Advertisement

ক্রীড়াবিদদের স্বপ্ন ফিকে হয়ে যাচ্ছে

যুগান্তর

প্রকাশ: ২৮ জুলাই, ২০২৫

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

নিয়মনীতির কোনো বালাই নেই। শৃঙ্খলাও নেই। বিক্ষিপ্তভাবেই চলছে দেশের খেলাধুলা। যদিও ক্রীড়া উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু কথার প্রতিফলন নেই কাজে। দেশে শত শত কোটি টাকার ক্রীড়া স্থাপনা থাকলেও নেই কোনো তদারকি। ফলে গতি হারাচ্ছে খেলাধুলা। ফিকে হয়ে যাচ্ছে ক্রীড়াবিদদের স্বপ্ন। পরিকল্পনা না থাকায় সব যেন স্থবির হয়ে রয়েছে।

দেশের ক্রীড়ার উন্নয়নের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে—জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) ও ক্রীড়া পরিদপ্তর। অথচ এদের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। বিকেএসপির রয়েছে প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি। প্রতিভা বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

ক্রীড়া পরিষদ বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিভা বাছাই করে। ক্রীড়া পরিদপ্তরের রয়েছে প্রত্যেকটি জেলায় একজন করে ক্রীড়া কর্মকর্তা। ক্রীড়া পরিষদ ও পরিদপ্তর প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার ক্রীড়া সামগ্রী বিনামূল্যে বিতরণ করলেও কোনো মনিটরিং সেল নেই।

ক্রীড়া উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, যার জবাবদিহিতা নেই। দেশের কত ভাগ লোক খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত কিংবা ক্রীড়াবিদের সংখ্যা কত? ফুটবল ফেডারেশনের কথাই ধরা যাক। তাদের কাছে তথ্য নেই, কোন জেলায় ফুটবল লিগ হয়, আদৌ হয় কি না? দেশে নিবন্ধিত ফুটবলারের সংখ্যা কত?

প্রায় সব ফেডারেশনের অবস্থা ফুটবলের মতোই। সরকার অর্থ, অবকাঠামো সবই দিচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন শুধুই পেছাচ্ছে।

গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বেশ কিছু সিদ্ধান্তে ঝিমিয়ে পড়েছে দেশের ক্রীড়াঙ্গন। কোনো কারণ ছাড়াই হুট করে দেশের ৬৪ জেলার ক্রীড়া সংস্থা ও আট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কমিটি ভেঙে দেয় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।

এরপর ক্রীড়াঙ্গন সংস্কারের নামে গঠন করা হয় পাঁচ সদস্যের সার্চ কমিটি। বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের অ্যাডহক কমিটি গঠনের সুপারিশ করা ও ক্রীড়া নীতিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের। প্রায় নয় মাসে বিভিন্ন জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনের কমিটির সুপারিশ করে এই কমিটি। সার্চ কমিটির সুপারিশ করা বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের কমিটিতে সংযোজন ও বিয়োজন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এ নিয়ে ক্রীড়াঙ্গন ছিল সমালোচনামুখর।

কারণ অনেক কমিটির প্রজ্ঞাপনে কর্মকর্তাদের নাম হাতে লেখা দেখা গেছে। আবার অনেক ফেডারেশনের জন্য সার্চ কমিটির করা সুপারিশ আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে ক্রীড়া পরিষদে গিয়ে। দেশের বড় ক্রীড়া ফেডারেশন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) অস্থিরতা তৈরির জন্য দায়ী জাতীয় ক্রীড়া পরিষদই। প্রথমে তারা জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদকে সভাপতি করে। পরে কোনো কারণ ছাড়াই তাকে সরিয়ে দিয়ে আরেক সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামকে সেই পদে বসানো হয়।

কাবাডি ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটিতে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্ণধার এসএম নেওয়াজ সোহাগকে সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন করা হয়, যা বিতর্ক উসকে দেয় কাবাডি অঙ্গনে। বিতর্কিত সোহাগকে সাধারণ সম্পাদক করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ক্রীড়া পরিষদের সামনে মানববন্ধন করেন কাবাডি সংগঠকরা।

এছাড়া যুগ্ম সম্পাদক পদে গাজী মোজাম্মেল হকের নাম হাতে লিখে দেওয়া হয়, যা পরে সমালোচনার মুখে বাতিল করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। আরচারি ফেডারেশনে দীর্ঘদিন সাধারণ সম্পাদকের পদটি আঁকড়ে থাকা কাজী রাজীব উদ্দিন আহমেদ চপলকে রেখেই কমিটি ঘোষণা করে ক্রীড়া পরিষদ।

এ নিয়ে ঠান্ডা লড়াই চলে সার্চ কমিটির প্রধান জোবায়েদুর রহমান রানা ও ক্রীড়া পরিষদের সচিব আমিনুল ইসলামের মধ্যে। পরে ক্রীড়া পরিষদ চপলকে সরাতে বাধ্য হয়। সেখানে নিয়ে আসা হয় তানভীর আহমেদকে।

শুটিং ফেডারেশনের কমিটিতে জায়গা করে দেওয়া হয়েছে বিতর্কিত সংগঠক সাজ্জাদ হায়দারকে, যার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারির ঘটনাও রয়েছে। এর জেরে পদত্যাগ করেন রাইফেলের সহকারী কোচ ও সাবেক তারকা শুটার শারমিন আক্তার রত্না। সাধারণ সম্পাদক পদে ৮০ বছরের নাট্যাভেত্রী ও সংগঠক আলেয়া ফেরদৌসকে রাখা হয়েছে।

যিনি হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন। কুস্তি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়েছিল ৭৪ বছর বয়সি মাহাবুবুল আলম জীবনকে। কমিটি ঘোষণার পর থেকেই হাসপাতালে ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে এই পদে জীবনকে বাদ দিয়ে মেসবাহ উদ্দিন আজাদকে এনে নতুন প্রজ্ঞাপন দেয় ক্রীড়া পরিষদ।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ঘোষিত বিভিন্ন কমিটি নিয়ে ক্রীড়াবিদ ও সংগঠকদের মানববন্ধন করতে দেখা গেছে। অ্যাডহক কমিটি নিয়ে ক্রীড়া পরিষদ ও সংগঠকদের এমন সাংঘর্ষিক অবস্থায় গত এক বছরে দেশের খেলাধুলা একেবারেই শূন্যের কোঠায়।

শক্তিশালী কমিটি না থাকায় খেলাধুলাও নেই ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোতে। অথচ সামনেই তিনটি গেমস রয়েছে-এশিয়ান যুব গেমস, ইসলামিক সলিডারিটি গেমস ও সাউথ এশিয়ান গেমস। গত এক বছরে খেলাধুলা না থাকায় ক্রীড়াবিদদের সক্ষমতা প্রায় শূন্যের কোঠায়।

কারণ তাদের যথাযথ অনুশীলন বন্ধ ছিল। ক্রীড়াবিদদের বেহাল দশা দেখে মনে হচ্ছে, ওই গেমসগুলোতে পদকের আশা ক্ষীণ। এভাবে চলতে থাকলে স্থবির হয়ে যাবে দেশের খেলাধুলা। হারিয়ে যাবে বিশ্বব্যাপী লাল-সবুজের ক্রীড়াবিদদের গৌরব।

আরও পড়ুন

Lading . . .