নেত্রকোনায় তিন কিশোরীকে পাচারচেষ্টার অভিযোগ, চীনের নাগরিকসহ আটক ২
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এক চীনা নাগরিকসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। আজ সোমবার ভোরে পৌরসভার কমলপুর এলাকা থেকে পুলিশ তাঁদের আটক করে। এ সময় তিন কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।
আটক হওয়া চীনা নাগরিকের নাম লি ওই হাও (৩২)। আর তাঁর সহযোগী হলেন ফরিদুল ইসলাম (৩৪)। তিনি কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সুখদেব পশ্চিম পাড়া গ্রামের আবদুল হানিফ মিয়ার ছেলে। নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কেন্দুয়া পৌরসভার কমলপুর এলাকার ১৭ বছরের এক কিশোরীকে ১ সেপ্টেম্বর লি বিয়ে করেন। এতে সহযোগিতা করেন ফরিদুল ইসলাম। ওই কিশোরী রাজধানীতে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। কিশোরীকে ২০ সেপ্টেম্বর চীনে নিয়ে যাবেন বলে জানান লি ওই হাও। এ ছাড়া ওই কিশোরীর পরিবারকে এক লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। গতকাল রোববার কিশোরীকে নিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে লি কেন্দুয়ায় যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে সহযোগী ফরিদুল ইসলাম ছাড়াও জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার গোপী নদী এলাকার ১৭ বছরের এক কিশোরী ও কেন্দুয়া উপজেলার গগডা গ্রামের ১৯ বছরের এক তরুণী সেখানে যান। তাঁদের মধ্যে জামালপুরের ওই কিশোরীকে লি ওই হাওয়ের এক বন্ধু চীনা নাগরিক ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার একটি এলাকায় বিয়ে করেন। তাঁকেও চীনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বিয়ে করা হয়। কেন্দুয়ার গগডা এলাকার কিশোরীকেও চীনে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় লি ও ফরিদুল ইসলামের কথাবার্তা ও আচরণে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে সন্দেহ হলে পাসপোর্ট নম্বর ও বাংলাদেশে অবস্থানকালীন বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাওয়া হয়। কিন্তু তাঁরা দেখাতে ব্যর্থ হলে বিষয়টি মদন অস্থায়ী আর্মি ক্যাম্প ও কেন্দুয়া থানা-পুলিশকে জানানো হয়। পরে সেনাসদস্য ও পুলিশ এসে আজ ভোরে তাঁদের আটক করে। তাঁদের ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাসও জব্দ করা হয়। এ সময় তিন কিশোরীকে উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, লি ও ফরিদুল ইসলামকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ফরিদুল নিজেকে পোশাক কারখানার শ্রমিক পরিচয় দিলেও তাঁর মুঠোফোন ঘেঁটে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য কিশোরীর ছবি, ভোটার আইডি, পাসপোর্ট, অর্থ লেনদেনের তথ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলামত পাওয়া গেছে। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। চক্রটি দালালদের সহযোগিতায় মূলত গ্রামের সহজ-সরল ও দরিদ্র পরিবারের নারীদের নিশানা করে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে চীনে পাচার করার চেষ্টা করছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।