Advertisement
  • হোম
  • শিক্ষা
  • প্রচারণায় মুখর জাবি, প্রার্থিতা বাতিল এক ভিপি প্রা...

প্রচারণায় মুখর জাবি, প্রার্থিতা বাতিল এক ভিপি প্রার্থীর

যুগান্তর

প্রকাশ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। ৩৩ বছর পর এ নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে চলছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রচারণার শেষ মুহূর্তে এসে প্রার্থীরা দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। পোস্টার, লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে রুম-টু-রুম প্রচারণা- সবখানেই সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৯ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত প্রার্থীরা নির্বাচনি প্রচার চালাতে পারবেন। ভোটগ্রহণ শুরু হবে ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ শেষে গণনা শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায়।

শেষ সময়ের প্রচারণায় ভোটারদের আকৃষ্ট করতে প্রার্থীরা নিয়েছেন নানান অভিনব কৌশল। কেউ নিজেদের ব্যালটের আদলে লিফলেট ও স্টিকার বিতরণ করছে। ভিপি ও জিএস পদপ্রার্থীদের পাশাপাশি হল সংসদের প্রার্থীরাও শিক্ষার্থীদের কাছে নিজেদের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এছাড়া চলছে অনলাইন এবং অফলাইনে বিভিন্ন কৌশলে প্রচারণা। এসব প্রচারণা নজর কাড়ছে ভোটারদের।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রার্থীরা কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে কিংবদন্তি ফুটবলারের ছবি-জার্সি নম্বর পোস্ট করে নিজের ব্যালটের কথা জানাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সিনেমার ট্রেলরের মতো ভিডিও পোস্ট করছে। আবার কেউ মিমস আকারে ব্যালট নম্বর তুলে ধরছেন।

কেউ কেউ আবার তৈরি করেছেন অন্যরকম পোস্টার। একজন প্রার্থীর ব্যালট নম্বর ১০, তিনি ১০ দশ টাকার নোটের মতো তৈরি করেছেন পোস্টার, হাতে নিলে মনে হবে ১০ টাকার নোট।

আবার অন্য একজন ৫ টাকার নোট তৈরি করেছেন পোস্টার হিসেবে। যাদের ব্যালট নম্বর ২ তারা আবার তৈরি করেছেন ২ টাকার নোট। আবার কয়েকজন প্রার্থী তৈরি করেছেন বুকলেট। ছোট বুকলেটে শুধু প্রার্থীর নাম আর পরিচয় রয়েছে।

এছাড়া গানে গানেও চলছে জাকসু প্রচারণা। ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদের প্রার্থী জাহিদ হাসান খান নিজের ফেসবুক আইডিতে ভিডিও পোস্ট করেছেন। যাতে দেখা গেছে, একটা ভিডিও গান।

যেখানে কিছু লোক ‘জাহিদ ভাই জাহিদ ভাই; আপনার কোনো চিন্তা নাই, জাহাঙ্গীরনগরের জনগণ শুধু আপনাকেই চায়’ গান পরিবেশনা করছেন। জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার (টিএসসি) ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থিত ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় একটি দোকানে ‘আইলো আইলো আইলো রে; রঙ্গেভরা জাকসু আবার আইলো রে’-গান গেয়ে প্রার্থীরা নিজেকে তুলে ধরছেন।

এদিকে জাকসু নির্বাচনে লড়ছে আটটি প্যানেল। এর মধ্যে চারটি পূর্ণাঙ্গ ও চারটি আংশিক প্যানেল ঘোষণা করেছে। অধিকাংশ প্যানেল ফেসবুক পেজ খুলে প্রচার চালাচ্ছে। সেখানে তারা নানা উপায়ে ভোটারকে টানার চেষ্টা করছে। প্যানেলের বাহিরেও ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ দিয়েও ভোটারকে টানার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রচারণার বৈচিত্র্য ও উৎসব মুখর পরিবেশ আমরা উচ্ছ্বসিত। তবে লিফলেট ছড়িয়ে ক্যাম্পাস নোংরা হয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে অনেকের বিরক্তিও আছে।

প্রার্থীরা রুম-টু-রুম প্রচারণায় সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করছেন। আবাসিক হলের ভোটারদের কাছে গিয়ে কেউ বলছেন-ডাইনিংয়ের মানোন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, কেউ আবার লাইব্রেরি, জিমনেশিয়াম, খেলার সরঞ্জাম, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের উন্নয়ন ইত্যাদি নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

জানা গেছে, ভিপি-জিএস থেকে সম্পাদক, হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রত্যেকেই শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা শুনে সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন। অনেকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডায় বসে পড়াশোনা ও আবাসিক জীবনের অভিজ্ঞতা জানছেন। অনেকেই মনে করছেন, ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বিভিন্ন প্যানেল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা শেষ মুহূর্তেও ভোটারদের মন জয়ের জন্য সমান তৎপর রয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, সুষ্ঠু ও অবাধ ভোটগ্রহণ নিশ্চিতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। ক্যাম্পাসের প্রবেশ পথে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচনের আগের রাত থেকে বহিরাগত প্রবেশে কড়াকড়ি থাকবে। বৈধ পরিচয়পত্রধারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই কেবল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবেন।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব একেএম রাশিদুল আলম বলেন, ‘আমরা চাই নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। নিরাপত্তা ও কারচুপি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রথমবার ভোট দিতে যাওয়া অনেক শিক্ষার্থী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফ বলেন, ‘৩৩ বছর পর জাকসু হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা চাই সত্যিকারের প্রতিনিধি উঠে আসুক।’

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অলিউল্লাহ হাসান বলেন, ‘আমরা চাই এ নির্বাচন শুধু জাকসুর নয়, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিরও পুনর্জাগরণ ঘটাক।

জাকসুতে প্রার্থিতা বাতিল ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের

নিয়মিত শিক্ষার্থী না হওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। গত শনিবার বিকালে প্রার্থিতা বাতিল করে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। চিঠিতে জাকসু গঠনতন্ত্রের ধারা ৪ ও ৮ অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে বলে জানানো হয়।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, তার নিয়মিত ছাত্রত্ব নাই এ বিষয়টি আমরা জানতাম না। গত ৪ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট মিটিং এর পর আমরা বিষয়টি জানতে পারি। জাকসু গঠনতন্ত্র ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

তবে নির্বাচন কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের একটি সূত্র জানায়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জন ২০২১ সালের ৪র্থ পর্ব স্নাতক সম্মান নিয়মিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে দুটি কোর্সে অকৃতকার্য হয়।

পরীক্ষা গত ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে আগস্ট মাসে শেষ হয়। পরে পরবর্তী ব্যাচের সঙ্গে (২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ) মানউন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উভয় কোর্সের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন।

এ পরীক্ষা গত বছরের মে মাসে শুরু হয়ে জুন মাসে শেষ হয়েছে। এরপর ৬ষ্ঠ শিক্ষাবর্ষের আওতায় ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে ওই দুটি কোর্সে পুনরায় মানউন্নয়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। তবে আবারও অকৃতকার্য হন তিনি।

গত ১১ আগস্ট স্নাতকোত্তরে ভর্তি হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর আবেদন করলে তার ছাত্রত্বের অবস্থা জানার জন্য শিক্ষা শাখায় মতামত জানতে পাঠানো হয়। শিক্ষা শাখা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের বরাতে জানায়, অমর্ত্য রায় একবার ‘অতিরিক্ত’ মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিয়েছেন। কারণ সংশোধিত পরীক্ষা অধ্যাদেশ-২০১৯ এর আগের অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী স্নাতকে ৪ বছরের সঙ্গে অতিরিক্ত ১ বার মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। অর্থাৎ, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পূর্বের শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ১ বার মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের ‘অসাবধানতায়’ ইতোমধ্যে দুইবার মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন অমর্ত্য। পরে বিষয়টি নিয়ে মতামতের জন্য উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) কাছে পাঠান। স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে হওয়ায় তা একাডেমিক কাউন্সিলে পাঠানোর মত দেন তিনি।

