Advertisement

উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে আগুন, গৃহহীন ১ হাজার ২০০ রোহিঙ্গার মানবেতর জীবন

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২ জুন, ২০২৪

কক্সবাজারের উখিয়ার তানজিমার খোলা আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের পর উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকেরা। গতকাল বিকেলেছবি-প্রথম আলো
কক্সবাজারের উখিয়ার তানজিমার খোলা আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের পর উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকেরা। গতকাল বিকেলেছবি-প্রথম আলো

কক্সবাজারে উখিয়ার তানজিমারখোলা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৩) ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১৭৫টি রোহিঙ্গা বসতিসহ অন্তত ২৩০টি অবকাঠামো পুড়ে গেছে। তাতে অন্তত ১ হাজার ২০০ রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কয়েকশ নারী ও শিশু খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

গতকাল শনিবার বেলা একটার দিকে আশ্রয়শিবিরের ডি-১ ব্লকের কাঁঠালতলী বাজারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তে তা পাশের ডি-২ ব্লকে ছড়িয়ে পড়ে। বেলা আড়াইটার দিকে ফায়ার সার্ভিস, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন), বিজিবি সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ের তথ্যমতে, আগুনে আশ্রয়শিবিরের ডি-১ ও ডি-২ ব্লকের ১৭৫টি রোহিঙ্গার ঘর, ৫০টি শেল্টার হাউস, ১টি লার্নিং সেন্টার, ১টি মক্তব, ৩০টি ল্যাট্রিন, ৪০টি দোকানসহ মোট ২৩০টি অবকাঠামো পুড়ে গেছে। তাতে ১ হাজার ২০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এর মধ্যে আশ্রয়শিবিরের অভ্যন্তরে বসবাসকারী বাংলাদেশি পাঁচটি পরিবারের ঘরও পুড়ে গেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত গৃহহীন পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়নি। রান্নাবান্না বন্ধ থাকায় খাবার নিয়ে সমস্যা হচ্ছে।

আগুনের সূত্রপাত নিশ্চিত করতে পারেননি আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএন অধিনায়ক ও পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মো. আমির জাফর। তিনি বলেন, শনিবার দুপুরে আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৩) কাঁঠালতলী বাজারে হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। মুহূর্তেই আগুন আশপাশের রোহিঙ্গা বসতিতে ছড়িয়ে পড়ে। বাজারের একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হলেও এটি নাশকতা কি না, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতার দাবি, দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হলেও এটি ছিল পরিকল্পিত। মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় আগেও নাশকতার আগুনে একাধিকবার রোহিঙ্গা শিবির পুড়েছে। গত ২৪ মে একই আশ্রয়শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩ শতাধিক রোহিঙ্গা বসতি পুড়ে ছাই হয়। রোহিঙ্গা নেতাদের মতে, সেটিও ছিল নাশকতার আগুন। আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার এবং মাদক চোরাচালানকে ঘিরে মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে বারবার। তাতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। আশ্রয়শিবিরের পরিবেশ-অস্থিতিশীল করতে সশস্ত্র গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা বসতিতে আগুন দিচ্ছে।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধের জের ধরে অতীতেও আশ্রয়শিবিরে অনেকবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবারের অগ্নিকাণ্ড নাশকতা হতে পারে। আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ও গৃহহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের অনেকে আশ্রয়শিবিরে আত্মীয়স্বজনের ঘরে উঠেছে।

শনিবারের আগুনে বসতবাড়ি হারান স্থানীয় বাংলাদেশি ছারা খাতুন (৪৫)। এরপর দুই সন্তান নিয়ে তিনি রাত কাটান খোলা আকাশের নিচে। ছারা খাতুন বলেন, শনিবার দুপুরে আশ্রয়শিবিরের ডি-১ ব্লকে যখন আগুন জ্বলে ওঠে, কখন তিনি ঘরের ভেতরে ছিলেন। মুহূর্তে আগুন তাঁর বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুনে পুড়ে সবকিছু শেষ হয়ে যায়। এ সময় তিনি সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে গিয়ে প্রাণে বাঁচেন।

আগুনে পুড়ে ছাই হয় স্থানীয় সাইফুল ইসলাম, জুলেখা বেগম, মোহছেনা বেগম ও আলেয়া বেগমের আরও চারটি ঘর। আশ্রয়শিবিরের ডি-১ ও ডি-২ ব্লকের মধ্যবর্তী এলাকায় বাংলাদেশি কয়েকটি পরিবারের বসবাস।

এসব পরিবারের সদস্যরা জানান, রোহিঙ্গাদের ঘর পুড়ে গেলে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা নতুন ঘর তৈরি করে দেয়, কিন্তু আশ্রয়শিবিরের ভেতরে থাকা বাংলাদেশিদের ঘর পুড়ে গেলে সাহায্য পাওয়া যায় না। মিয়ানমারের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘাত-সংঘর্ষ এবং গোলাগুলির ঘটনায় বাংলাদেশিদের সব সময় আতঙ্কে থাকেন।

আরআরআরসি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশি পাঁচ পরিবারকে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেওয়া হবে।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি।

Lading . . .