Advertisement
  • হোম
  • ধর্ম
  • মহানবী (সা.) যেভাবে মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ

মহানবী (সা.) যেভাবে মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মহানবী (সা.) যেভাবে মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ
মহানবী (সা.) যেভাবে মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ

মুহাম্মদ (সা.) এমন একসময় পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন, যখন পৃথিবী ঐশী আলো ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। ফলে পার্থিব জীবনের সব আয়োজন বিদ্যমান থাকলেও সাম্য, মানবিকতা, মনুষ্যত্ব ও কল্যাণকামিতার মতো গুণাবলি হারিয়ে গিয়েছিল। মানুষরূপী মানুষ থাকলেও পৃথিবীতে মনুষ্যত্ব ছিল না, মানুষ মানুষের কাছে নিরাপদ ছিল না। ঐতিহাসিকরা এই সময়কে আইয়ামে জাহিলিয়্যাত বা অন্ধকার যুগ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

মহানবী (সা.) তখন মানবজাতির জন্য মহাত্রাতা হিসেবে আগমন করেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি শুধু রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

উল্লিখিত আয়াতের ব্যাখ্যায় আলেমরা বলেন, শুধু নবী হিসেবে মুহাম্মদ (সা.)-এর আগমনই নয়, বরং সত্ত্বাগতভাবে তিনি নিজেও বিশ্বজগতের জন্য রহমত ছিলেন।

রহমত শব্দের আভিধানিক অর্থ দয়া ও অনুগ্রহ।

পরিভাষায় রহমত বলা হয়, অন্যের প্রতি অন্তরের এমন মায়া, ভালোবাসা ও ভাব, যা অনুগ্রহ করতে উৎসাহিত করে। সুতরাং নবীজি (সা.)-এর রহমত হওয়ার অর্থ হলো বিশ্বজগতের প্রতি তাঁর কল্যাণকামিতা এবং সৃষ্টির প্রতি তাঁর দয়া ও মমতা। পাশাপাশি আয়াতের আরেকটি ব্যাখ্যা হলো, বিশ্বজগতের কল্যাণ সাধনের জন্য আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে প্রেরণ করে জগতের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন।

ওপরের আলোচনা থেকে জানা গেল, নবীজি (সা.) তাঁর জাত বা সত্ত্বা ও নবুয়ত উভয় বিচারে বিশ্বজগতের জন্য অনুগ্রহ ছিলেন।

মহানবী (সা.)-এর সত্ত্বাগত রহমত হওয়ার প্রমাণ মেলে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন ও আচরণ থেকে। তাহলো মানুষের প্রতি তাঁর মমতা, অসহায় ও দুর্বলদের সাহায্য করা, আত্মীয়তার সম্পর্ককে দৃঢ় করা, প্রতিবেশীর প্রতি সদাচার করা, স্ত্রী ও সহচরদের সঙ্গে কোমল আচরণ করা, আমানত রক্ষা করা ইত্যাদি। নবীজি (সা.) সত্ত্বাগতভাবেই এসব মানবিক গুণের অধিকারী ছিলেন। নবুয়ত লাভের আগেই সমাজের লোকেরা তাঁর এমন গুণাবলির সাক্ষ্য দিয়েছিল। যেমন—তিনি মক্কার লোকদের কাছে আল-আমিন (বিশ্বস্ত) ও সাদিক (সত্যবাদী) হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

তিনি সামাজিক অন্যায় প্রতিরোধ করতে হিলফুল ফুজুল নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখেন। নবুয়ত লাভের পর যখন নবীজি (সা.) ভয় পেয়েছিলেন, তখন খাদিজা (রা.) তাঁর এসব গুণের কথা উল্লেখ করে অভয় দেন। প্রথম ওহি নাজিলের পর তিনি খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রা.)-এর কাছে এসে বললেন, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো, আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত করো। তখন খাদিজা (রা.) ঘটনাবৃত্তান্ত জেনে বললেন, ‘আল্লাহর কসম, কখনোই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। আপনি তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায়-দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন। ’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩)

পবিত্র কোরআনেও নবীজি (সা.)-এর দয়া, মায়া ও কোমল হৃদয়ের প্রশংসা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলে; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে, তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

