Advertisement

খেপের মাঠ থেকে দুই প্রধানের বিরুদ্ধে গোল, নঈমের স্বপ্নে নেইমার ও মোহনবাগান

এই সময়

প্রকাশ: ৮ আগস্ট, ২০২৫

আমিল নঈম,Ei Samay,মৃন্ময় ও আমিল,খেপের মাঠের আকর্ষণ থেকে দূরে থাকাই লক্ষ্য নঈমের
আমিল নঈম,Ei Samay,মৃন্ময় ও আমিল,খেপের মাঠের আকর্ষণ থেকে দূরে থাকাই লক্ষ্য নঈমের

অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়

খেপের ময়দানে দাপিয়ে বেড়ান তিনি। আসানসোল, দুর্গাপুর, বরাকর অঞ্চলে তো বটেই, ডাক আসে কলকাতা থেকেও। সেই ছেলের পায়েই কি না জোড়া গোল। তা–ও আবার মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে! চলতি কলকাতা লিগে দুই প্রধানই হেরেছে পুলিশ এসি–র কাছে। দুই ম্যাচেরই গোল স্কোরার একজন। তিনি মহম্মদ আমিল নঈম। ‘খেপের মাঠের রাজা’ আসানসোলের নঈম হয়ে উঠছেন বাংলার ফুটবলের ভবিষ্যৎ মুখ। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু ক্লাবের অফার চলে এসেছে তাঁর কাছে।

এক মাথা কোঁকড়া চুল। মিষ্টি মুখের ছিপছিপে চেহারা। বাংলা বুঝলেও হিন্দিতেই সাবলীল। আর সাবলীল গোল করায়। লাজুক হেসে নঈম বলছিলেন, ‘নেইমারের ভক্ত তো। তাই গোল করতেই ভালো লাগে।’

এমনিতেই পুলিশ এসি এ বার লিগে দারুণ টিম করেছে। প্রথম দু’য়ে রয়েছে তারা। গতবার প্রায় অবনমনে চলে যাওয়া টিম এ বার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভালো ফুটবল‍ার, যোগ্য কোচ এবং ক্লাব সচিব কুসুম কুমার দ্বিবেদী ও কোষাধ্যক্ষ ইন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর আন্তরিক চেষ্টায়। দু’জনেই খেলা পাগল। তাই অনেক সমস্যার পরেও ভালো টিম করতে অল আউট ঝাঁপিয়েছিলেন। এক সময়ে বড় ক্লাবে খেলে যাওয়া ফয়জল আলি, শেখ সাহিলকে যেমন সই করানো হয়েছে, তেমনই নানা জায়গা ঘুরে তুলে আনা হয়েছে ফুটবলার। গোয়া থেকে আনা হয়েছে কোচ জোসেফ নাইককে। তাঁর ‘এ’ লাইসেন্স রয়েছে।

Amil Naim Police AC

ক্লাব সচিব কুসুম কুমার বলছিলেন, ‘আমাদের পুলিশ ক্লাবে খেলাধুলোর ঐতিহ্য বিরাট। কিছু কারণে তা ফিকে হলেও এ বার যাতে আমরা পুরোনো গৌরব ফিরিয়ে আনতে পারি, তার চেষ্টা করেছি। গতবার যখন আমাদের কমিটি দায়িত্বে আসে, তখন ফুটবল টিমের অবস্থা ভালো ছিল না। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড় করাতে সবার আগে দরকার ছিল ভালো কোচ। সেই কারণেই জোসেফকে গোয়া থেকে নিয়ে এসেছি আমরা। আমরা বিশ্বাস করি, ভালো পরিকল্পনা না থাকলে এগোনো সম্ভব নয়।’

টিম করার ক্ষেত্রে ইন্দ্র নারায়ণের ভূমিকা বেশ বড়। তাঁদেরই পুলিশ কর্মী সুমন দাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ফুটবলার বাছাইয়ে। ইন্দ্রর কথায়, ‘সুমন নিজে ফুটবল খেলত। ওর চোখ ভালো। ওকে স্বাধীনতা দিয়েছিলাম। নানা জায়গা থেকে ফুটবলার বেছে এনেছে। আমরা শুরুতেই বলে দিয়েছিলাম, কলকাতা লিগে সুপার সিক্সে ওঠার জন্য খেলতে হবে। কিন্তু এখন বলছি, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলো।’

সেই তালিকায় যেমন আমিল নঈম রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন মৃন্ময় মহাপাত্র বা সুদীপ দাসও। খড়গপুরের মৃন্ময় গোল করেছেন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। তিনি বাংলার ভবিষ্যৎ মুখ হতে পারেন। আর এঁদের তুলে আনার ক্ষেত্রে অন্যতম কৃতিত্ব সহকারী কোচ সুমন দাসের। আসানসোলে একটি টুর্নামেন্টে খেলতে গিয়ে আমিলকে পছন্দ হয়েছিল। একই ভাবে মৃন্ময়কেও কার্যত খেপের টুর্নামেন্ট থেকেই তুলে এনেছেন সুমন। তাঁর কথায়, ‘আমিলের টিম আমাদের তিন গোলে হারিয়েছিল। সেই ম্যাচে দু’গোল করেছিল ও একাই। তখনই ঠিক করেছিলাম, একে কলকাতায় খেলাতেই হবে।’

মোহন–ইস্টের বিরুদ্ধে গোল করলেও খুব একটা আবেগে ভাসছেন না আমিল নিজে। বলছিলেন, ‘আমি দুই টিমের খেলা দেখি। যদি ভবিষ্যতে সুযোগ পাই, একদিন মোহনবাগানে খেলব।’

Amil Naim Police AC

কিন্তু খেপের মাঠের অমোঘ আকর্ষণ কি এড়াতে পারবেন? যেখানে এক টুর্নামেন্টেই তিনি পান ১৫–২০ হাজার টাকা। লিগের মাঝেও প্রচুর ডাক পাচ্ছেন। চোয়াল শক্ত করে আমিল নঈম অবশ্য বলছেন, ‘আমাকে বড় ফুটবলার হতেই হবে। এখন খেপ খেলা বন্ধ করে দিয়েছি।’

কিন্তু লিগের পরে?

পুলিশ এসি যদি কলকাতা লিগে প্রথম তিনে থাকতে পারে, তা হলে তারা আই লিগের তৃতীয় ডিভিশনে খেলবে। তখন ফুটবলার নাও ছাড়তে পারে তারা। তবে আমিল নঈম বা মৃন্ময়কে নিয়ে এখন থেকেই যা টানাটানি চলছে, তাতে ভবিষ্যতে বড় টিমের জার্সি তাদের গায়ে উঠতেই পারে।

Lading . . .