সাবেক এমপি সাজ্জাদুলসহ ১৮৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা, আছেন সাংবাদিকও
প্রকাশ: ৭ জুলাই, ২০২৫

নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলায় নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুরি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানসহ ১৮৬ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে। মামলায় চাকরিজীবী এবং সাংবাদিকদের নামও রয়েছে।
এক বছর আগে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ এনে বুধবার রাতে উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মজলু মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলাটি করেন।
বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এতে প্রধান আসামি করা হয়েছে নেত্রকোনা-৪ (মোহনগঞ্জ-মদন-খালিয়াজুরি) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাজ্জাদুল হাসানকে। ২ নাম্বার আসামি করা হয় খালিয়াজুরি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিজিএমের সাবেক পরিচালক রব্বানী জব্বারকে। আসামিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী এবং সাংবাদিকও আছেন।
মামলায় ৫১ নম্বর আসামি করা হয়েছে যুগান্তরের খালিয়াজুরি উপজেলা প্রতিনিধি ও উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলামকে। তিনি সিদ্দিকুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী। আর ১০৬ নাম্বার আসামি করা হয়েছে সকালের সময় উপজেলা প্রতিনিধি মৃণাল কান্তি দেবকে।
সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে ১৩ নম্বর আসামি করা হয় মো. শাহিন মিয়াকে। তিনি স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। আর ২০ নাম্বার আসামি করা হয় রাজন তালুকদারকে। তিনি বারহাট্টা উপজেলায় খাদ্যগুদামে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত।
এছাড়া ১৮৬ নাম্বার আসামি আবদুল মোনায়েম নূরপুর বোয়ালী দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক। ২৬ নাম্বার আসামি আদিল মিয়া সিদ্দিকুর রহমান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক। ২৭ নাম্বারে করা আসামি আসাদুল ইসলাম খালিয়াজুরি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক।
এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত বছরের ১৬ জুলাই বেলা ১২টা ২০ মিনিটে খালিয়াজুরি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভা দলীয় কার্যালয়ে চলাকালে এক নাম্বার আসামির হুকুমে ২ নম্বর থেকে ১০ নম্বর আসামিদের নেতৃত্বে উল্লেখিত আসামিরা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভয়ভীতি দেখানোসহ দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর চালিয়ে সভা পণ্ড করে দেয়। এছাড়া রাস্তা বন্ধ করে ১৫টি মোটরসাইকেল ও তিনটি ইজিবাইক যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ওই ঘটনায় কিছুটা দেরিতে হলেও তিনি মামলাটি করেছেন।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকালে বাদী মজলু মিয়া মোবাইল ফোনে বলেন, দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত হয় মামলা করতে হবে। তাই আমি মামলার বাদী হয়েছি। অপর প্রশ্নে তিনি উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন। এরপর বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৭ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত জেলায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৬০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ছয় হাজারের মতো আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ডজনখানেকের মতো পেশাদার সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম বলেন, এজাহারে যে সময় ও ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সময় আমি উপস্থিত ছিলাম না। আমাকে অহেতুক রাজনীতির তকমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত নই।
সাংবাদিক মৃণাল কান্তি দেব জানান, তাকে শুধু শুধু হয়রানি করার জন্যই আসামি করা হয়েছে।
খালিয়াজুরি প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, শফিকুল ইসলাম ও মৃণাল দেব পেশাদার সাংবাদিক। সহিংসতাসংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এনে তাদের এভাবে আসামি করা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি। এটা তাদের জন্য অত্যন্ত মানহানিকর ও অসম্মানজনক। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আশা করছি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
খালিয়াজুরি উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুর রউফ স্বাধীন বলেন, মামলায় আসামিদের বিষয়ে আমার জানা নেই। বাদী আমার সঙ্গে পরামর্শ করেননি। এ নিয়ে আমাকে অনেকেই ফোন করছেন। আপনি আমাদের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে জানলে ভালো হয়। তিনি সব কিছু বলতে পারবেন।
তবে মাহবুবুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
খালিয়াজুরি থানার ওসি মুগবুল হোসেন বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, মামলার পর অভিযান চালিয়ে তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। অবশ্য এর মধ্যে বেশ কয়েকজন আসামি অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন।