Advertisement

মায়ের কোল ফিরে পেল ৬০ হাজারে বিক্রি হওয়া শিশুটি

কালবেলা

প্রকাশ: ১ জুলাই, ২০২৫

৯ দিন পর মায়ের কোল ফিরে পেল বিক্রি হওয়া শিশুটি। ছবি : সংগৃহীত
৯ দিন পর মায়ের কোল ফিরে পেল বিক্রি হওয়া শিশুটি। ছবি : সংগৃহীত

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে মায়ের কোল ফিরে পেয়েছে দত্তক নেওয়ার নামে বিক্রি হওয়া শিশুটি। জন্মের ১০ মিনিটের মধ্যে দত্তক নেওয়ার কথা বলে মাত্র ৬০ হাজার টাকায় বাচ্চাটিকে বিক্রি করে দেয় দালাল চক্র। নবজাতক বিক্রির ৯ দিনের মাথায় ওই শিশুকে অবশেষে ফিরে পেয়েছেন গর্ভধারিণী মা।

সম্প্রতি বাচ্চা কেনা-বেচা দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে নবজাতক হারানো ভুক্তভোগী নারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ করে জানান, গত বছর স্বামীসহ তিন সন্তান রেখে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান তিনি। সেখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে কুমিল্লা জেলার এক প্রবাসীকে বিয়ে মাধ্যমে সংসার করে গর্ভবতী হন। বাচ্চা প্রসবের জন্য চলতি মাসের ১৩ জুন দেশে আসেন। গর্ভবতী হয়ে দেশে আসার পরে স্বামী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের তোপের মুখে পড়েন। এতে তিনি বাচ্চাটি দত্তক দেওয়ার মনস্থ করেন। গত ২১ তারিখে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে সিজার করে পুত্র সন্তান জন্ম দেন তিনি। বাচ্চা জন্মের ১০ মিনিটের মধ্যেই বাচ্চাটি দত্তক নেওয়ার কথা বলে নবজাতক শিশু বিক্রি চক্রের সদস্য আঞ্জু, সাবিনা, সুজন ও মানিক বাচ্চাটিকে ক্লিনিক থেকে নিয়ে যান। এরপর থেকে আর তিনি ওই শিশুটির কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না। পরে বিষয়টি স্থানীয় সাংবাদিকসহ স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের জানালে সাংবাদিকরা অনুসন্ধানে নামে। বিষয়টি দালাল চক্রের লোকজন টের পেয়ে আমার কাছ থেকে স্টাম্প লিখে নিয়ে বাচ্চাটিকে ফেরত দিয়ে দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নবজাতক শিশু কেনাবেচার সদস্য সাবিনা, আঞ্জু, সুজন ও মানিকসহ আরও অজ্ঞাত দুজন ব্যক্তি ওই নারীর বাচ্চাটি দত্তক দেওয়ার কথা বলে ৬০ হাজার ঢাকায় বসবাসরত বগুড়া জেলার একটি দম্পতির কাছে বিক্রি করেন।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী নাহিদ পারভিন রিপা জানান, এই চক্রটি মূলত অভাবগ্রস্ত পরিবার ও সচেতনতার অভাবকে কাজে লাগিয়ে শিশু পাচারের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি ও জনসচেতনতামূলক প্রচারণার অভাবে এসব অপকর্ম হচ্ছে। এই চক্রকে অবিলম্বে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে ভবিষ্যতে আমাদের জন্য আরও খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে।

পীরগঞ্জে রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, নবজাতক শিশু ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে অনুসন্ধান করাকালীন আমাকে একাধিক হুমকি দিয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) পীরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, এ রকম একটি চক্রের কথা অনেক দিন ধরে শুনে আসছি। তারা গোপনে নবজাতক শিশু বিক্রিসহ অবৈধ গর্ভপাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত রয়েছে। প্রশাসনের দ্রুত এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

পীরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের ক্রীড়া ও সাহিত্য সম্পাদক লিমন সরকার বলেন, বাচ্চাটি উদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করছিলাম। বিষয়টি দালাল চক্রের লোকজন টের পাওয়ার পর বাচ্চাটিকে তার মায়ের কাছে ফেরত দিতে যায় দালাল চক্রের লোকজন। এসময় আমরা কয়েকজন সাংবাদিক উপস্থিত হলে তারা সেখানে দ্রুত সটকে পড়ে এবং এ বিষয়ে লেখালেখি করলে আমাদের হাত-পা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেয় তারা।

শিশুটির খোঁজ জানতে দালাল চক্রের অন্যতম হোতা সাবিনা জানান, ওই গর্ভবতী নারীর সিজারের সময় আমি শুধু রক্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। বাচ্চাটিকে তার মা স্বেচ্ছায় একজনকে দত্তক দিয়েছে বলে শুনেছি। এর বেশি কিছু আমি জানি না। সাবিনার সঙ্গে একই সুর মিলান চক্রের আরেক সদস্য সুজন। তিনিও একই কথা বলেন।

নবজাতক শিশু বেচাকেনার মূলহোতা হিমালয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্মী আঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হন এবং বলেন, ‘আপনারা আমার কিছু করতে পারবেন না। আমার হাত অনেক বড়। যা কিছু বলার আদালত গিয়ে বলব।’

পীরগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি, শোনার পর বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে। তবে কেউ এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Lading . . .