Advertisement

রুমিন-ফজলুরকে নিয়ে বিপাকে বিএনপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট, ২০২৫

রুমিন-ফজলুরকে নিয়ে বিপাকে বিএনপি
রুমিন-ফজলুরকে নিয়ে বিপাকে বিএনপি

ঢাকা: সম্প্রতি দলের দুই নেতা ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এবং ফজলুর রহমানের একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য বিএনপিকে নতুন করে ভাবমূর্তি সংকটে ফেলেছে। ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বিএনপি যখন একটি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করছে, ঠিক সেই মুহূর্তে এই দুই নেতার কর্মকাণ্ড দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপি যখন প্রতিহিংসার রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে একটি নিয়মতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ধারার কথা বলছে, তখন এই দুই নেতার বিতর্কিত কার্যকলাপ দলের নতুন নীতির সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক হয়ে উঠছে। একদিকে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুল রহমানকে তার সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান বিরোধী বক্তব্যের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে দলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে হট্টগোল এবং ধাক্কাধাক্কির ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছেন। এই দুটি ঘটনা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এবং বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য একটি বড় পরীক্ষা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুল রহমান সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা দলটির অভ্যন্তরে ও বাইরে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। একটি টেলিভিশনের টক শোতে তিনি এই অভ্যুত্থানকে একটি 'ষড়যন্ত্র' হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং এর পেছনে 'কালো শক্তি' হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরকে দায়ী করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তার এই বক্তব্য গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে অপমান করার শামিল বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ এই অভ্যুত্থানে বিএনপির ৪৫০ জনের বেশি নেতাকর্মীসহ প্রায় দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন এবং ৩০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ফজলুল রহমানের ওই বক্তব্যের পর বিএনপি কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। ২৪ আগস্ট দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, "আপনি জুলাই-আগস্ট ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ক্রমাগত কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং আত্মদানকারী শহীদদের নিয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা সম্পূর্ণরূপে দলীয় আদর্শ ও গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। " তার বক্তব্যকে দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার 'সুপপরিকল্পিত চক্রান্তের প্রয়াস' বলেও উল্লেখ করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। ফজলুর রহমান নোটিশ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন যে তিনি নির্দিষ্ট সময় এর জবাব দেবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ফজলুর রহমানের এই বক্তব্য বিএনপির জন্য বহুমাত্রিক সংকট তৈরি করেছে। এই বক্তব্য দলের আনুষ্ঠানিক অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। বিএনপি যেখানে এই অভ্যুত্থানকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আন্দোলন হিসেবে দেখছে, সেখানে দলের একজন উপদেষ্টার মুখে 'ষড়যন্ত্র' তত্ত্ব দলটিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যখন বিভিন্ন ইসলামপন্থী ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে, তখন জামায়াতকে 'কালো শক্তি' বলে আক্রমণ করাটা জোটের রাজনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তার এই বক্তব্য আন্দোলনকারী তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে, যার প্রমাণ মেলে ২৫ আগস্ট তার বাসার সামনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ এবং তাকে গ্রেপ্তারের দাবি থেকে।

ফজলুর রহমানের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখলে তার এমন মন্তব্য অপ্রত্যাশিত নয় বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়েছিল আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের মাধ্যমে। তিনি ছাত্রলীগের সেক্রেটারি ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জ জেলার মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

পরবর্তী সময়ে ফজলুর রহমান কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগে যোগ দেন এবং দলটির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিকে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন এবং খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হন। বিএনপিতে যোগ দিলেও তার বিভিন্ন বক্তব্য প্রায়শই দলের মূলধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন সময় তার মন্তব্য দলের অভ্যন্তরে অস্বস্তির কারণ হয়েছে। এক বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব সরল লোক ছিলেন বলে (স্বাধীনতা বিরোধীদের) মাফ করে দিয়েছিলেন, নয়তো এদের অস্তিত্ব থাকত না। ’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অতীত এবং বাড়াবাড়ি রকমের মুজিবপ্রীতি তাকে বিএনপিতে সব সময়ই একটি বিতর্কিত অবস্থানে রেখেছে। এবারের মন্তব্যটি সেই বিতর্কের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে এবং দল মনে করছে তিনি সীমা লঙ্ঘন করেছেন।

