অপারেশনের সাড়ে ৩ মাস পর নারীর পেট থেকে বের করা হলো আস্ত গজকাপড়
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় ভুল অপারেশনের খেসারত দিলেন এক দিনমজুরের স্ত্রী সাহেরা খাতুন। টিউমার অপারেশনের সাড়ে তিন মাস পর পুনরায় অপারেশন করে তার পেট থেকে বের করা হলো আস্ত একটি গজকাপড়।
এর আগে আলমডাঙ্গার পপুলার মেডিকেল সেন্টারে অপারেশনের সময় সাহেরা খাতুনের পেটে ওই গজকাপড় রেখেই সেলাই দেন চিকিৎসক।
ঘটনার সাড়ে তিন মাস পর রোববার রাতে আলমডাঙ্গার আরেকটি প্রাইভেট হাসপাতালে পুনরায় অপারেশনের মাধ্যমে ওই গজকাপড় অপসারণ করা হয়। ভুক্তভোগী সাহেরা খাতুনের পরিবার অভিযুক্ত চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চায়।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের দিনমজুর মোশারফ আলীর স্ত্রী সাহেরা খাতুন (৪৫) প্রচণ্ড পেটব্যথা নিয়ে গত ২৫ মে আলমডাঙ্গার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের পপুলার মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি হন।
সাহেরা খাতুনের ছেলে জাহিদ হোসেন জানান, ওই দিনই তড়িঘড়ি করে পেটের টিউমার অপারেশন করেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের ডা. হোসেন ঈমাম। অপারেশনের জন্য আমাদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ১৫ হাজার টাকা। অপারেশনের পাঁচ দিন পর মাকে বাড়ি পাঠানো হলেও পেটের যন্ত্রণা বন্ধ না হয়ে আরও বেড়ে যায় এবং পেট শক্ত হয়ে টিউমারের মতো অনুভূত হতে থাকে। ওই হাসপাতালে বারবার যাওয়া-আসা করেও কোনো ফল হয়নি। বিষয়টি নিয়ে গত সাড়ে তিন মাসে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ডাক্তার দেখিয়ে আমাদের পরিবার দুই লক্ষাধিক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
সাহেরার স্বামী দিনমজুর মোশারফ আলী জানান, কোনো সমাধান না পেয়ে রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) সাহেরাকে ভর্তি করা হয় আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের ডক্টরস কেয়ার অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই রাতেই চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে পুনরায় অপারেশন করা হয়। অপারেশনের সময় রোগীর পেট থেকে একটি আস্ত গজকাপড় অপসারণ করা হয়।
রোগী সাহেরা খাতুন বলেন, গত প্রায় সাড়ে তিন মাস প্রচণ্ড কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। পেটের ব্যথা ও শক্ত গাঁটের মতো জায়গা ফুলে থাকায় মনে হচ্ছিল ভেতরে কিছু আছে। রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিয়েছি। অবশেষে আলমডাঙ্গায় দ্বিতীয়বার অপারেশন করানোর পর ডাক্তাররা জানান- পেটের ভেতর গজ কাপড় ছিল। এখন বেশ আরাম পাচ্ছি।
রোগীর ছেলে জাহিদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ডা. হোসেন ঈমাম অপারেশনের সময় মায়ের পেটে গজকাপড় রেখেই সেলাই দেন। ডাক্তারের এই ভুল অপারেশনের কারণে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমার মা একটু সুস্থ হলেই আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব।
পপুলার মেডিকেল সেন্টারের রিসিপসনিস্ট জুলেখা খাতুন বলেন, গত ২৫ মে অপারেশন করা হয়েছিল। রোগীর পেটে গজকাপড় ছিল কিনা তা আমরা জানি না।
এ ব্যাপারে ডা. হোসেন ঈমামের মোবাইল নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়াউদ্দিন আহমেদ এ ঘটনাকে ‘ক্রস মেডিকেল নেগলেজেন্সি’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যদি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আইনি সহায়তা চায়, তাহলে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন