বাঁশ-নারিকেলের খোসায় কারুপণ্য বানান রিকশাচালক জাহাঙ্গীর
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
-68c6ef8745a54.jpg)
ময়মনসিংহে রিকশা চালিয়েও বাঁশ ও নারিকেলের খোসা দিয়ে বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের পণ্য তৈরি করে অনন্য রুচির পরিচয় দিয়েছেন রিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলম। রিকশা চালালেও হৃদয়ে লালন করেন শিল্প। তিনি নিত্য ব্যবহার্য জিনিস থেকে শো-পিস তৈরি করেন; যা দেখে সবার নজর কেড়েছে। দেশের বাইরেও রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কারুপণ্য তৈরি করছেন এই শিল্পী।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়নের মনতলা গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলম। ২০০৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর তিনি দিনমজুরির কাজ করতেন। এখন তিনি রিকশা চালান। অবসরে তৈরি করেন কারুপণ্য।
যেদিন বাড়িতে থাকেন সেদিন ব্যস্ত হয়ে পড়েন কারুণপণ্য তৈরিতে। নিজের বড় ভাইয়ের নির্মাণাধীন একটি ঘরেই আপাতত কারুপণ্যগুলো তৈরি করছেন।
প্রথমে শখের বসে বাঁশ দিয়ে পণ্য তৈরি করা শুরু করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে এসব কারুপণ্য তৈরি করছেন। তার এ শিল্পে সহযোগিতা করেন স্ত্রী জান্নাত আক্তার। নয় বছর ও দুই বছর বয়সী দুই কন্যা সন্তান নিয়ে এ দম্পতির সংসার।
রিকশাচালক জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে জানান, প্লাস্টিক পণ্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সেখান থেকেই আমি চিন্তা করি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরের জন্য কিছু পণ্য বানানোর।
যেমন- বাঁশ দিয়ে কলমদানি, ব্রাশ হোল্ডারসহ কিছু পণ্য তৈরি করে ঘরে রাখেন। এলাকাবাসী এসে এসব পণ্য আমার ঘরে দেখে তারা আমাকে জানান এ পণ্যগুলোর বাজারে অনেক চাহিদা আছে।
এখন রিকশা চালানোর পাশাপাশি বিক্রির জন্য পণ্যগুলো তৈরি করি। ইলেক্ট্রিক্যাল গ্যান্ডিং ড্রিল মেশিনের ব্যবহার করে এসব কারুপণ্য তৈরি করার পর রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে পরিষ্কার করে বিক্রির জন্য রাখা হয়।
এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের বাঁশের তৈরি মামপট, কলমদানি, ব্রাশ হোল্ডার, ফুলের টব, ওয়ালমেট, দেয়ালঘড়ি, কাপ, ল্যাম্প, চামচ, শো-পিস, চায়ের কেটলি, কলমদানি, পানির বোতল, ফুলদানি-কলমদানি, মগ, জগ, ট্রেসহ নানান শো-পিস। বর্তমানে ২৫ থেকে ৩০ ধরনের পণ্য তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, আমার কোনো পূর্বের অভিজ্ঞতা ছিল না। শখের বসে বাঁশ ও নারিকেলের খোসা দিয়ে বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের পণ্যগুলো তৈরি করে থাকি। আগে মুরড়ির খামারে কাজ করতাম।
এখন একদিন রিকশা চালাই আর একদিন ঘরে বসে না থেকে এ পণ্যগুলো তৈরি করে থাকি। সংসারে অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে পণ্যগুলো তৈরি করতে নানান সমস্যা হয়।
আমার যেহেতু এ কাজের পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা নাই, সেহেতু সরকার বা কোনো এনজিওতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হলে ভালো হয়। আর সরকার যদি অর্থনৈতিকভাবে আমাকে সাহায্য করেন আরও ভালো করে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করতে পারব। এসব কারুপণ্য নিয়ে আরও বহুদূর যাওয়ার স্বপ্ন রিকশাচালক জাহাঙ্গীরের।
জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জান্নাত আক্তার বলেন, আমার স্বামী প্রথমে নিজের শখের ও ঘরের প্রয়োজনে এ পণ্যগুলো তৈরি করত। এগুলো তখন আমার কাছে খুব বিরক্ত লাগত। মনে করতাম, এমনেই সংসারে অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে, এর মধ্যে বাঁশ কিনে এগুলো বানিয়ে টাকা নষ্ট করছে। পরে দেখি এগুলো মানুষ খুব ভালোভাবে গ্রহণ করছে। এখন আমিও তাকে কাজে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে পণ্যগুলো তৈরি করা হয়।
দেখতে খুব ভালোই লাগে। এ পণ্যগুলো পরিবেশবান্ধব। পণ্যগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে তেমন দাম পান না। তাই সুযোগ পেলে দেশের বাইরেও রপ্তানি করতে চান জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী জান্নাত আক্তার।
স্থানীয়রা জানান, আমাদের এলাকার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম। রিকশা চালায় আবার বাঁশ ও নারকেলের খোসা দিয়ে বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের পণ্য তৈরি করেন। নিজের চিন্তা দিয়ে এ শিল্পকর্ম তৈরি করেন। সরকারি সহায়তা পেলে এ শিল্প আরও বড় পরিসরে বিস্তৃত হতে পারে বলে মনে করেন এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন