Advertisement
  • হোম
  • ধর্ম
  • সন্তানকে কেন্দ্র করে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের...

সন্তানকে কেন্দ্র করে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের সীমারেখা কতটুকু?

যুগান্তর

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট, ২০২৫

সন্তানকে কেন্দ্র করে প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে ইসলামী নিয়মে যোগাযোগের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফাইল ছবি
সন্তানকে কেন্দ্র করে প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে ইসলামী নিয়মে যোগাযোগের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফাইল ছবি

তালাক। পবিত্র এক বন্ধনের সমাপ্তি। হৃদয় ভাঙার আর্তনাদ। কল্পনায় আঁকা রঙিন এক জীবনের মূলতবি। লাক দুটি প্রাণে সৃষ্টি করে গভীর শূন্যতা ও ক্ষত। জীবনে নেমে আসে অদ্ভুত এক শূন্যতা, নীরবতার।

তালাক মানে শুধু দুজনার আলাদা হয়ে যাওয়া নয়। বরং তালাক হলো সন্তানের সুখ শান্তি ও ভবিষ্যৎ বিনষ্টকারী এক নিষ্ঠুর প্রতিক্রিয়া। সন্তানের মিষ্টি হাসি কেড়ে নেওয়ার এক নির্মম অভিব্যক্তি। মায়ের কোলে সন্তানের আরামে ঘুমানোর অধিকার খর্ব করা।

বাবার সান্নিধ্য এবং সাহস হারিয়ে ছন্নছাড়া জীবনের পথচলা। তাই ক্ষেত্র বিশেষ তালাক বৈধ হলেও তা নিকৃষ্টতর কাজ। নবীজি বলেন- আল্লাহ তায়ালার কাছে বৈধ বিষয়ের মধ্য থেকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ হলো তালাক। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-২১৭৮)

বিচ্ছেদের পর স্বামী-স্ত্রী হয়তো বলে বেড়ায় তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই দূরত্ব তাদের কাঁদায়। তারা পরস্পর আবার একত্র হতে চায়। উভয়ের হৃদয়ে বাজে বেদনায় বীণ। অতীতের সুখ স্মৃতি স্মরণ করে উভয়ে বিষন্নতায় ভোগে।

সন্তান আল্লাহর এক পবিত্র নিয়ামত। কলিজাছেঁড়া ধন। তাই বিচ্ছেদের পরও সন্তানের প্রতি মা-বাবার টান শেষ হয় না। কিন্তু তালাকের পর সন্তানের মা বাবার পরস্পর দেখা সাক্ষাতের বৈধতা কতটুকু?

সন্তানকে কেন্দ্র করে প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে ইসলামী নিয়মে যোগাযোগের সীমা

ফতোয়ার কিতাব রদ্দুল মুহতারে বলা হয়েছে- তালাকের পর সাবেক স্ত্রী অন্য সব নারীর মতোই গায়রে মাহরাম হয়ে যায়। (রদ্দুল মুহতার-খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৪৫)

অর্থাৎ ইদ্দতের পর সাবেক স্ত্রী পরনারীর মতো। তখন প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে সবকিছুতেই পরনারীর মতো আচরণ করতে হবে।

বিচ্ছেদের পর সন্তান মায়ের কাছে থাকবে। কারণ সন্তানের মা প্রতিফলনের অধিক হকদার। নবীজি বলেন, অন্যত্র বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত সন্তান হেফাজতের অধিক হকদার হলো তার মা। (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস নং ২২৭৬)

মায়ের কাছে থাকা অবস্থায় সন্তানের সঙ্গে তার বাবা দেখা সাক্ষাত করতে পারবে। এক্ষেত্রে কিছু শর্ত এবং সীমাবদ্ধতা মানতে হবে।

ইবনে কুদামা রহ. বলেন, বাবা চাইলে সন্তানের মায়ের কাছে গিয়ে সন্তানকে দেখতে পারবে। দিনে বা রাতে সন্তানকে তার কাছে নিয়ে আসতে পারবে। শর্ত হলো, প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে নির্জনে যাওয়া যাবে না এবং সন্দেহ বা ফেতনায় পড়ার সুযোগ থাকা যাবে না। (আল মুগনি ৮/১৯৪)

প্রায় একই রকম কথা বর্ণিত হয়েছে ফতোয়ার অন্য কিতাবগুলোতে।

ফতোয়ায়ে আলমগীরী কিতাবের বক্তব্য হলো-

إذا كان الولد عند أمه فللأب أن يراه ويأخذه في وقت، لكن لا يجوز أن يخلو بطليقتها، لأن الخلوة بالأجنبية حرام.

যদি সন্তান মায়ের কাছে থাকে তবে বাবা তাকে দেখতে বা মাঝে মাঝে নিয়ে যেতে পারে। তবে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর সঙ্গে নির্জনে বসা জায়েজ নয়। কারণ গায়রে মাহরামের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো হারাম। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি-১/৫৪৬)

সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাতে গেলে প্রাক্তন স্ত্রীর সঙ্গে পর্দা ও শালীনতা রক্ষা করে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা যাবে। প্রয়োজনীয় কথা বলতে শুধু সন্তান সংক্রান্ত কথাবার্তা। কিন্তু এই সময় নারী পক্ষের কোনো পুরুষের উপস্থিতি জরুরি। কারণ এভাবে বারবার সাক্ষাৎ ফেতনা আশঙ্কা থেকে মুক্ত নয়।

নবীজি বলেন, কোনো পুরুষ যখন কোনো নারীর সঙ্গে একান্তে সাক্ষাৎ করে তখন তাদের দুজনের সঙ্গে তৃতীয়জন থাকে শয়তান। (সুনানে তিরমিযী, হাদিস: ২১৬৫)


অপর এক হাদিসে নবীজি ইরশাদ করেন- কোনো পুরুষ যেন কোনো নারীর সঙ্গে একান্তে না বসে, তবে তার সঙ্গে যদি মাহরাম থাকে তাতে সমস্যা নেই। (সহিহ বুখারি-৫২৩৩)

সন্তানের প্রয়োজনে প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে কথা বলতে হলে রসকসহীন এবং সংক্ষিপ্ত কথা বলবে। কথার মাঝে কোনরকম কোমলতা, মমতা বা মধুর টোন ব্যবহার করবে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন- তোমরা নারীরা কণ্ঠে নম্রতা দেখাবে না। কারণ যার অন্তরে রোগ আছে সে যেন লোভী না হয়ে। আর তোমরা সোজাসুজি কথা বলো। (সুরা আহযাব: আয়াত: ৩২)

সন্তানের প্রয়োজনে প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রীর সাক্ষাতের সময় চোখের হিফাযত এবং পর্দা রক্ষা করতে হবে।

কুরআনে আল্লাহ বলেন- তোমরা যখন নারীদের কাছে কোনো জিনিস চাইবে, তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। (সুরা আহযাব,আয়াত: ৫৩)

স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের কষ্ট একসময় ম্লান হয়ে যায়। তারা উভয়ই একদিন নতুন সংসারের ব্যস্ততায় স্বাভাবিক হয়ে যান। কিন্তু মাঝখানে পরাজিত হবে সন্তান।

স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদের অনলে সন্তানের শৈশব হবে বিপন্ন। কৈশোর হয় কলুষিত। সন্তানের চোখে জমে সাগর সমান অশ্রু। এমন বিষন্নতার অভিশাপ থেকে নিরাপদ থাকুক সকল সন্তানের শৈশব কৈশোর।জিদ, একগুঁয়েমি ও রাগের রোষানল থেকে বাঁচুক প্রতিটি সংসার।

লেখক: শিক্ষক, শেখ জনূরুদ্দীন রহ দারুল কুরআন চৌধুরীপাড়া মাদরাসা ঢাকা- ২২২৯

Lading . . .