হেমা ও সর্বমিত্র চাকমার বিজয়ে পাহাড়ে আনন্দ
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে জয়ী হয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের হেমা চাকমা ও সর্বমিত্র চাকমা। বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর একাংশের জোট ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ থেকে লড়েন খাগড়াছড়ির হেমা চাকমা। তিনি পেয়েছেন ৪ হাজার ৯০৮ ভোট। অন্যদিকে ৮ হাজার ৯৯৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন রাঙামাটির ছেলে সর্বমিত্র চাকমা। তিনি ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী ছিলেন। তাদের বিজয়ে আনন্দিত-উচ্ছ্বসিত খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির মানুষ।
ইতিহাস গড়েছেন হেমা চাকমা। পাহাড়ি নারী হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে এই প্রথম কেউ ডাকসু সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। হেমা খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ২নং চেঙ্গী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অনিল চন্দ্র চাকমা ও মিনতি চাকমা দম্পতির মেয়ে। তার দাপুটে জয়ে খুশি খাগড়াছড়ির মানুষ।
এক ভাই এক বোনের মধ্যে ছোট হেমা। মা মিনতি চাকমা গৃহিণী। ২০১৮ সালে পুজগাং মুখ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ২০২০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন হেমা। বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। হেমা চাকমার বাবা অনিল চন্দ্র চাকমা বলেন, আমার মেয়ে ডাকসু নির্বাচনে লড়াই করে জয়লাভ করায় আমি খুবই খুশি। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষার্থীসহ সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। ২নং চেংগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনন্দ জয় চাকমা বলেন, পাহাড়ের নিভৃত পল্লীতে বেড়ে ওঠা হেমা চাকমা ডাকসুর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এটা গৌরবের। ডাকসুতে বিজয়ী হয়ে সে তার মেধার উজ্জ্বল প্রমাণ দিয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাং কল্যাণ সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও লেখক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, হেমা চাকমার বিজয় ভবিষ্যতে পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বকে অনুপ্রাণিত করবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে হেমা পিছিয়ে পড়া পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের কণ্ঠস্বর হবে।
হেমা চাকমার বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন জনসংহতি (এমএন লারমা) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিশান চাকমা। তিনি বলেন, পাহাড় থেকে এই প্রথম কোনো নারী ডাকসু সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, হেমা পাহাড়ের মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই সংগ্রামে সবসময় পাশে থাকবেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায়সঙ্গত সব আন্দোলনে হেমা শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবেন।
রাঙামাটিতে আনন্দ : এদিকে রাঙামাটির ছেলে সর্বমিত্র চাকমার বিজয়ে আনন্দ প্রকাশ করেছেন এ জেলার মানুষ। রাঙামাটি সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য অধ্যাপক বাঞ্ছিতা চাকমা বলেন, ডাকসু নির্বাচনে পাহাড়ের ছেলে হিসাবে তার (সর্বমিত্র) বিপুল জয়ে খুবই ভালো লেগেছে। তার জন্য শুভ কামনা। তরুণ সমাজকর্মী ও সাংবাদিক হিমেল চাকমা বলেন, সর্বমিত্র অত্যন্ত মেধাবী। তার পারিবারিক অবস্থাও ভালো। পাহাড়ের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ তাদের সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার আদায়ে যতদূর সম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য সর্বমিত্রের প্রতি আমার পরামর্শ।
রাঙামাটি শহরের ট্রাইবেল আদামের মিহির চাকমা ও নবকলি চাকমা দম্পতির একমাত্র সন্তান সর্বমিত্র। বাবা সরকারি জীবনবীমা করপোরেশনের রাঙামাটির উন্নয়ন কর্মকর্তা এবং মা রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
ছেলের ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভের প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেন, এ নিয়ে আমাদের খুশি-অখুশির তেমন কিছু নেই। তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। আমরা চাই সে ভালোভাবে পড়াশোনা করুক। নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে বলব, তার জনপ্রিয়তা আছে বলেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সে ২০২০ সালে রাঙামাটি লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ হতে এসএসসি এবং ২০২২ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাবিতে ভর্তি হয়েছে। ছেলে ডাকসু নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে পাহাড়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধার জন্য কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।