Advertisement

কী আছে নীল জলে ঘেরা কাপ্তাই হ্রদের রাঙা বেজক্যাম্পে

প্রথম আলো

প্রকাশ: ৬ জুন, ২০২৪

কাপ্তাই হ্রদের মাঝে গাছে ঘেরা রাঙা ব্যাসক্যাম্প রেস্তোরাঁ। এই রেস্তোরাঁয় পাহাড়ি, বাঙালি ও চায়নিজ খাবার পরিবেশন করা হয়। সম্প্রতি রাঙামাটি সদরের বালুখালী ইউনিয়নের জারুলছড়ি মুখ এলাকায়সুপ্রিয় চাকমা।
কাপ্তাই হ্রদের মাঝে গাছে ঘেরা রাঙা ব্যাসক্যাম্প রেস্তোরাঁ। এই রেস্তোরাঁয় পাহাড়ি, বাঙালি ও চায়নিজ খাবার পরিবেশন করা হয়। সম্প্রতি রাঙামাটি সদরের বালুখালী ইউনিয়নের জারুলছড়ি মুখ এলাকায়সুপ্রিয় চাকমা।

রাঙামাটি শহর থেকে নৌপথে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের পথ। সবুজ পাহাড় সারির মধ্য দিয়ে বয়ে চলা কাপ্তাই হ্রদের নীল জলে পানকৌড়ি আর ডুবুরি পাখির খেলা। তার পাশ ঘেঁষে বিশাল বাঁশের ভেলায় ভেসে চলা কিংবা মাছ ধরার নৌকায় জেলেদের জাল ফেলা—যেতে যেতে এমন সব দৃশ্যে মন ভরে উঠবে। ছোট্ট দ্বীপের দেখা মিলবে লংগদু, বাঘাইছড়ি, বরকল ও জুরাছড়ি উপজেলা যাওয়ার পথে। সুবলং ঝরনাও খুব কাছে এই দ্বীপ থেকে। দ্বীপের চারদিকে ঘন বৃক্ষরাজি। সেখানে আম, লিচু, সফেদাসহ ফলের গাছের সংখ্যাই বেশি। তাই পাখির কিচিরমিচিরে কানে তালা লাগার জোগাড়। দ্বীপের মূল আকর্ষণ রাঙা বেজক্যাম্প নামের একটি রেস্তোরাঁ। এটি ঘিরেই এখানে গড়ে উঠেছে পিকনিক স্পট, রাতযাপনের তাঁবু ও অবসর বিনোদনের নানা ব্যবস্থা।

রাঙামাটি শহরের আটজন যুবক রাঙা বেজক্যাম্পের উদ্যোক্তা। কাপ্তাই হ্রদের ছোট্ট এই দ্বীপে ভিন্ন রকমের রেস্তোরাঁ ও পর্যটন স্পট গড়ে তোলার লক্ষ্য ছিল তাঁদের। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের আগস্ট মাসের দিকে অবকাঠামো গড়ে তোলা শুরু হয় এই দ্বীপে। টানা ছয় মাস রেস্টুরেন্টসহ পর্যটকদের জন্য নানা অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলে। চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় রাঙা বেজক্যাম্প। উদ্বোধনের পর থেকেই প্রতিদিন পর্যটক আসছেন এই দ্বীপে। মৌসুম না থাকলেও (অফ সিজন) প্রতিদিন পর্যটকেরা আসছেন এই রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে।

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের বিভিন্ন দ্বীপে রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁ গড়ে তোলা শুরু হয় দুই দশক আগে। ২০০২ সালে প্রথম ‘পেদা টিং টিং’ নামে কাপ্তাই হ্রদের দ্বীপে একটি রেস্তোরাঁ চালু হয়। তার পর থেকে রাঙামাটি শহর এলাকা, বালুখালী ও বন্দুক ভাঙা ইউনিয়ন এলাকায় কাপ্তাই হ্রদের ২০ থেকে ৩০টি দ্বীপে রেস্তোরাঁ গড়ে ওঠে। রাঙা বেজক্যাম্পও সেই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে। নতুন এই স্পটে রয়েছে সেমিনার, কনফারেন্স, বনভোজন ও কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা।

রাঙা বেজক্যাম্পে পাহাড়ি ও বাঙালি দুই ধরনের খাবারই মিলবে। ব্যাম্বো চিকেন, বদা হেবং (বাঁশে ডিম রান্না), মাছ হেবং, চাপিলা ফ্রাই, হ্রদের তাজা মাছ, মুরগির ভর্তা, শুঁটকিভর্তা, বাঁশকোঁড়ল ও নানা ধরনের সবজির পদ। এ ছাড়া পাওয়া যাবে চায়নিজ ও বাঙালি খাবার। আগে থেকে অর্ডার করলে ক্রেতাদের পছন্দ অনুযায়ী রান্নার ব্যবস্থাও রয়েছে। এখানে খেতে গেলে মাথাপিছু চার থেকে পাঁচ শ টাকা বাজেট রাখতে হবে। তবে বেশি আইটেম অর্ডার করলে সে অনুপাতে বিলও বেশি আসবে।

গত শুক্রবার রাঙা বেজক্যাম্পে দেখা হলো চট্টগ্রাম থেকে আসা মো. জাহেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাঙা বেজক্যাম্পে এসে খুবই ভালো লেগেছে। তপ্ত গরমে প্রকৃতির কাছে এসে শান্তি পেলাম। এখানে আমরা ১১ জন বন্ধু মিলে খাবার খেয়েছি। খাবার খুবই মজা পেয়েছি। সব মিলিয়ে স্বর্গীয় এক প্রশান্তি।’

রাঙা বেজক্যাম্পের উদ্যোক্তা রক্তিম দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আটজন বন্ধু মিলে রাঙা বেজক্যাম্প করেছি। আমাদের উদ্দেশ্য পর্যটনকে ঘিরে ভালো একটা কিছু করা। পাশাপাশি নিজেরাও স্বাবলম্বী হতে চাই এর মধ্য দিয়ে। ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ নেওয়ার পাশাপাশি যাঁরা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতা উপভোগ করতে চান, তাঁদের জন্য রয়েছে রাতযাপনের ব্যবস্থা। এ জন্য আমরা বেশ কিছু তাঁবু রেখেছি। ভবিষ্যতে এখানে কটেজও নির্মাণ করা হবে।’

রাঙামাটির রিজার্ভ বাজার ঘাট থেকে ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করে রাঙা বেজক্যাম্পে যাওয়া যাবে। ৮–১০ জন যাত্রীর একটি নৌকা ভাড়া নেবে এক থেকে দুই হাজার টাকা। সবুলং ঝরনার আগে বালুখালী ইউনিয়নের জারুলছড়ি হাজারিবাগ এলাকায় এই রেস্তোরাঁর অবস্থান। নীল জলে ঘেরা এই দ্বীপের আকর্ষণ বাড়ে বর্ষায়।

Lading . . .