Advertisement

সৌদির খেজুর খেয়ে বীজ পুঁতেছিলেন নুসরাত, এখন সেখানে বিরাট বাগান

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২৪ জুলাই, ২০২৫

যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামে নিজের খেজুরের বাগান দেখাচ্ছেন নুসরাত জাহানছবি: প্রথম আলো
যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামে নিজের খেজুরের বাগান দেখাচ্ছেন নুসরাত জাহানছবি: প্রথম আলো

সৌদি থেকে আনা খেজুর খেয়ে শখের বশে কয়েকটি বীজ মাটিতে পুঁতে দিয়েছিলেন নুসরাত জাহান (লিজা)। এখন সেটাই রূপ নিয়েছে একটি খেজুরবাগানে। সেখানে ফল ধরেছে, চারাও তৈরি হচ্ছে।

ঘটনাটি যশোরের কেশবপুর উপজেলার মঙ্গলকোট গ্রামের। গ্রামের বাসিন্দা ও কেশবপুর ডিগ্রি কলেজের স্নাতকের ছাত্রী নুসরাত জাহান এখন শখের খেজুরবাগানের সফল চাষি। এক বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে এই খেজুরবাগান।

পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নুসরাত তখন অনেক ছোট। তাঁদের প্রতিবেশী চাচা গোলাম হোসেন ও আবদুল মজিদ পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তাঁরা খেজুর এনে দেন নুসরাতদের পরিবারের জন্য। সেই খেজুর খেয়ে নুসরাত বীজগুলো মাটিতে পুঁতে দেন। কিছুদিন পর চারা গজায়। গাছ বড় হতে দেখে নুসরাতের মাথায় চিন্তা আসে, কীভাবে গাছগুলো বাঁচানো যায়। এরপর ইউটিউবে গাছ পরিচর্যা ও বাগান তৈরির বিষয়ে ধারণা নিতে শুরু করেন তিনি।

নুসরাত বলেন, ‘আমি একটু একটু করে ইউটিউব থেকে শেখা ধারণা অনুযায়ী বাড়ির উঠানে গাছগুলোর পরিচর্যা করতে থাকি। পরে উঠান-সংলগ্ন মাঠে গাছগুলো বাগানে রূপ নেয়। এখন সেখানে ৫০ থেকে ৬০টি খেজুরগাছ আছে। আবার প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে নতুন চারা (স্থানীয় ভাষায় বোগ) তৈরি হচ্ছে।’ তিনি জানান, গাছে এখন সুমিষ্ট খেজুর ধরেছে। খেজুরগুলো হলুদ থেকে ধীরে ধীরে লাল রং ধারণ করছে। এখনই খেতে খুব মিষ্টি স্বাদের। তাঁর বাগানে আমবার, আজোয়া ও মরিয়ম জাতের খেজুর আছে।

সিরাজুলের বাগানে ঝুলছে থোকায় থোকায় সৌদি খেজুর

নুসরাত বলেন, ‘আমি একটু একটু করে ইউটিউব থেকে শেখা ধারণা অনুযায়ী বাড়ির উঠানে গাছগুলোর পরিচর্যা করতে থাকি। পরে উঠান-সংলগ্ন মাঠে গাছগুলো বাগানে রূপ নেয়। এখন সেখানে ৫০ থেকে ৬০টি খেজুরগাছ আছে। আবার প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে নতুন চারা (স্থানীয় ভাষায় বোগ) তৈরি হচ্ছে।’ তিনি জানান, গাছে এখন সুমিষ্ট খেজুর ধরেছে। খেজুরগুলো হলুদ থেকে ধীরে ধীরে লাল রং ধারণ করছে। এখনই খেতে খুব মিষ্টি স্বাদের। তাঁর বাগানে আমবার, আজোয়া ও মরিয়ম জাতের খেজুর আছে।

নুসরাতের বাবা আবদুল লতিফ পল্লী বিদ্যুতের লাইন টেকনিশিয়ান হিসেবে বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছেন। অবসরে বাড়ি ফিরে কৃষিকাজে মন দেন। তিনি বলেন, মেয়ের শখের খেজুরগাছ এখন পরিণত হয়েছে বাগানে। তিনি কৃষি বিভাগসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পরামর্শ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে মিলে বাগানের পরিচর্যা করছেন।

কুয়েত থেকে ফিরে খেজুরের বাগান, আছে মরিয়ম–আজওয়া–মেডজল খেজুর

আবদুল লতিফ বলেন, এখানকার মাটি বেলে-দোআঁশ প্রকৃতির। প্রতিটি গাছের নিচে আলাদা করে বালু দেওয়া হয়েছে, যাতে মরু এলাকার পরিবেশ অনুকরণ করা যায়। জৈবসার, ভার্মি কম্পোস্ট ও ইউরিয়া মিশিয়ে গাছ লাগানো হয়েছে। পরাগায়ন খুব গুরুত্বপূর্ণ। গাছে ফুল এলে পুরুষ গাছের ফুল নিয়ে মেয়ে গাছে পরাগায়ন করা হয়, সেখান থেকেই খেজুর আসে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইরফান মোড়ল (৭০) বলেন, ‘এই খেজুরবাগান এখন এলাকার মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। সৌদি আরবের খেজুর এ দেশে উৎপাদন হচ্ছে—এটা একটা বিরল ঘটনা। আমি খেজুর খেয়েছি, খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু। এখান থেকে আবার চারা তৈরি হচ্ছে এবং বিক্রি হচ্ছে।’

মরুর দেশের খেজুর এখন খাগড়াছড়ির পাহাড়ে

আবদুল লতিফ বলেন, বাগানে এখন সাফল্য আসতে শুরু করেছে। খেজুরগাছের গোড়া থেকে উৎপন্ন চারাগুলো পাঁচ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খেজুরের বীজ থেকে উৎপন্ন চারা বিক্রি করেছেন ৫০০ টাকায়। সুস্বাদু খেজুর বাজারেও ভালো দামে বিক্রি হবে বলে আশা করেন তিনি।

নুসরাতের মা লামিয়া বেগম বলেন, এখন পরিবারের সবার একটা কাজ হলো বাগান পরিচর্যা করা। তিনি নিজেও গৃহস্থালির কাজ শেষে বাগানে সময় দেন। এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে কিছু খেজুর ঝরে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, তিনি বাগানটি দেখেছেন। সঠিকভাবে পরিচর্যা করা গেলে ভালো ফল আসবে। অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হওয়া সম্ভব।

Lading . . .