Advertisement

‘এত কিছুর পরিবর্তন হইল, কিন্তু বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া বন্ধ হইল না’

প্রথম আলো

প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫

সকাল থেকে চট্টগ্রামের বাস টার্মিনালগুলোয় ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড়েছবি: জুয়েল শীল
সকাল থেকে চট্টগ্রামের বাস টার্মিনালগুলোয় ঘরমুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড়েছবি: জুয়েল শীল

‘গত কয়েক মাসে দেশের এত কিছুর পরিবর্তন হইল, অথচ ঈদে বাসের বাড়তি ভাড়া নেওয়া বন্ধ হইল না। এসব দেখার কি কেউ নাই?’

চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে যেতে বাড়তি ভাড়ায় টিকিট কেটে এভাবেই নিজের ক্ষোভ ঝাড়লেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাশেম। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরের অলংকার মোড়ে দেখা হলো তাঁর সঙ্গে।

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে হাশেম বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে এ পথে ভাড়া নেওয়া হয় ২০০ টাকা করে। কিন্তু ঈদ এলে ভাড়া বেড়ে যায়। এবার সাড়ে ৩০০ টাকায় টিকিট কেটেছি। গাড়ির সংকট, সড়কে যানজট, চট্টগ্রাম থেকে গেলে খালি ফিরতে হয়—এমন সব অজুহাতে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।’

অলংকার ও এ কে খান ঘুরে হাশেমের মতো আরও অনেক যাত্রীকে পাওয়া গেছে, যাঁরা বাড়তি ভাড়ায় টিকিট কেটেছেন। এই যেমন, কবির উদ্দিন যাবেন নোয়াখালীর চৌমুহনী এলাকায়। শাহী পরিবহনে এ পথে স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া নেওয়া হয় সাড়ে ৩০০ টাকা। কিন্তু কবির উদ্দিন টিকিট কেটেছেন জনপ্রতি ৫৫০ টাকায়। এ বিষয়ে কাউন্টারের কর্মরত ব্যক্তিরা তাঁকে বলেছেন, ‘সাড়ে ৫০০ টাকায় টিকিট নিলে নেন, না নিলে যান। বাস একবার গেলে খালি আসতে হয়। কম হবে না।’

কবির প্রথম আলোকে বলেন, ঈদে প্রচুর মানুষের চাপ থাকে। এ সুযোগে পরিবহনমালিকেরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন। এ কে খান শাহী কাউন্টারে কর্মরত এক ব্যক্তি দাবি করেন, তাঁরা বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন না। তাঁরা আগে কম নিতেন। এখন সমন্বয় করছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে আজও চট্টগ্রাম শহর ছাড়ছেন লোকজন। এতে চট্টগ্রামের বাস কাউন্টারগুলোয় যাত্রীর চাপ বেড়েছে। কেউ আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, আবার কেউ আসছেন একা। কেউ কেউ আদরের পোষা প্রাণীও সঙ্গে নিচ্ছেন। তবে যাত্রীর তুলনায় বাসের সংখ্যা ছিল কম। গাড়ির অপেক্ষায় ঘরমুখী মানুষদের কাউন্টার ও সড়কের পাশে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

দক্ষিণে বাড়তি ভাড়া

চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু গোলচত্বর ও বহদ্দারহাটের এক কিলোমিটার এলাকা থেকে কক্সবাজার, বান্দরবান জেলা এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের বাস ছেড়ে যায়। এ ছাড়া শাহ আমানত সেতু গোল চত্বর থেকেও নগরের পাশের উপজেলা আনোয়ারা, বাঁশখালী, কর্ণফুলীর উদ্দেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছাড়ে। এসব এলাকায় ‘নাম-গোত্রহীন’ বাসই বেশি চলাচল করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি চলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। বাস ও অটোরিকশা—সবখানে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

শাহ আমানত সেতু এলাকায় যাত্রী সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাড়ি বাঁশখালী। স্বাভাবিক সময়ে ১০০ থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় তিনি বাড়িতে যান। ঈদে সেটি বেড়ে ১৫০ টাকা হয়। এবার নেওয়া হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। স্পেশাল সার্ভিস নাম দিয়ে এই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

বিআরটিএর হিসাবে, চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাঁশখালী পর্যন্ত মোট ৪৪ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২ টাকা ১২ পয়সা। সে হিসাবে এ পথের ভাড়া আসে ৯৩ টাকা ২৮ পয়সা।

স্ত্রী-সন্তানদের গাড়িতে তুলে দেওয়ার জন্য বেলা ১১টার দিকে শাহ আমানত সেতু এলাকায় আসেন রফিকুল ইসলাম। তাঁদের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বৈলতলি এলাকায়। বিআরটিএর হিসাবে, এ পথে ভাড়া ৮৩ টাকা। কিন্তু রফিকুলের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে জনপ্রতি ১০০ টাকা। তাই বাড়তি ভাড়ায় তিনি টিকিট কেটেছেন।

বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পেয়ে অভিযান চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার নগরের শাহ আমানত সেতু, অলংকার, এ কে খানসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। বাড়তি ভাড়া নেওয়ায় বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাউন্টারে ২৫টি মামলায় ৩৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি ২২ জন যাত্রীর কাছ থেকে নেওয়া ১৫ হাজার টাকা বাড়তি ভাড়া ফেরত দেওয়া হয়েছে। আজও অভিযান চলছে। বাড়তি ভাড়া নিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Lading . . .