একাডেমিক কাউন্সিল দ্বিতীয় মানোন্নয়ন পরীক্ষাকে বিশেষ পরীক্ষা হিসেবে গণ্য করার সিদ্ধান্ত হয়। পাাশপাশি তাকে এ কোর্সে বিশেষ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ এবং পরীক্ষায় পাশ সাপেক্ষে স্নাতকোত্তরে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তবে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা বিশেষ পরীক্ষা হিসেবেই গণ্য হবে।

২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একটি ভবনের দেওয়ালে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি আঁকাকে কেন্দ্র করে ১ বছর মেয়াদী বহিষ্কার করে তৎকালীন প্রশাসন। পরবর্তীতে বিষয়টি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করলে হাইকোর্ট রুল নিশি ইস্যু করে এবং পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার অনুমতি দিতে বিশ্ববিদ্যালকে নির্দেশ দেয়। পরে তাকে পরীক্ষায় বসতে দেয় কর্তৃপক্ষ। সে বছরের ৩০ ডিসেম্বর পূর্বের বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে বর্তমান প্রশাসন। এদিকে গত ৩ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের কাছে বহিষ্কারাধীন ১০ মাসের ছাত্রত্ব ফেরত চান। ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত নাকচ করে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে।

এদিকে জাকসু গঠনতন্ত্রের ৪ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে- ভোটার হিসেবে কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ ও নিয়মিত শিক্ষার্থীরাই থাকতে পারবেন। ৮ ধারায় প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে বৈধ ভোটার হওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের

এদিকেজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একই সঙ্গে অনতিবিলম্বে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান তারা।

রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছে, যা বিদ্যমান প্রশাসনিক ষড়যন্ত্রেরই অংশ।

বিবৃতিতে তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষেত্রে জাকসু গঠনতন্ত্রের বিধিমালা ৪ ও ৮ ধারা উল্লেখ করেছে। খেয়াল করার বিষয়, এখানে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালার কোনো ধারাকে কমিশন সামনে রাখেনি, রেখেছে খোদ জাকসুর গঠনতন্ত্রকে। ধারা ৮-এ (নির্বাচন বিধি) ৯টি উপধারা থাকলেও, ঠিক কোন উপধারায় অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে নির্বাচন কমিশন তা পরিষ্কার করেনি।

জাকসু নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, গত ১৭ আগস্ট ছিল চূড়ান্ত হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশের দিন। ২৬ আগস্ট মনোনয়নের বৈধতার বিষয় আপিল আবেদন গ্রহণের দিন এবং ২৭ আগস্ট আপিলের শুনানির দিন। এরপর ২৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিন। ১৭ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি প্রক্রিয়াতেই অমর্ত্য রায় ভোটার ও প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনের মাত্র ৪ দিন আগে নেওয়া এ সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না, বরং এই পদক্ষেপের সততা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটায়।

প্রার্থিতা বাতিলের আইনগত ভিত্তি নেই উল্লেখ করে তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন স্পষ্টতই তাদের সিদ্ধান্তের ওপর নিজেরাই আস্থা রাখতে পারেনি। কিন্তু, এই সিদ্ধান্ত বদলবার এখতিয়ার তাদের আর নেই। কারণ তারা চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। গঠনতন্ত্রের ৮(চ) ধারা অনুযায়ীই, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার শুধু তাদের ঊর্ধ্বতন ফোরামের, জাকসুর সভাপতি অর্থ্যাৎ, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের। কিন্তু, সভাপতিকে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ না দিয়ে নিজেরাই নিজেদের সিদ্ধান্ত বাতিল করেছেন বলে তাদের এই সিদ্ধান্তের কোনো আইনগত ভিত্তি ও যৌক্তিকতা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতির প্রশ্ন তুলে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে যে, অমর্ত্য রায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন। কিন্তু, এটা মোটেও বোধগম্য নয় যে, তারা এতগুলো প্রক্রিয়া অতিক্রম করার পর এরকম একজন গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রার্থীর ব্যাপারে কেন হঠাৎ আবিষ্কার করলেন যে, তিনি নিয়মিত শিক্ষার্থী নন? এটা কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি নয়? তাদের গাফিলতির দায় কেন একজন শিক্ষার্থীকে বহন করতে হবে?

বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনা উল্লেখ করে তারা বলেন, ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মুছে তখন চলমান ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের গ্রাফিতি আঁকার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এমনকি গায়ের জোরে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলাও করা হয়। পুরো প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করা হলে, ২০২৪ সালের ২১ মার্চ হাইকোর্ট তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেন।

২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। অর্থাৎ, প্রায় ১০ মাস তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষা কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেননি। অন্যদিকে, অমর্ত্য রায়ের তখনও দুটি পরীক্ষা বাকি ছিল, যার মধ্যে একটি ছিল ব্যবহারিক।

যেহেতু ব্যবহারিক ক্লাশ না করে ব্যবহারিক পরীক্ষায় বসার অনুমতি দিতে বিভাগের প্রাথমিক আপত্তি ছিল, ফলে অর্মত্য রায় সে পরীক্ষায় বসতে পারেননি। কিন্তু, হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তাতে অমর্ত্য রায়কে শুধু চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসারই উল্লেখ ছিল, কিন্তু ক্লাশ করার অনুমতির উল্লেখ ছিল না। ফলে হাইকোর্টের নির্দেশনা ও বিভাগের একাডেমিক শৃঙ্খলার মধ্যে স্পষ্টতই একটি বিপরীতমুখী গোলমেলে অবস্থা তৈরি হয় এবং এতে করে লম্বা সময় অতিবাহিত হয়ে যায়।

নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক বলে ব্যাখ্যা দিয়ে তারা বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বরের শিক্ষা পর্ষদের বিশেষ সভার সুপারিশে গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট এই সিদ্ধান্ত ধার্য করে যে, অর্মত্য রায়ের যে পরীক্ষাটি বাকি ছিল সে পরীক্ষায় ‘বিশেষ পরীক্ষা’ হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে এবং বলা হয় যে, ‘২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের শর্তে তাকে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির অনুমতিদানের সুপারিশ করা হলো।

এ বক্তব্যের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা হলো, অমর্ত্য রায় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী, সেটি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বতঃসিদ্ধ হয়ে গেছে।

তারা আরও বলেন, ৬ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচনের সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন বলছে, তিনি শিক্ষার্থী নন! যা পরিষ্কার সিন্ডিকেটের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে প্রশাসনের বক্তব্য

সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে প্রশাসনের বক্তব্য উল্লেখ করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে অমর্ত্য রায় জন-এর নাম গত ৬ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা হতে প্রত্যাহারের বিষয়টি ঘোষিত হওয়াকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দৃষ্টি গোচর হয়েছে।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষে ১ম পর্ব স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ৪৭-তম ব্যাচে ভর্তিকৃত প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জন চলতি বছরের ১৮ আগস্ট স্নাতকোত্তর পর্বে ভর্তির জন্য আবেদন করলে তা বিবেচনার জন্য গত ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষা পর্ষদের সভায় উপস্থাপিত হয়।

সভায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কার্যলয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় যে, অমর্ত্য রায় জন ২০২১ সালে ৪র্থ পর্ব স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ৪০৭ ও ৪০৮নং কোর্সে ‘এফ’ গ্রেড পান, অর্থাৎ অকৃতকার্য হন। এ পরীক্ষা ২০২৩ সালের ৬ জুলাই শুরু হয়ে ১৭ আগস্ট শেষ হয়েছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তিনি উল্লিখিত দুটি কোর্সে অকৃতকার্য হয়ে ১ম বার ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ৪র্থ পর্ব স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা অর্থাৎ ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।

যথাযথ কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করলে তিনি সেই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই দু’টি কোর্সে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেন। কিন্তু তিনি আবারো উভয় কোর্সেই ‘এফ’ গ্রেড পান অর্থাৎ অকৃতকার্য হন। ওই ৪র্থ পর্ব স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা ২০২৪ সালের ২৯ মে থেকে শুরু হয়ে ৯ জুন শেষ হয়।

