প্রকাশ: ১১ আগস্ট, ২০২৫

আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে সংঘাতের আশঙ্কা আছে। সংঘাতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও নতুন প্রশ্ন উঠতে পারে। এ সুযোগে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সুযোগ নিয়ে দেশে অস্থিতিশিল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। যার প্রভাব পড়তে পারে জাতীয় নির্বাচনেও। সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
এ পরিস্থিতিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আগে সব প্যানেলের কাছ থেকে সংঘাত পরিহার এবং প্রয়োজনে নির্বাচন বাতিলের বিষয়ে লিখিত অঙ্গীকার নেওয়া জরুরি বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুৎসা রটানোসহ সংঘাতের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিলের সুপারিশও করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। ব্যালট বাক্স ছিনতাই রোধে ৩ স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার কথাও এতে বলা হয়েছে।
এদিকে গোয়েন্দা সংস্থার এমন প্রতিবেদনের পর রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে প্রশাসনিক ভবনে জরুরি বৈঠকে বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. নিয়াজ আহমেদ খান। গত সপ্তাহে এই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তরেও এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক হয়।
জানতে চাইলে পুলিশের আইজি বাহারুল আলম বলেন, সব ধরনের নির্বাচনেই সংঘাতের শঙ্কা থাকে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও সংঘাতের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিষয়টিকে মাথায় নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু পরিকল্পনা আছে। পাশাপাশি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নির্বাচন কমিশন থেকে চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ সহযোগিতা করবে। আশা করছি ছাত্র সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও ১৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে সরব রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের ইন্ধন দিচ্ছে বাম ঘরানার ছাত্র সংগঠনগুলো। সমর্থন আছে আরও কিছু রাজনৈতিক সংগঠনের। এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের হল কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে হলের রাজনীতির বাইরে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির পক্ষে মত দিয়েছে ছাত্রশিবির। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভক্তি দৃশ্যমান। এ কারণে ঢাকসু ও রাকসু নির্বাচনে সরাসরি ছাত্র সংগঠনের ব্যনারে না হলেও মতাদর্শের ভিত্তিতে প্যানেল দিতে পারে ছাত্র সংগঠনগুলো। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কর্মী ও সমর্থকের সংখ্যা বেশি। এছাড়া রাজধানীতে অবস্থিত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের ব্যাপক কর্মী ও সমর্থক রয়েছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাবির ছাত্রদলের শোডাউনে যুক্ত হতে পারেন ওই সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সমর্থকরাও। এতে উত্তেজনা আরো বাড়তে পারে। ছাত্রদলের সঙ্গে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী ও সমর্থকরাও যুক্ত হতে পারেন। অপরদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের কর্মী ও সমর্থকের সংখ্যা বেশি। সেখানে এলাকাভিত্তিক সমর্থকও রয়েছে। রাজশাহী সরকারি কলেজেও শিবিরের শক্ত অবস্থান আছে। নির্বাচনের আগে ওই কলেজের কর্মী-সমর্থকরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সঙ্গে মিলে মহড়ায় অংশ নিতে পারে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলেরও শক্ত অবস্থান রয়েছে। সেখানে শিবির প্রশ্নে বরাবরই ছাত্রদল ও ছাত্রলীগকে (বর্তমানে নিষিদ্ধ) এক কাতারে মিশে যাওয়ার নজির রয়েছে। রাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই ছাত্র সংগঠন মিলে শিবির প্রতিহত করার মিশনে নামারও সম্ভাবনা আছে। এতে সেখানে বড় ধরনের সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে বিপদে পড়তে পারে সরকার।
এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সজাগ থাকার পাশাপাশি পুলিশের সাইবার ইউনিটকে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বাইরের জনশক্তি নিয়ে শোডাউন নিষিদ্ধ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমে কারও বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিল ও প্রয়োজনে পুরো নির্বাচন বাতিলের এখতিয়ার রাখতে পারে নির্বাচন কমিশন। বিষয়গুলো মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ই প্রার্থীর কাছ থেকে অঙ্গীকার হিসাবে স্বাক্ষর নেওয়া যেতে পারে।
জানা গেছে, ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের বেশির ভাগ জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণ-অভ্যুত্থানে সৃষ্ট সব ছাত্র সংগঠনের ঐক্যও বিনষ্ট হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে করে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্ন হওয়াসহ জাতীয় রাজনীতিতেও এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
আরও পড়ুন