কুয়েটের অচলাবস্থা নিরসনে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন
প্রকাশ: ২৪ জুলাই, ২০২৫

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অচলাবস্থা নিরসন ও দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম চালুর জন্য উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য দুর্বার বাংলার পাদদেশে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির জরুরি সাধারণ সভায় গত সোমবার এই কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজকের মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি সাহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া চলমান সংকট নিরসন ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে অবিলম্বে একজন উপাচার্য নিয়োগ প্রয়োজন। উপাচার্য নিয়োগ ছাড়া এ সংকট কাটানো সম্ভব নয়।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকহীন। দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক—সবাই মিলে তাঁরা দ্রুত উপাচার্য নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
মানববন্ধনে অধ্যাপক আবদুর রফিক, অধ্যাপক মহিউদ্দিন আহমাদ, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াছ আক্তার, অধ্যাপক মুহাম্মাদ হারুনুর রশীদ, অধ্যাপক এম এম তওহিদ হোসেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ শাহজাহান আলী, অধ্যাপক মো. রোকনুজ্জামান, অধ্যাপক আবু জাকির মোর্শেদ, অধ্যাপক রাজিয়া খাতুন, অধ্যাপক সালাহ্ উদ্দীন ইউসুফ, অধ্যাপক মনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, উপাচার্যের অব্যাহতির পর কুয়েটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ও এলাকাবাসীর সঙ্গে বেশ কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এখনো শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। এ ধরনের নাজুক পরিস্থিতিতে উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে কারও পক্ষে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়া সম্ভব নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী একাডেমিক ক্যালেন্ডারের প্রায় সব কার্যক্রম, বিশেষ করে পরীক্ষাসংক্রান্ত প্রায় সব বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন প্রয়োজন। বিশেষ ক্ষেত্রে উপাচার্য একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে অনুমতি দিয়ে থাকেন, যা বর্তমানে অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়।
শিক্ষকনেতারা বলেন, পোস্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম, থিসিস কমিটি অনুমোদন, ভাইভা বোর্ড আহ্বান, মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্তসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই সিএএসআর (উচ্চতর অধ্যয়ন ও গবেষণা পরিষদ) ও একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন দরকার, যা উপাচার্যের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। ফলে এ কার্যক্রমও স্থবির। ২০২৫ সালের প্রথম বর্ষের স্নাতক এবং জুলাই সেশনের পোস্টগ্র্যাজুয়েট ভর্তিপ্রক্রিয়া ও ক্লাস শুরুর জন্যও একাডেমিক কাউন্সিলের সভা প্রয়োজন, যা বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে না। কিছু বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ শূন্য হয়ে যাওয়ায় ক্লাস শুরুর আগে এ শূন্যতা পূরণ করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ও উন্নয়ন কার্যক্রমও প্রায় বন্ধ।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরে আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও শিক্ষকদের বিরোধিতার মুখে ২২ মে তিনি পদত্যাগ করেন। ১০ জুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও নিয়োগপ্রক্রিয়া অগ্রসর হয়নি।