ওই দুটি কোর্সে অকৃতকার্য হয়ে তিনি ২য় বার ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ৪র্থ পর্ব স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষা অর্থাৎ ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন করেন এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন দেয়।

তিনি ৩য় বার (অর্থাৎ ২য় বার মানোন্নয়ন) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৪০৭নং কোর্সে কৃতকার্য ও ৪০৮নং কোর্সে ‘এফ’ গ্রেড পান, অর্থাৎ অকৃতকার্য হন। ওই পরীক্ষা ২০২৫ সালের ১২ মে এবং ১৮ মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন, পরীক্ষা অধ্যাদেশ ২০০৩ এর ধারা ১০, ১২ ও ১৩ অনুযায়ী ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের পূর্বে ভর্তিকৃত একজন শিক্ষার্থী শুধু ২টি কোর্সে ‘এফ’ গ্রেড পেলে অর্থাৎ অকৃতকার্য হলে ওই ২টি কোর্সে একবারই মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষা পর্ষদের সভায় অমর্ত্য রায় জনের ২য় বার মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টি পরীক্ষা অধ্যাদেশ ২০০৩ অনুযায়ী বিধিবহির্ভূত বলে পরিগণিত হয়। তবে শিক্ষা পর্ষদ তার শিক্ষাজীবনের বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়ে ২য় বার দেওয়া পরীক্ষা বিশেষ পরীক্ষা হিসেবে গ্রহণ করবার জন্য সুপারিশ করে।

এছাড়া ৪০৮নং কোর্সে বিশেষ পরীক্ষা দেওয়ার আবেদনটি ২য় বার বিশেষ পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন হিসেবে বিবেচনায় নেওয়ার জন্য সুপারিশ করে। সুপারিশসমূহ গত ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপিত হলে অনুমোদিত হয়।

আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি অমর্ত্য রায় জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এ বহিষ্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট মামলা নং ৩২৯৯/২০২৪ করার প্রেক্ষিতে আদালত ২১-৩-২০২৪ তারিখ আবেদনকারীর পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশনা দেন, যার প্রেক্ষিতে অমর্ত্য রায় জন-এর ৪০৭ ও ৪০৮ নং কোর্সের প্রথম মানোন্নয়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে করা আশুলিয়া থানার মামলা নং ১৭/২৪-এ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে অব্যাহতি দিলে ওই রায়সহ তিনি তার বিরুদ্ধে দেওয়া বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদন দ্রুততার সঙ্গে এজেন্ডাভুক্ত করে ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভায় মানবিক বিবেচনায় নিয়ে এ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

শেষে বলা হয়, পরীক্ষা অধ্যাদেশ ২০০৩ এর ধারা ১০, ১২ ও ১৩ অনুযায়ী এবং বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রেক্ষিতে অমর্ত্য রায় জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ও অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় জাকসুর গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী জাকসু নির্বাচন কমিশন তাকে জাকসু নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য বলে ঘোষণা করে ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছে।

জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিটের খবর সত্য নয়

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে বলে সকাল থেকে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়; যা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদ থেকে বাদ পড়া প্রার্থী অমর্ত্য রায় জন।

সকালে কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিপি পদ থেকে বাদ পড়া প্রার্থী অমর্ত্য রায় সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে একটি রিট করেছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অমর্ত্য রায় জন বলেন, জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট নামে যেসব সংবাদ হয়েছে তা সম্পূর্ণ গুজব। আমি এখনও কোনো রিট করিনি। আর রিট করলে তা প্রার্থিতা পুনর্বহাল চেয়ে করব। জাকসু নির্বাচন স্থগিত কিংবা বানচালের জন্য কোনো ধরনের রিট করব না।

এদিকে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল থেকেও রিট করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে। প্যানেলের পক্ষ থেকে জিএস প্রার্থী শরণ এহসান জানান, ‘ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জন জাকসু নির্বাচন স্থগিত চেয়ে কোনো রিট করেননি। তার প্রার্থিতা পুনর্বহাল চেয়ে রিট দাখিল করেছে। ভুল নিউজ দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেল।

Lading . . .