প্রকাশ: ১০ আগস্ট, ২০২৫

লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌর এলাকায় গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতি স্থাপন প্রকল্পের নামে বেপরোয়া লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, সড়কে বাতি স্থাপনের পর থেকে আলোর মুখ দেখেনি পৌরবাসী। বেশকিছু বাতি নিভু নিভু করে জ্বললেও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোও। যার ফলে চোরের দল নিয়ে গেছে কিছু প্যানেলের ব্যাটারিও। পৌর কর্মকর্তারা অকেজো হয়ে পড়া সোলার প্যানেল ও বাতি মেরামতের কথা বলে এলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেননি। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখনো অধিকাংশ সড়কে লাগানো হয়নি বাতি। এতে গচ্চা গেছে সরকারের প্রায় দুই কোটি টাকা।
পৌর সূত্রে জানা যায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ)’ প্রকল্প থেকে রামগতি পৌরসভার জন্য ১ কোটি ৯৯ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যে এবং ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭ হাজার ৮শ টাকা চুক্তিমূল্যে বরাদ্দ হয়। পাওয়ার প্লাস নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। ২০২২ সালের ৮ আগস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে প্রকল্পের কাজটি সমাপ্ত করার কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পৌর কর্মকর্তা জানান, প্রায় দুই কোটি টাকার প্রকল্পের বিপরীতে প্রতিটি সোলারের মূল্য ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণে পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে মোট ১৫০টি সৌর সোলার স্থাপন করা হয়। প্রকল্পের মূল ঠিকাদার পাওয়ার প্লাসের স্বত্বাধিকারী কাজটি না করে স্থানীয় সাবেক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নুরনবীকে দিয়ে কাজটি করান। মূলত নুরনবী শুধু পুকুর নয়, সাগর চুরি করেছে। যদিও নুরনবীর দাবি, কোনো ধরনের অনিয়ম করেননি তিনি।
সরেজমিন পৌরসভার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ সোলার অকেজো। সন্ধ্যা হলেই দেখা যায় আগের মতো অন্ধকারে রয়েছে সড়কগুলো। পৌর ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবদুল গণি জানান, বাতিগুলো লাগানোর কয়েকদিনের মধ্যে আর জ্বলেনি। অনেক বাতি রাতের আঁধারে চুরি হয়ে গেছে।
সোলার স্থাপন প্রকল্পের ঠিকাদারের কাছ থেকে বাতি স্থাপনের প্রকল্পটি সাব ঠিকাদারি নেন রামগতি পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাবেক জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নুরনবী। তিনি তৎকালীন পৌর মেয়র মেজবাহ উদ্দিনের যোগসাজশে প্রকল্প বাস্তবায়নে করেছেন লুটপাট। কার্যাদেশে যে মানের উপকরণ দেওয়ার কথা, তা না দিয়ে দিয়েছেন চরম নিম্নমানের প্যানেল, বাতি ও পিলার।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার প্লাসের স্বত্বাধিকারী রফিক সোলার প্যানেল অকেজো হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মেরামতের জন্য লোক পাঠানো হবে। নিম্নমানের উপকরণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ঢাকায় আহছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে ফোন কেটে দেন।
পৌর প্রকৌশলী মাসুদ রেজাকে অসংখ্যবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি। এ বিষয়ে বর্তমান পৌর প্রশাসক ও ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, সোলার বাতির বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ আসার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমি নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে, তাই এ বিষয়ে পৌরসভার স্টাফরা ভালো বলতে পারবে।
আরও পড়ুন