Advertisement

আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন, মুচির কাজ ছেড়ে স্কুলে ফিরল জয়বাবু

যুগান্তর

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

বাবা রুপলাল রবিদাসের স্বপ্ন ছিল তার ছেলে লেখাপড়া করে একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু মব সন্ত্রাসে বাবা রুপলাল রবিদাসের মৃত্যুর পর বাধ্য হয়ে পাঁচজনের সংসারের ভার কাঁধে নিতে বাবার পেশায় বসতে হয়েছিল ১৪ বছরের ৯ম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর জয়বাবু রবিদাসকে। তারাগঞ্জ বাজারের থানার মোড় এলাকায় রুপলাল যেখানে বসে জুতা সেলাইয়ের করে মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ ছয়জনের পেটে দু মুঠো হাত দিয়েছিলেন ঠিক সেখানে বসেই জয় লেখাপড়া ছেড়ে জুতা সেলাইয়ের কাজ করছিলেন।

তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে লেখাপড়া ছেড়ে জয়বাবু জুতা সেলাইয়ের কাজের খবর ও ছবি প্রকাশিত হওয়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দানশীল মানুষের সহযোগিতা পেয়ে আবারও স্কুলে ফিরেছে জয়বাবু। এখন জয়বাবু স্কুলে ফিরে বাবা রুপলালের স্বপ্ন পূরণ করতে বড় একজন আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

গত রোববার জয়বাবু ঘরে তুলে রাখা স্কুল ড্রেস পরে বইখাতা হাতে নিয়ে স্কুলে যায়। সে স্থানীয় তারাগঞ্জ সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগে পড়েন। জয়বাবুকে স্কুলে আবারও দেখতে পেয়ে তার সহপাঠীরা তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলেন।

কয়েকজন সহপাঠী জানান, জয়বাবুকে স্কুলে পেয়ে সত্যিই ভালো লাগছে। সে স্কুলে আসায় আমরা সবাই আনন্দিত। আমরা তাকে সুখে-দুখে যতটুকু পারি সহযোগিতা করব।

এ সময় জয়বাবু বলেন, আমার বাবা বলেছিলেন তোকে আমার মতো জুতা সেলাইয়ের কাজ করতে হবে না। তুই ভালো করে লেখাপড়া কর, একদিন প্রতিষ্ঠিত হবি। আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে একজন প্রতিষ্ঠিত আইজীবী হতে চাই। সবাই সহযোগিতা করলে আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব।

জয়ের মা মালতি রবিদাস বলেন, ‘ওর বাবা আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলো। শুধু বলতেন, খাই না খাই ছাওয়ালগুলাক লেখাপড়া করাইতে হবে। বড় মেয়ে নুপুর এইচএসসি পাশ করেছে, জয়বাবু নাইনে ও ছোট মেয়ে রুপা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। আমার একটাই চাওয়া ও ওর বাবার স্বপ্ন পূরণ করুক। জয় স্কুলে যাচ্ছে কিন্তু কাজ না করলে আমরা খাব কী? আপনারা একটু খোঁজ খবর নেন আমাদের।’

তারাগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু মুসা বলেন, জয় মেধাবী ছাত্র। এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার জন্য কোনো ফি তাকে দিতে হবে না। আমরা তাকে মানসিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে গত ৯ সেপ্টেম্বর জয়বাবু লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার জন্য মানবাধিকার সংস্থা নাগরিকের উদ্যোগে সেপ্টেম্বর-২০২৫ থেকে আগস্ট ২০২৬ পর্যন্ত প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করা হয়।

গত ৯ আগস্ট রুপলাল রবিদাস মেয়ের বিয়ের আশীর্বাদে যাওয়ার জন্য রংপুরের মিঠাপুকুর থেকে তারাগঞ্জে আসা ভাগনী জামাতা প্রদীপ রবিদাসকে রাত ৮টার দিকে উপজেলার কাজীরহাট থেকে নিয়ে বাড়িতে ফেরার সময় সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় গুপিটুনিতে নিহত হন।

চোর সন্দেহে মব সন্ত্রাসীরা তাদের পিটিয়ে হত্যা করে। রুপলাল রবিদাসের স্ত্রী অজ্ঞাত ৭০০ জনকে আসামি করে মামলা করলে পুলিশ ছয়জনকে গ্রেফতার করলেও অনেক আসামি এখনো পালাতক রয়েছেন।

তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক জানান, আসামিদের ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবেল রানা বলেন, রুপলালের স্ত্রীর জন্য বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেয়ের জন্য একটি চাকুরির ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও সন্তানরা যেন পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারে তা নিশ্চিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সরকারি যেকোনো সুবিধা পরিবারটিকে দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

Lading . . .