প্রকাশ: ২৫ আগস্ট, ২০২৫

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার আস-সালাম জামে মসজিদ আধনিক স্থাপত্যের এক অনন্য স্থাপনা। এ মসজিদে বর্ষায় মেলে বৃষ্টির ছোঁয়া, আর পূর্ণিমার থাকে চাঁদের আলো। পুরো মসজিদে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন ৪০০ মুসল্লি। দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি দেখতে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের শেখের কিল্লা এলাকায় নির্মিত হয়েছে এ মসজিদটি। শুধু নকশায় নয়, বেশকিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য আছে এ মসজিদে। চোঁখ ধাঁধানো এ মসজিদটি নামাজ আদায় ছাড়াও এটি এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। মসজিদটির আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট।
দোতলা এ মসজিদটির দুটি অংশ আছে। সামনে মেহেরাব ও মসজিদের মূল অংশ। পেছনে মাঝ বরাবর গলি পথ। তার দুই পাশে শীতল জলাধার, রোদ আর বৃষ্টির প্রবেশপথ।
মসজিদের নেই কোনো জানালা। তবে বিদ্যুৎ ছাড়াই মসজিদটি সবসময়ই আলোকিত থাকে। গরমের সময় শীতল করার জন্য মসজিদের ভেতরে রয়েছে বৃষ্টির পানি ও পানি সংরক্ষণের জন্য সাতটি জলাধার। আর জলধারগুলোতে রাখা শীতল পাথর গ্রীষ্মকালে মসজিদকে শীতল রাখে।
বাংলাদেশি স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান আর্কি গ্রাউন্ড লিমিটেডের স্থপতি নবী নেওয়াজ খান শমীন ও তার দল মসজিদটির নকশা তৈরি করেন। নির্মাণ কাজের পর ২০২১ সালের শেষের দিকে মসজিদটি মুসল্লিদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১০ হাজার ৮শ বর্গফুটের দোতলা এ মসজিদ নির্মাণ করান স্থানীয় রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্ট। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরই মসজিদটির তথ্যচিত্র সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড আর্কিটেকচার কনফারেন্সে পাঠানো হয়েছে, বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মসজিদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-সেখানে ইবাদত করতে আসা মুসল্লিরা মসজিদের ভেতরে বসেই রোদ, বৃষ্টি এবং কুয়াশার দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। কারণ এ মসজিদটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে এর ভেতরে রোদ ও বৃষ্টি সরাসরি এসে পড়ে। তবে মুসল্লিরা বৃষ্টিতে ভিজবেন না এবং রোদেও পুড়বেন না।
মুসল্লিদের জন্য একটি প্রশান্তিময় স্থান তৈরি করতে মসজিদে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবস্থা রয়েছে। পেছনের অংশে বড় গ্যালারির মসজিদ। যেখানে বসে মুসল্লিরা ইবাদত করতে পারেন। গ্যালারি অংশের পেছন থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ি। দোতলায় রয়েছে নারীদের নামাজ আদায়ের স্থান।
এ মসজিদটির ছাদ প্রচলিত অন্য স্থাপনার থেকে আলাদা। পুরো মসজিদের দেওয়ালটি বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় পুরো দেওয়াল ইটের তৈরি। মূলত ইট দেখা গেলেও এর ভেতরে রয়েছে রড, সিমেন্ট ও ইটের সংমিশ্রনে ঢালাই। নিয়মিত নামাজের পাশাপাশি ঈদগাহ হিসাবেও ব্যবহার করা হয় এ মসজিদটি।
মসজিদটি দেখতে কুমিল্লা জেলা শহর থেকে আসা আনোয়ার হোসাইন বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ মসজিদের বিষয়ে জানতে পেরে দেখতে এসেছি। আধুনিক যুগে তৈরি এ ধরনের স্থাপনা আগে কোথাও চোখে পড়েনি। স্থাপনাগুলোর কারুকার্জ এবং নির্মাণ শৈলী দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সাধারণত মুঘলদের স্থাপনাগুলো এ ধরনের নকশার সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়।
এ মসজিদকে ঘিরে তৈরি হওয়া শিক্ষা কমপ্লেক্সের মধ্যে আস-সালাম হাফেজিয়া মাদ্রাসটিকে হাফেজি ও ইংরেজি শিক্ষার সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। রহিমা মমতাজ ও সাইফ সালাহউদ্দিন ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জানান, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাই তিনি নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেন, আমাদের উদ্যোগের প্রথম স্থাপনা মসজিদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। আরও কিছু কাজ চলমান রয়েছে।
মাদ্রাসাটিতে প্রতি ব্যাচে ৬০ জন ছেলে, ৪০ জন মেয়ে এবং ২০ জন হাফেজ হবেন। বিনা অর্থে মাদ্রাসাটিতে হাফেজির পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক মানের এ মাদ্রাসাটি থেকে ভবিষ্যতে যারা হাফেজ হয়ে বের হবেন, তারা পৃথিবীর যে কোনো দেশে ইংরেজি ভাষায় বক্তব্য দিতে পারবেন বলে জানান মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা।
মসজিদটির ইমাম মাওলানা হামিদুর রহমান বলেন, এটি পুরো বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের বিষয়।
আরও পড়ুন