Advertisement

মাউশির নির্দেশ মানছেন না আ.লীগ পদধারী প্রধান শিক্ষক

যুগান্তর

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

24obnd

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় দীর্ঘ ২ বছর ধরে এক স্কুল পিয়নের বেতন-ভাতা অবৈধভাবে বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে। বেতন-ভাতা ছাড়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) নির্দেশ দিলেও তা মানছেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের সভাপতি। উলটো অভিযোগ করায় ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নিয়ে ওই কর্মচারীকে করা হয়েছে জিম্মি। এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করলেও উদ্ধার হয়নি ফাঁকা স্ট্যাম্পও। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে ভুক্তভোগীও। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারটি।

ঘটনাটি রৌমারীর যাদুরচর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন। তিনি প্রায় একযুগ ধরে যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক’ পদে রয়েছেন।

জানা যায়, ২০০৯ সালে বাবলু মিয়াকে ‘পিয়ন’ পদে নিয়োগ দেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন। সেই পদে এমপিও হয়ে বেতন ভাতা তুলছে বাবলু মিয়া। কিন্তু ২০১৪ সালের সরকারের এক পরিপত্রে ‘পিয়ন’ পদটির নাম পরিবর্তন করে ‘অফিস সহায়ক’ নামকরণ করে। আর এতেই ঘটে বিপত্তি। পরিপত্র অনুযায়ী, ‘অফিস সহায়ক’ পদটির দাবিদার বাবলু মিয়া। তবে সরকারের এই পরিপত্র মানতে নারাজ প্রধান শিক্ষক। অফিস সহায়ক পদে অবৈধভাবে নতুন লোক নিতে ২০২৩ সালে বিজ্ঞপ্তি দেন তিনি। এবং ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি পিয়ন পদে ইসরাফিল নামে একজনকে নিয়োগ দেন তিনি। নিজের পদ বাঁচাতে আদালতের দ্বারস্থ হন ভুক্তভোগী। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ওই কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ রাখেন প্রধান শিক্ষক।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিক্ষা অফিস, আদালতপাড়াসহ সর্বত্র দলীয় প্রভাব খাটাতেন প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন। তার রাজনৈতিক রোষানলে পিষ্ঠ ভুক্তভোগী বাবুল। অভিযোগ উঠেছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নিকটাত্মীয় জামায়াতের এক নেতাকে রক্ষাকবচ হিসাবে ব্যবহার করছেন তিনি। বন্ধ থাকা বেতন-ভাতা ছাড় দেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নির্দেশ দেয় মাউশি। দীর্ঘ ৮ মাস পার হলেও মাউশির এই নির্দেশ আমলে নেননি প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন ও সভাপতি ইউএনও উজ্জল কুমার হালদার।

উজ্জল কুমার হালদারের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনে ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র-জনতার ওপর গুলির নির্দেশদাতার তালিকায় নাম রয়েছে। পদ নিয়ে ২০২৩ সালে আদালতে মামলা হলে ২৮ আগস্ট বাবলু মিয়া রায় পান এবং ‘অফিস সহায়ক’ পদে নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ‘পিয়ন’ পদে নয় বাবলু মিয়াকে ‘ঝাড়ুদার’ পদে নিয়োগ দিয়েছেন মিস আপিলের আরজিতে এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি স্থগিতাদেশ নেন প্রধান শিক্ষক। ওই দিনই ওই আদেশের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করলে ২০২৫ সালের মার্চ মাসে পুনরায় রায় পান ভুক্তভোগী। আদালতে মামলা চলমান থাকলেও শিক্ষা অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে রাতারাতি ‘অফিস সহায়ক’ পদে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেন প্রধান শিক্ষক।

বাবলু মিয়া বলেন, মাউশির নির্দেশ বাস্তবায়নে ইউএনও উপস্থিত থাকবেন এমন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে গত ১২ এপ্রিল আমাকে স্কুলের অফিস কক্ষে ডেকে নেন প্রধান শিক্ষক। সেখানে নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০০ টাকার নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন প্রধান শিক্ষকসহ তার লোকজন। পরে এ নিয়ে ইউএনও’র কাছে লিখিত অভিযোগ দিলেও ফাঁকা স্ট্যাম্প এখনো ফেরত পাইনি।

তিনি আরও বলেন, মাউশিতে প্রধান শিক্ষকই আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছিলেন। সেখানে শুনানিতে আমি রায় পায়।

প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন বলেন, বাবলু মিয়া তার বেতন-ভাতা পেতে ডিজি’র (মহাপরিচালক) কাছ থেকে একটি চিঠি নিয়ে আসছে। কিন্তু হাইকোর্টে মামলা থাকায় বেতন দেওয়ার এখতিয়ার নাই। ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘পিয়ন’ বাবলু বেতনের জন্য ইউএনও’র কাছে গেলে তিনি মাহবুব আলমকে (প্রধান শিক্ষকের মামাতো ভাই, জামায়াত নেতা) দায়িত্ব দিয়ে স্কুলে পাঠান। সেখানে আরও অনেক লোক উপস্থিত ছিল। ইউএনও’র নির্দেশে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগ নেতা প্রধান শিক্ষকের পক্ষে সাফাই দিয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল কুমার হালদার বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বাবলু মিয়ার বেতন-ভাতা বন্ধ রয়েছে। স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি এবং সেটি ফেরত দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, বেতন-ভাতা বন্ধ থাকার বিষয়ে ১৬ জুলাই একটি লিখিত অভিযোগ হলেও আমি পেয়েছি ১০ আগস্ট। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Lading . . .