১৭ বিয়ের অভিযোগ ওঠা বরিশালের আলোচিত বন কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত
প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

প্রতারণা করে ১৭ নারীকে বিয়ের অভিযোগ ওঠা বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কবির হোসেন পাটোয়ারীকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ স্বাক্ষরিত আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
আজ বুধবার দুপুরে বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এ–সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছেন। বরিশাল বিভাগীয় বন কর্মকর্তার (ডিএফও) ভারপ্রাপ্ত হিসেবে পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (উপ-বন সংরক্ষক) মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান মিঞাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আলোচিত ডিএফও কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে ১৭ নারীকে বিয়ে ও প্রতারণার অভিযোগে আদালতে একটি মামলার আবেদন করা হয়েছে। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
বন বিভাগ সূত্র জানায়, কবির হোসেন পাটোয়ারী ডিএফও হিসেবে ২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর বরিশালে যোগদান করেন। তার আগে তিনি খুলনায় কর্মরত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার নগরের কাশীপুর এলাকায় বিভাগীয় বন সংরক্ষকের কার্যালয়ের সামনে ওই কর্মকর্তার বিচার দাবি করে ও তাঁদের স্বজনেরা। ওই নারীরা নিজেদের ওই কর্মকর্তার স্ত্রী দাবি করে অভিযোগ করেন, ওই কর্মকর্তা প্রলোভন দেখিয়ে তাঁদের বিয়ে করেছেন। এরপর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে এবং দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়।
কর্মসূচিতে ঢাকার নাজনীন আক্তার, নারায়ণগঞ্জের সোনিয়া আক্তার, খুলনার নাসরিন আক্তারসহ প্রতারণার শিকার বেশ কয়েকজন নারী উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, কবির হোসেন আগে ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন। বিদেশে পড়াশোনা, সরকারি চাকরি, বিমানবালা হিসেবে সুযোগ বা সম্পত্তি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তিনি অন্তত ১৭ নারীকে বিয়ে করেছেন। আগের বিয়ের বিষয়গুলো গোপন রেখেই তিনি ওই নারীদের বিয়ে করেন। বিয়ের অল্প সময়ের মধ্যে যৌতুক দাবি ও শারীরিক নির্যাতনের কারণে তাঁদের কয়েকজনের সংসার ভেঙে যায়।
সূত্র জানায়, সর্বশেষ চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি খাদিজা আক্তারকে বিয়ে করেন কবির হোসেন। বিয়ের দ্বিতীয় দিনই খাদিজার বাবার বাড়ির জমির অংশ লিখে দিতে বললে রাজি না হওয়ায় তাঁকে বরিশালে বন কর্মকর্তার সরকারি বাসভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়।
খাদিজা আক্তার অভিযোগ করেন, ‘আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে কবির হোসেন বিয়ে করেছেন। পরে বাবার বাড়িতে পাওয়া সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় তিনি আমাকে নির্যাতন করে বের করে দেন।’
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কবির হোসেন পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে ১৭ নারীকে বিয়ে ও প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলার আবেদন করেন আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফিজ আহম্মেদ।
আদালতের বিচারক সাদিক আহম্মেদ আবেদনটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের বেঞ্চ সহকারী রাজিব মজুমদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আগামী ২০ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
মামলার বাদী হাফিজ আহম্মেদ বলেন, বিদেশে পড়াশোনা, সরকারি চাকরি, সম্পত্তি প্রদান কিংবা বিমানবালা হিসেবে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিতেন বন কর্মকর্তা কবির হোসেন। চাঁদপুরের মতলবের বাসিন্দা এই কর্মকর্তা ঢাকা, খুলনা, সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত অবস্থায় একে একে ১৭টি বিয়ে করেছেন। প্রতিটি বিয়েতে তিনি মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশের ৬ ধারার বিধান লঙ্ঘন করেছেন। প্রথম বিয়ে গোপন রেখে ধারাবাহিকভাবে একাধিক বিয়ে করে তিনি শুধু আইনই ভঙ্গ করেননি, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতির প্রতি চরম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন।