‘রাঙ্গামাটির হ্রদ ও পাহাড়ে হবে কৃষির নতুন দিগন্ত’
প্রকাশ: ৯ জুন, ২০২৫
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার বলেছেন, ‘রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির কৃষিখাতে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। যা সঠিক পরিকল্পনা ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ, পাহাড়ি জমি ও আবহাওয়া- এ তিনটি উপাদানকে কেন্দ্র করে পার্বত্য অঞ্চলে কৃষি ও মৎস্য খাতে গড়ে উঠতে পারে এক নতুন দিগন্ত।’
সম্প্রতি রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ‘বায়োসায়েন্স কনফারেন্স অ্যান্ড কার্নিভ্যাল ২০২৫-এ এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির পাহাড়ি কৃষির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
কাজল তালুকদার বলেন, ‘প্রায় ৭৫০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ বর্তমানে মাছ উৎপাদনের একটি বড় উৎস হলেও এর ব্যবস্থাপনায় এখনো ঘাটতি রয়ে গেছে। আধুনিক পদ্ধতি, প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে হ্রদটির পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগানো গেলে এটি সারা দেশের একটি প্রধান মৎস্য উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।
পাহাড়ি এলাকার হর্টিকালচার ফসল নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন এ কৃষিবিদ। তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়গুলোতে স্বাভাবিকভাবেই উৎপন্ন হয় নানা ধরনের ফলমূল। যেমন- আম, আনারস, কমলা, লিচু ইত্যাদি। তবে এগুলো শুধু নির্দিষ্ট মৌসুমেই পাওয়া যায়। সারাবছর এ ফলমূল উৎপাদনের মতো আবহাওয়া ও মাটি থাকলেও এখনো তা পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হয়নি।‘
বিদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশে সারাবছর আম পাওয়া যায়। অথচ রাঙ্গামাটিতে খুব ভালো আম হয়, কিন্তু তা একটি নির্দিষ্ট মৌসুমেই সীমাবদ্ধ থাকে। একই অবস্থা আনারসের ক্ষেত্রেও।’
এ কৃষিবিদ বলেন, ‘রাঙ্গামাটির মতো পার্বত্য বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির জায়গাতেও সেই সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে ফলমূল সংরক্ষণের বিষয়েও একটি ভুল ধারণা রয়েছে। কেবল কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, বরং ফলগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করে নানা ধরনের পণ্য তৈরি করে তা সংরক্ষণ ও বাজারজাত করতে হবে। যেমন- জ্যাম, জেলি, শুকনো ফল বা জুস জাতীয় ফিনিশড প্রোডাক্ট তৈরি করে বছরব্যাপী তা বাজারে সরবরাহ করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘এ সম্ভাবনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো গবেষণা ও প্রযুক্তির প্রয়োগ। রাঙ্গামাটির কৃষিভিত্তিক সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হলে এখনই বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা ও স্থানীয় উৎপাদকদের প্রশিক্ষণ দেয়া প্রয়োজন। একইসাথে পাহাড়ি কৃষিকে টেকসই ও বছরব্যাপী উৎপাদনমুখী করতে হলে কৃষি বিজ্ঞানীদের এগিয়ে আসতে হবে। তারা গবেষণা করে দেখাবেন, কীভাবে পাহাড়ি অঞ্চলের এ সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানো যায়।‘
তিনি আরো বলেন, ‘রাঙ্গামাটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি জেলা নয়, এটি হতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম কৃষিভিত্তিক উৎপাদন কেন্দ্র। পরিকল্পিত উদ্যোগ ও গবেষণার মাধ্যমে পাহাড়ি জনপদকে একটি সমৃদ্ধ কৃষি অঞ্চলে রূপান্তর করা সম্ভব। যেখানে তৈরি হবে কর্মসংস্থান, বাড়বে আয় এবং দেশের অর্থনীতিতেও যোগ হবে নতুন মাত্রা।’
আরও পড়ুন