Advertisement

শতকোটি টাকার জমি সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বিক্রির দলিল স্থগিত

যুগান্তর

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট, ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্র পাটগুদাম এলাকায় শতকোটি টাকা মূল্যের ৮৪ শতক সরকারি জমি মাত্র সাড়ে ৫ লাখ টাকায় বিক্রির ঘটনায় নগরজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। রোববার বিতর্কিত এ জমি বিক্রির দলিলের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন আদালত। আদেশে বলা হয়, নথি উপস্থাপনসহ দলিল বাতিলে ছানি মোকাদ্দমা করা হয়েছে। দরখাস্ত মঞ্জুর করা হলো এবং ২৭ এপ্রিলের ডিক্রি স্থগিতসহ দলিলের কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।

জানা যায়, প্রায় ৬০ বছর আগে আদমজী জুট মিলের নামে হস্তান্তরিত ওই জমি পরবর্তী সময়ে সরকারি খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত হলেও একটি সংঘবদ্ধ চক্রের যোগসাজশে সেই জমি সম্প্রতি ব্যক্তিমালিকানায় নিয়ে আদালতের আদেশ দেখিয়ে অস্বাভাবিক কম দামে রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। বিষয়টি তদন্ত করতে প্রশাসন ও দুদক মাঠে নেমেছে। রোববার দুপুরে দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসাইনের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল, সাবরেজিস্ট্রার ও জেলা জজ আদালতের সদর কোর্টের বেঞ্চ সহকারীর কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট নথি পর্যালোচনা করেন।

সম্পাদিত দলিল ও রেকর্ড অনুযায়ী, সিএস খতিয়ান নম্বর ১৫৫৭ এবং এসএ খতিয়ান নম্বর ২১০৯-এর জমির মালিক ছিলেন রেবতী মোহন দাস। বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) তথ্যমতে, ১৯৬৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দলিল নং ১০৭ অনুযায়ী, জমিটি হস্তান্তর করা হয়েছিল আদমজী জুট মিলস লিমিটেডের নামে। এরপর ১৯৬৪ সালে নামজারি হয় এবং সরকারিভাবে খারিজ খতিয়ান প্রস্তুত হয়। জুট মিল দীর্ঘদিন খাজনা পরিশোধ করলেও মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওই জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। বিআরএস জরিপে জমিটি সরকারি মালিকানায় (খতিয়ান নম্বর ১/১) রেকর্ডভুক্ত হয়। এরপর ওই জমি নিয়ে ২০২২ সালে রেবতী মোহন দাসের ছেলে রবীন্দ্র মোহন দাস জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং ৫১৪/২২) করেন। মামলাটি এ বছর ৮ মে আদালত খারিজ করে দেন।

এদিকে মামলা খারিজ হওয়ার আগেই ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে রবীন্দ্র মোহন দাস মিরাশ উদ্দিন সুমন নামে এক ব্যক্তিকে আমমোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) দেন। এরপর তিনি মামলাটি পুনর্জ্জীবিত করে নতুন মামলা করেন, যার প্রাথমিক শুনানির তারিখ ২৮ আগস্ট।

এ মামলার শুনানি চলাকালীন এ বছর ৬ জুন মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া সত্ত্বেও জমির ৮৪ শতক মাত্র ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রির দলিল সম্পাদন করা হয়। দলিলে দাতা হিসাবে রবীন্দ্র মোহন দাসের নাম ব্যবহার করা হয় এবং তার পক্ষে স্বাক্ষর করেন সিনিয়র সহকারী জজ পবন চন্দ্র বর্মণ।

ময়মনসিংহ সদর সাবরেজিস্ট্রার জাহিদ হাসান জানান, এ বছর ৬ জুন ৮৪ শতাংশ জমি সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রির দলিল সম্পাদিত হয়। দাতা হিসাবে রবীন্দ্র মোহন দাসের নাম ব্যবহার করা হয়। তিনি জানান, সদর কোর্টের সিনিয়র সহকারী জজ পবন চন্দ্র বর্মণ স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই জমির দলিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। চিঠিতে আদালতের অফিস সহায়ক শাহীন আলমকে ক্ষমতা ও নির্দেশ দিয়ে সদর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারকে দলিলে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। তিনি বলেন, এটি যেহেতু আদালতের আদেশ ছিল, তাই আমার কিছু করার ছিল না। শতকোটি টাকা মূল্যের জমি সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা মূল্য দেখানো সম্পর্কে সাবরেজিস্ট্রার জানান, আদালতের নির্দেশে জমি রেজিস্ট্রি হলে মৌজামূল্য অনুসরণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ভূমি ব্যবসায়ী জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র অবৈধভাবে কাগজপত্র তৈরি করে শত শত কোটি টাকার সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ দীর্ঘদিনের পুরোনো সম্পত্তি দখলে না থেকেও ভুয়া ও জালিয়াতি করে কাগজ তৈরি করে জমি দখলের পাঁয়তারা করছে। এ চক্রের বিরুদ্ধে প্রশাসন রুখে দাঁড়াবে বলে তাদের বিশ্বাস।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আজিম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ওই জমি সরকারি মালিকানায় (খতিয়ান নম্বর ১/১) রেকর্ডভুক্ত। আদালত কীভাবে ব্যক্তিমালিকানায় জমির দলিল সম্পন্নের নির্দেশ দিল, সেটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে একটি ছানি মামলা হয়েছে।

বিজেএমসির মুখ্য পরিচালন কর্মকর্তা নাসিমুল ইসলাম জানান, জমিটি জুট মিলস করপোরেশনের। কিন্তু বিআরএসমূলে জমির মালিক সরকার।

দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসাইন জানান, জমিটি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের গাফিলতির প্রমাণ পেয়েছি। আদালত থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে দলিল ও ডিক্রি বাতিলের জন্য। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জমির আমমোক্তারপ্রাপ্ত মিরাশ উদ্দিন সুমনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

Lading . . .