বিএনপির আরেক আলোচিত নেতা, দলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) এক নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত এক শুনানিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহর সঙ্গে তার এবং তার সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কি, এমনকি কিল-ঘুষির ঘটনাও ঘটে। ঘটনাটি ঘটে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের উপস্থিতিতেই।

এনসিপি নেতা আতাউল্লাহর অভিযোগ, তিনি নিজের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে কথা বলতে গেলে রুমিন ফারহানা তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেন এবং তার 'সন্ত্রাসী বাহিনী' তার ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় তিনি নির্বাচন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন। আতাউল্লাহর অভিযোগপত্রে বলা হয়, ‘স্বৈরাচারী হাসিনার শাসনামলেও নির্বাচন কমিশনের সামনে কমিশনারদের সামনে কেউ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছে এমন নজির নেই। ’ এনসিপির নেতারা রুমিন ফারহানাকে ‘বিএনপির আওয়ামী লীগ বিষয়ক সম্পাদক’ বলেও কটাক্ষ করেছেন।

অন্যদিকে, রুমিন ফারহানার দাবি, তাকেই প্রথম ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাঞ্জাবি পরা একজন আমাকে ধাক্কা দিয়েছেন। তারপরে আমার লোক তো বসে থাকবে না। আমি তো একজন নারী। পরে যখন আমার লোকজনকে মারধর করেছে, আমার লোকজন জবাব দিয়েছে। এটা খুবই সাধারণ বিষয়। ’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনার প্রেক্ষাপট যা-ই হোক না কেন, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ভেতরে এমন সহিংস আচরণ বিএনপির ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি’ তৈরির চেষ্টাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

যখন বিএনপি একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন তাদেরই একজন নেত্রীর দ্বারা কমিশনের শুনানিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করাটা দলের অবস্থানকে দুর্বল করে দিয়েছে বলে তারা মনে করেন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যেই সংযম ও গণতান্ত্রিক আচরণের অভাব রয়েছে, যা ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন রাজনীতির চেতনার সঙ্গে বেমানান।

এর আগে ২০১৯ সালে বিএনপির মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই রুমিন ফারহানা সরকারের কাছে ১০ কাঠার একটি প্লট চেয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। যে সংসদকে তিনি এবং তার দল ‘অবৈধ’ বলে আখ্যায়িত করে আসছিলেন, সেই সংসদের সদস্য হিসেবে বিশেষ সুবিধা গ্রহণ করার এই আবেদনকে অনেকে তার নৈতিক অবস্থানের সঙ্গে দ্বিচারিতা হিসেবে দেখেছেন। সমালোচকরা বলেন, সরকারের কঠোর সমালোচক হয়ে সরকারের কাছ থেকেই বিশেষ সুবিধা চাওয়া তার রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যদিও তিনি পরবর্তীতে দাবি করেছিলেন, এটি সব সংসদ সদস্যের সাংবিধানিক অধিকার, কিন্তু এই ঘটনা তার ভাবমূর্তিতে একটি বড় দাগ ফেলেছিল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটি বড় অংশ মনে করে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান বিএনপির জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছরের দমন-পীড়ন এবং রাজনৈতিক ভুলের পর দলটি নতুন করে জনগণের আস্থা অর্জনের একটি মঞ্চ পেয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে বিএনপি ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির’ রাজনীতির ওপর জোর দিচ্ছে।

এর অংশ হিসেবে দলটি বিতর্কিত জোটের দায় থেকে মুক্তি, প্রতিহিংসার রাজনীতির পরিবর্তে জাতীয় ঐক্য এবং হরতাল-অবরোধের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির বদলে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের কথা বলছে। এমনকি আওয়ামী লীগ থেকে আসা ‘নির্মল ভাবমূর্তির’ ব্যক্তিদেরও দলে স্বাগত জানানোর কথা বলেছে বিএনপি। কিন্তু ফজলুর রহমান ও রুমিন ফারহানার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড এই ‘পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি’ প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক।

বিশ্লেষকদের মতে, ফজলুর রহমানের বক্তব্য বিএনপির অভ্যন্তরে বিভেদ এবং মিত্রদের সঙ্গে অবিশ্বাসের বার্তা দিচ্ছে। তার কথায় পুরোনো আওয়ামী লীগের প্রতি দুর্বলতা এবং গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ পায়, যা বিএনপির নতুন প্রজন্মের কর্মী ও সমর্থকদের হতাশ করছে।

অন্যদিকে, রুমিন ফারহানার আচরণে প্রকাশ পেয়েছে বলপ্রয়োগের রাজনীতি, যা বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে পরিহার করার চেষ্টা করছে। নির্বাচন কমিশনের মতো স্থানে এমন ঘটনা দলের আইন মেনে চলার মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড ভোটারদের কাছে এই বার্তা দিতে পারে যে, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে। এটি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণহীনতারও একটি চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফজলুর রহমানকে আমার একজন স্ট্যান্টবাজ বলে মনে হয়। যে ব্যক্তি আওয়ামী লীগ ও বাকশালের রাজনীতি করেছেন, তিনি ১৮০ ডিগ্রি উল্টে কীভাবে বিএনপি করেন? তার নীতির জায়গাতেই তো সমস্যা আছে বলে মনে করি। তিনি এখন বিএনপির বোঝায় পরিণত হয়েছেন, তাই তাকে শোকজ করাটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে রুমিন ফারহানা গতকাল ইসিতে যা ঘটিয়েছেন, এটা নতুন কিছু না। এর আগেও তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, তবে হাতাহাতির ঘটনা বোধহয় এটাই প্রথম। এটা কি তাদের রাজনৈতিক অপরিপক্কতা না কী, আমি বুঝলাম না! এতে প্রমাণ হয়, এরা কেউ বদলাননি। ’

বিএনপি যেহেতু পুরোনো রাজনীতির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার দাবি করছে, তাই দলের নতুন নীতি ও ভাবমূর্তি রক্ষায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে কঠোর হওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফজলুল রহমানকে শুধু কারণ দর্শানোর নোটিশের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, তার জবাব সন্তোষজনক না হলে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি বা বহিষ্কারের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে বলেও মত দিচ্ছেন কেউ কেউ। একইভাবে, রুমিন ফারহানার ঘটনার একটি নিরপেক্ষ দলীয় তদন্ত করে তার বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কর্মীদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে যে, দলের শৃঙ্খলা এবং নতুন রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে কেউ আপস করতে পারবে না।

দলের সব স্তরের নেতাদের, বিশেষ করে যারা অন্য দল থেকে এসেছেন বা যারা গণমাধ্যমে বেশি কথা বলেন, তাদের জন্য দলীয় নীতির বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশিকা থাকা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা। ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং বিএনপির কৌশলগত অবস্থান সম্পর্কে তাদের পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।

ফজলুল রহমান এবং রুমিন ফারহানার ঘটনা দুটি বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় নয়, বরং এসব বিএনপির জন্য একটি গভীর আত্মোপলব্ধির সুযোগ বলে মত দিচ্ছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। দলটি কি সত্যিই অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি পরিচ্ছন্ন ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, নাকি পুরনো বিতর্ক এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার মধ্যেই ঘুরপাক খাবে—এই প্রশ্ন এখন সামনে চলে এসেছে। এই দুই নেতার বিষয়ে বিএনপির নেওয়া সিদ্ধান্তই বলে দেবে ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ কোন দিকে যাবে। তাদের কর্মকাণ্ড যদি দলের নতুন নীতির পরিপন্থী হয়, তবে সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন অধিকাংশ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক। তাদের মতে, একটি শক্তিশালী ও ইতিবাচক রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকতে হলে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা এবং একটি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখার কোনো বিকল্প নেই।

এসবিডব্লিউ/এজে

Lading . . .