় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৭৪টি ঘর, আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৪৩টি এবং ঝালকাঠিতে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ১৫০টি ঘর, আংশিক বিধ্বস্ত ১ হাজার ৭৯০টি।
ঝড়ে ১৩ জন মারা যাওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলায় তিনজন করে এবং পিরোজপুরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছে কৃষি ও মৎস্য খাত। কৃষি খাতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০৮ কোটি টাকা। এই ঝড়ে বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৪৮১ কৃষক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারের মধ্যে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষক রয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজারের মতো।
ঝড় ও অতিবৃষ্টির কারণে ১৮ হাজার ২০৯ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে আউশ (বীজতলা ও আবাদ), চিনাবাদাম, মরিচ, মুগ, তিল, শাকসবজি, পাট, পান, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল রয়েছে। আর এতে উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।
এ সম্পর্কে বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শওকত ওসমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা একটি ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরূপণ করেছি। এটা পূর্ণাঙ্গ নয়। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেতে সময় লাগবে।’
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় মৎস্য খাতে ২১৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব দিয়েছে বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তর।
তালিকা অনুযায়ী, বরিশালে মৎস্য খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫৩ কোটি ১ লাখ টাকা, ঝালকাঠিতে ৯৪ কোটি ৬ লাখ, পিরোজপুরে ৬৪ কোটি ৩৬ লাখ, পটুয়াখালীতে ৩৪ কোটি ৫ লাখ, ভোলায় ২১ কোটি ১ লাখ ও বরগুনায় ৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
৯ হাজার ৮ হেক্টর জমির ৯৩ হাজার ৮৮২টি পুকুর, দিঘি ও ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ২২ হেক্টর আয়তনের ১২০টি কাঁকড়া, কুঁচিয়ার খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, বিভাগের পুকুর, ঘের, স্লুইসগেটের মতো অবকাঠামোর ক্ষতির পরিমাণ ৩১ কোটি ৪২ লাখ টাকা; আর মৎস্য খাতে সম্পদের ক্ষতির পরিমাণ ২১৭ কোটি টাকার বেশি।
খামার, পুকুর, দিঘি ও ঘেরের ক্ষতির কারণে বিভাগজুড়ে ১৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ১৫৯ মেট্রিক টন চিংড়ি, প্রায় ৭ কোটি পোনা ও ৬৯ মেট্রিক টন কাঁকড়া ও কুঁচিয়ার ক্ষতি হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে কোনো জেলে নিহত হননি। তবে ৩৫০ কোটি টাকা মূল্যের ১ হাজার ১৯টি নৌযান (নৌকা/ট্রলার/জলযান) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা মূল্যের ৮৯৪টি জাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা প্রাথমিক হিসাব। পূর্ণাঙ্গ হিসাব পেতে আমাদের আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।’