গতি, গ্ল্যামার আর উত্তেজনায় রোমাঞ্চকর ‘রাশ’
প্রকাশ: ৩০ জুন, ২০২৫

রন হাওয়ার্ডের সিনেমায় ১৯৭০-এর দশক ঘুরেফিরে আসে। আর ফর্মুলা ওয়ানে তো সত্তরের দশক ছিল গতি, গ্ল্যামার আর উন্মাদনার স্বর্ণযুগ। ব্যস, দুইয়ে মিলে গেলে আর কী লাগে! ‘অ্যাপোলো ১৩’, ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’, ‘দ্য ভিঞ্চি কোড’ বা ‘ফ্রস্ট/নিক্সন’-এর মতো অসাধারণ সব সিনেমার পরিচালক ২০১৩ সালে বানালেন ‘রাশ’, দুই রেসিং কিংবদন্তির চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতার গল্প নিয়ে।
একদিকে ব্রিটিশ প্লেবয় রেসার জেমস হান্ট (ক্রিস হেমসওয়ার্থ), অন্যদিকে ঠান্ডা মস্তিষ্কের অস্ট্রিয়ান নিকি লাউডা (ড্যানিয়েল ব্রুল)। রন হাওয়ার্ডের ‘রাশ’ এই দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর গল্পকে এতটা জীবন্ত করে তুলেছে যে দর্শকেরা ঘরে বসে থেকেও রেসিং ট্র্যাকে বসে থাকার অনুভূতি পাবেন!
হান্ট রীতিমতো পার্টি অ্যানিমেল, রিস্ক নেওয়ার রাজা, গানবাজনা, মদ, নারী—এসব ছাড়া তাঁর দিনই কাটে না!
অন্যদিকে লাউডা শান্ত, ধীরস্থির, হিসাবি ও প্রচণ্ড পরিশ্রমী, গাড়ির ইঞ্জিন নিয়ে গবেষণা করতে ভালোবাসেন। কিন্তু একটা জায়গায় তাঁদের দুজনের দারুণ মিল—নিজেদের প্রমাণ করার অদম্য ইচ্ছা আর একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জেদ। আর এ জেদই তাঁদের নিয়ে গিয়েছিল ফর্মুলা ওয়ানের শিখরে, কখনো কখনো ধ্বংসের কিনারে!
সিনেমার আসল মজাটা শুরু হয় যখন রেসিং দৃশ্যগুলো আসে। হাওয়ার্ড এত দারুণভাবে ক্যামেরা ব্যবহার করেছেন, দর্শকের মনে হবে যেন তিনি নিজেই ককপিটে বসে রেস করছেন! লো অ্যাঙ্গেল শট আর ফার্স্ট পারসন ভিউ দেবে গতির এক অন্য রকম অনুভূতি। তীক্ষ্ণ সাউন্ড ডিজাইন আর ক্যামেরার জাদুতে ট্র্যাকের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি ওভারটেক যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ১৯৭৬ মৌসুমের উত্তেজনাময় রেসগুলো এত জীবন্তভাবে দেখানো হয়েছে, যা দর্শকদের রোমাঞ্চিত করে তুলবেই! সঙ্গে হ্যান্স জিমারের অসাধারণ মিউজিক অ্যাকশন দৃশ্যগুলোকে আরও জমিয়ে দিয়েছে।
তবে ‘রাশ’ শুধু রেসিং অ্যাকশনের সিনেমা নয়। এটা দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর মানসিক লড়াইয়েরও গল্প। হাওয়ার্ড এর আগেও ‘অ্যাপোলো ১৩’, ‘আ বিউটিফুল মাইন্ড’ বা ‘সিন্ডারেলা ম্যান’-এর মতো সিনেমায় বাস্তব ঘটনাকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এ সিনেমায়ও তিনি সেই ধারা বজায় রেখেছেন।
পিটার মরগানের চিত্রনাট্য বেশ শক্তিশালী, ফলে হান্ট আর লাউডার সঙ্গে দর্শকও সহজে জড়িয়ে পড়েন। পরিচালক সিনেমায় কাউকে পুরোপুরি ভালো বা খারাপ দেখানোর চেষ্টা করেননি। ফলে সিনেমাটা দেখতে দেখতে একটা পর্যায়ে উপলব্ধি হবে, দুজনের এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা আসলে এক গভীর ভালোবাসার গল্প, যেখানে দুজনই একে অন্যকে আরও ভালো করার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। লাউডার মুখে একটা সংলাপও আছে এমন, ‘জ্ঞানীরা শত্রুর কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখতে পারে, যা একজন মূর্খ তার বন্ধুদের কাছ থেকেও শেখে না।’ শেষের দিকে লাউডা আবার বলেন, ‘সবাই সব সময় আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবত। কিন্তু সে (হান্ট) ছিল সেই অল্প কজনের একজন, যাকে আমি পছন্দ করতাম—আরও কম কজনের একজন, যাকে আমি সম্মান করতাম। আজও সে-ই একমাত্র মানুষ, যাকে আমি সত্যি ঈর্ষা করতাম।’
সিনেমার কাস্টিংও দুর্দান্ত। ক্রিস হেমসওয়ার্থ জেমস হান্টের চরিত্রে এককথায় ফাটিয়ে দিয়েছেন! থরের মতো সুপারহিরো রোল ছেড়ে তিনি এখানে একজন প্লেবয় রেসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যার মধ্যে টনি স্টার্কের মতো পার্টি করার মানসিকতা, নারীপ্রীতি আর দারুণ জনপ্রিয়তা—সবকিছুই আছে।
ড্যানিয়েল ব্রুলও নিকি লাউডার চরিত্রে অসাধারণ! ব্রুলের স্মরণীয় পারফরম্যান্স বলতে আগে শুধু ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস’ বা ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার’-এর কথা মনে হতো। তবে এ ছবিতে তিনি লাউডার ব্যক্তিত্ব আর তাঁর জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলো এতটাই দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, মন ছুঁয়ে যাবে। অলিভিয়া ওয়াইল্ডের চরিত্রটি ছোট হলেও তিনি ভালো কাজ করেছেন।
দর্শক হিসেবে যদি আপনি স্পিড, ড্রামা ও সত্যিকারের কিংবদন্তিদের গল্প পছন্দ করেন, তাহলে ‘রাশ’ আপনার জন্য। যেটা দেখা শেষ হলে ফর্মুলা ওয়ান নিয়ে আপনার আগ্রহ কিছুটা হলেও বেড়ে যাবে।
পরিচালক: রন হাওয়ার্ড
চিত্রনাট্য: পিটার মরগ্যান
মুক্তি: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩
রান টাইম: ১২৩ মিনিট
অভিনয়: ক্রিস হেমসওয়ার্থ, ড্যানিয়েল ব্রুল, অলিভিয়া ওয়াইল্ড, আলেক্সান্দ্রা মারিয়া লারা, পিয়েরে ফ্রান্সো
আইএমডিবি রেটিং: ৮.১ /১০