প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

বিতর্ক কেবল মত প্রকাশের মাধ্যম নয়, এটি জ্ঞান ও যুক্তি চর্চার এক দুর্দান্ত মঞ্চ। আর এই মঞ্চকে আলোকিত করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) যুক্তির মশাল জ্বেলে রেখেছে একমাত্র বিতর্ক সংগঠন ‘নৈয়ায়িক’। ২০০১ সালের ১ জুলাই যাত্রা শুরু করা এই সংগঠনটি নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সম্প্রতি ২৫ বছরে পা রেখেছে। এ যেন শুধু একটি সংগঠনের পথচলা নয়, একটি স্বপ্ন ও সম্ভাবনার গল্প।
নৈয়ায়িক প্রতিষ্ঠা থেকে এখন পর্যন্ত সাহসিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে বিতর্কচর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ। সংগঠনটি প্রতি বছর বিভিন্ন ধরনের বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রেশারস লীগ, আন্তঃডিসিপ্লিন এবং আন্তঃহল বিতর্ক প্রতিযোগিতা। এসব আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও মজবুত করে এবং ক্যাম্পাসে মুক্ত চিন্তার একটি পরিবেশ তৈরি করে। শুধু ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ না থেকে, নৈয়ায়িক আয়োজন করে ‘নৈয়ায়িক ন্যাশনালস’, যা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা বিতার্কিকদের অংশগ্রহণে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। যেমন এ বছর দেশের ১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বনামধন্য সরকারি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। ২০২৫ সালে বিতর্ক প্রতিযোগীতায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ব্রজলাল কলেজ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের চতুর্থ তলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি কক্ষে বিতার্কিকদের মিলন মেলা বসেছে। বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের জন্য অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ভাগে বিভক্ত করে বাছাই পর্ব চলছে।
খুবির নৈয়ায়িকের সদস্যরা শুধু আয়োজক হিসেবেই নয়, দেশের বিভিন্ন জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায়ও নিয়মিত অংশগ্রহণ করেন। তাদের অর্জনের ঝুলিতে রয়েছে ডজনখানেক জাতীয় ট্রফি, যা প্রমাণ করে তাদের দক্ষতা ও নিষ্ঠা।
সংগঠনটির বর্তমান কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি। সভাপতি হিজবুল্লাহ তামিম ও সাধারণ সম্পাদক খালিদ আহমেদের নেতৃত্বে নৈয়ায়িক নিয়মিত সাপ্তাহিক সেশনের আয়োজন করে। প্রতি রোববার ইংরেজি এবং বুধবার বাংলা বিতর্কের মাধ্যমে তারা নিজেদের ধারালো যুক্তির অনুশীলন করে থাকেন। এত আয়োজনের মধ্যেও নানা সমস্যা সংকট পার করতে হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের। নেই নিজস্ব কার্যালয়সহ আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক খালিদ আহমেদ বলেন, ‘নৈয়ায়িককে কেবল একটি সংগঠন হিসেবে দেখেন না এর সদস্যরা বরং এটিকে তারা ‘আরেকটি পরিবার’ হিসেবে মনে করেন। আমাদের যেমন নিজস্ব কার্যালয় নেই, তেমনি আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদির অভাব রয়েছে। আমরা আবেদন জানিয়েছি, আশা করছি দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি বলেন, ‘এখানকার শিক্ষার্থীরা বিতর্কচর্চার পাশাপাশি সামাজিকতা, মানবিকতা এবং সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জন করেন। নিজেদেরকে উপস্থাপন করার কৌশলও তারা এখান থেকেই শেখেন।’
নৈয়ায়িক যেন একদল বিতার্কিকের বসতি। খুবিতে বিতর্কচর্চা বলতেই এক নামে উচ্চারিত হয় এই সংগঠনের নাম। তাদের সদস্যরা শুধুমাত্র নিজেদের ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ থাকেন না, বরং খুলনার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বিতর্কের আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করেন। প্রতি বুধবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে তারা সাপ্তাহিক বৈঠকে মিলিত হন, যেখানে তরুণ বিতার্কিকদের নিয়ে নিয়মিত বিতর্কচর্চার আসর বসে।
ক্লাবের কার্যক্রম সম্পর্কে সভাপতি হিজবুল্লাহ তামিম বলেন, ‘বিতর্ক চর্চা মানুষের বুদ্ধিকে জাগ্রত করে। এই লক্ষ্য সামনে রেখে নৈয়ায়িক যে কাজ করে যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। আমরা আমাদের কার্যক্রমকে আরও বেশি গতিশীল করতে কাজ করে যাব।’
নৈয়ায়িক নেতৃত্ব, বুদ্ধিমত্তা এবং প্রগতির নাম। এটি কেবল একটি বিতর্ক সংগঠন নয়, এটি একটি চিন্তার স্কুল, নেতৃত্বের আঁতুড়ঘর এবং যুক্তির আলোয় আলোকিত একটি মঞ্চ। এখান থেকে উঠে আসা প্রতিটি বিতার্কিক যুক্তিবোধ, বিশ্লেষণ ক্ষমতা ও মানবিক মূল্যবোধে গড়ে ওঠে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে। ভবিষ্যতেও নৈয়ায়িক যুক্তির বাতিঘর হয়ে আলো ছড়িয়ে যাবে সর্বত্র এমনটিই প্রত্যাশা এর সকল সদস্যদের।