নবুয়ত লাভের পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দয়া ও অনুগ্রহের মাত্রা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ফলে তায়েফে তিনি রক্তাক্ত হওয়ার পরও তায়েফবাসীর সুপথপ্রাপ্তির দোয়া করেন এবং আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। একইভাবে যে মক্কাবাসী সীমাহীন জুলুম-অত্যাচার করে তাঁকে মাতৃভূমি ত্যাগে বাধ্য করেছে, মক্কা বিজয়ের পর তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়ে বলেন, আজ কোনো প্রতিশোধ নয়।

নবী হিসেবে মানবজাতির প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুগ্রহ অসংখ্য ও অগণিত। যার বিবরণ সংক্ষপ্তি এই লেখায় দেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর সমগ্র জীবন, তাঁর মহান আদর্শ ও শিক্ষাই সাক্ষ্য দেয় নবীজি (সা.) বিশ্বজগতের জন্য অনুগ্রহ ছিলেন। বিদায় হজের সময় দেওয়া তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ থেকে যার সামান্য ধারণা পাওয়া যায়। তিনি তাতে সব বৈষম্য বিলোপের ঘোষণা দিয়ে বলেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের রব একজন। তোমাদের আদি পিতা একজন। প্রত্যেকেই আদমের সন্তান। আর আদম মাটির তৈরি। আল্লাহ তাআলা পারস্পরিক পরিচিতির সুবিধার্থে বিভিন্ন সমাজ ও গোত্রে তোমাদের বিভক্ত করেছেন। আরবের ওপর যেমন অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই, তেমনি অনারবের ওপর কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই আরবের। একইভাবে শ্বেতাঙ্গের ওপর কৃষ্ণাঙ্গের আর কৃষ্ণাঙ্গের ওপর শ্বেতাঙ্গের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার একমাত্র ভিত্তি হলো তাকওয়া।

তিনি মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ঘোষণা করে বলেন, হে লোক সকল! তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্মান, তোমাদের সম্পদ পরস্পরের জন্য চিরতরে হারাম করা হলো যেমন আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহরে রক্তপাত করা হারাম বা নিষিদ্ধ। তিনি নিপীড়িত নারী সমাজকে মুক্তির আহবান জানিয়ে বলেন, হে মানবমণ্ডলী! নারীদের প্রতি নির্মম ব্যবহার করার সময় তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তোমরা তাদের আল্লাহর জমিনে গ্রহণ করেছ এবং তাঁরই কালেমার মাধ্যমে তাদের সঙ্গে তোমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জেনে রেখো, তাদের ওপর তোমাদের যেমন অধিকার আছে, তেমনি তোমাদের ওপর তাদেরও অধিকার রয়েছে। সুতরাং তাদের সার্বিক কল্যাণ সাধনের বিষয়ে তোমরা আমার অসিয়ত (অন্তিম উপদেশ) গ্রহণ করো।

দাস-দাসী ও অধীনদের ব্যাপারে বলেন, তোমরা তোমাদের অধীনদের সম্পর্কে সতর্ক হও। তারা তোমাদের ভাই। তোমরা নিজেরা যা খাও তা তাদের খাওয়াবে। তোমরা নিজেরা যা পরিধান করো তা তাদের পরিধান করাবে। তাদের ওপর সাধ্যাতিরিক্ত শ্রমের বোঝা চাপিয়ে দেবে না। যদি কোনো কারণে চাপিয়ে দিতে হয়, তবে তুমিও তাতে অংশীদার হও। মহানবী (সা.) আরো বলেন, সাবধান! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি ও সংঘাতের পথ বেছে নিয়ো না। এই বাড়াবাড়ির ফলেই অতীতে বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে।

এভাবেই মহানবী (সা.) মানবজাতির জন্য ত্রাণকর্তার ভূমিকায় আবির্ভূত হন এবং তিনি মানুষকে চির শান্তির পথ দেখিয়ে যান। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, তোমরা দিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

আল্লাহ সবাইকে মুহাম্মদ (সা.)-এর সত্যিকার অনুসারী হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

আরও পড়ুন

Lading . . .