এশিয়ান কাপে প্রথমবার কোয়ালিফাই করেছে বাংলাদেশ
প্রকাশ: ৪ জুলাই, ২০২৫

প্রথমবারের মতো নারী এশিয়ান কাপে কোয়ালিফাই করেছে বাংলাদেশ। গতকাল বাংলাদেশ মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়ে এক পা দিয়ে রেখেছিল। গ্রুপ 'সি'তে বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের ম্যাচ ড্র হওয়ায় এক ম্যাচ হাতে রেখেই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে উঠল বাংলাদেশ দল। গ্রুপ 'সি'তে বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের ম্যাচ ২-২ তে ড্র হয়েছে। তাতেই এক ম্যাচ হাতে রেখেই এএফসি এশিয়ান কাপের মূল পর্বের টিকিট পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো এই টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত পর্বে নাম লিখিয়ে ইতিহাস গড়েছেন আফঈদা-ঋতুপর্ণারা। আগামী শনিবার বাংলাদেশ গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে হারলেও বাংলাদেশের আর কোনো সমীকরণ থাকবে না। মিয়ানমার বাহরাইনকে হারালেও বাংলাদেশের সমান ৬ পয়েন্ট হবে। কিন্তু হেড টু হেডে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশই গ্রুপের শীর্ষে থাকবে। তাই আর কোনো বাধা নেই এশিয়ান কাপে খেলার। ১৯৮০ সালে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপ খেলেছিল বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল। তবে নারী ফুটবল দলের কখনো এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ে খেলা হয়নি। সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে উঠল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এর আগে গতকাল মিয়ানমারের মাটিতে মিয়ানমারকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ ফুটবল দল। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ঋতুপর্ণা চাকমারা ২-১ গোলে হারায় শক্তিশালী মিয়ানমারকে। এই জয়ে গ্রুপ শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। আর বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের ম্যাচ ড্র হওয়ায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ খেলবে নারী ফুটবলে এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা এএফসি এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে। গতকাল শক্তি, মাঠ, দর্শক মিলিয়ে এই ম্যাচে ফেবারিট ছিল মিয়ানমারই। তবে সবকিছু তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন লাল-সবুজ জার্সিধারী মেয়েরা। আগের দুইবার এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ৫ ম্যাচ খেলে সবগুলো হারা বাংলাদেশ এবার টানা দুই ম্যাচ জিতে চূড়ান্ত পর্বের টিকিট পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিল। তবে বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তান ম্যাচ ড্র হলে বাংলাদেশের এশিয়া কাপ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হয়ে যায়। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে মিয়ানমার ৫৫ ও বাংলাদেশ ১২৮। ৭৩ ধাপ এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ সাবলীল ফুটবলই খেলেছে। সমর্থন, স্বাগতিক পরিবেশ কোনো কিছুই বাংলাদেশের সামনে বাধা হিসেবে দাঁড় করাতে পারেনি মিয়ানমার। ঋতুপর্ণা চাকমার দুটি দুর্দান্ত গোল বাংলাদেশকে এশিয়ান কাপের পথে রেখেছে। এই মিয়ানমারের বিপক্ষে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে ৫-০ গোলে হেরেছিল। ছয় বছর পর সেই মিয়ানমারকে তাদের মাটিতে ২-১ গোল হারাল। বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এতে স্পষ্ট। মিয়ানমার ম্যাচ হারলেও তারা ভালো ফুটবলই খেলেছে। প্রথমার্ধে দু’টি নিশ্চিত গোল মিস করেছে। আবার কখনো ভাগ্য সহায় হয়নি। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমার দুটি একক নৈপুণ্যের গোলেই মূলত জয় এসেছে। পাশাপাশি টিম স্পিরিট, ভালো ডিফেন্ডিংয়ের বড় অবদান রয়েছে। ১৮ মিনিটে বক্সের একেবারে সামনে ফ্রি কিক পেয়েছিল বাংলাদেশ। ঋতুপর্ণার ফ্রি কিক প্রথমে মিয়ানমারের রক্ষণ দেয়ালে প্রতিহত হয়। ফিরতি বলে ঋতুপর্ণা জোরালো কোনাকুনি শট করেন। এতে মিয়ানমারের রক্ষণ ও গোলরক্ষক উভয় পরাস্ত হয়। বল জালে জড়ানোর সাথে ইয়াঙ্গুনের গ্যালারিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উল্লাস শুরু হয়। ঋতুপর্ণা গোল করলেও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফ্রি কিক পাওয়ার পেছনে অবদান ছিল শামসুন্নাহারের। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে তিনি একাই বক্সে প্রবেশ করছিলেন। মিয়ানমারের দুই ডিফেন্ডার তার গতির সঙ্গে পেরে উঠেননি। বক্সের ঠিক আগে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজান। বাংলাদেশ গোল পাওয়ার পর খেলায় আধিপত্য বিস্তার করে। দুটি কর্ণার আদায় করে লিড পাওয়ার পর। শামসুন্নাহার দারুণ একটি সুযোগ মিস করেন। বা প্রান্ত থেকে বাড়ানো বলে তিনি পোস্টে বল রাখতে পারলে ব্যবধান দ্বিগুণ করতে পারত বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের শেষ দশ মিনিট অবশ্য মিয়ানমার বাংলাদেশের ওপর অনেক চাপ তৈরি করে। একবার বাংলাদেশের জালে বলও পাঠিয়েছিল। রেফারি সেই গোল বাতিল করে। প্রথমার্ধে ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের আক্রমণ একটি ক্রসবারে লেগে ফেরত আসে। ফিরতি বল মিয়ানমারের ফরোয়ার্ডের পায়েই পড়েছিল। সেই বলও জালে পাঠাতে পারেননি স্বাগতিক দলের ফুটবলার। প্রথমার্ধের শেষ কয়েক মিনিট বাংলাদেশের গোলরক্ষক রুপ্না চাকমা দুই বার গোল পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসে পরাস্ত হয়েছিলেন। বড় বিপদ থেকে পরিত্রাণ পায় মিয়ানমার ফুটবলারদের ফিনিশিং ব্যর্থতায়।
দ্বিতীয়ার্ধে মিয়ানমার খেলায় ফেরার জন্য মরিয়া ছিল। বাংলাদেশ রক্ষণেই বেশি মনোযোগ রেখেছিল। ৭০ মিনিটে আবারও মিয়ানমারের দর্শকদের স্তব্ধ করে দেন ঋতুপর্ণা চাকমা। বা প্রান্ত থেকে অসাধারণ শটে তিনি গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। বাংলাদেশের এই ফুটবলারের আজ দুটি গোলই দারুণ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের অন্তিম মুহূর্তে মিয়ানমার একটি গোল পরিশোধ করে। ৪ মিনিট ইনজুরি সময়, মিয়ানমার আরেকটি গোল দিয়ে ম্যাচে ফেরার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল। বাংলাদেশ রক্ষণে কোনো ভুল না করায় হতাশ হয়ে মাঠ ছাড়তে হয় মিয়ানমারকে। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় হবে এশিয়ান কাপের মূল পর্ব। বাছাই পর্বে আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন, স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও গত আসরের শীর্ষ তিন দল খেলবে চূড়ান্ত আসরে। বাংলাদেশ এক ম্যাচ আগেই চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করে।
আরও পড়ুন