Advertisement
  • হোম
  • ধর্ম
  • জান্নাত লাভের সহজ আমল ‘তাহিয়্যাতুল অজু’

জান্নাত লাভের সহজ আমল ‘তাহিয়্যাতুল অজু’

জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

জান্নাত লাভের সহজ আমল ‘তাহিয়্যাতুল অজু’
জান্নাত লাভের সহজ আমল ‘তাহিয়্যাতুল অজু’

‘তাহিয়্যাতুল অজু’ হলো অজু করার পর দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা। নামাজের নিষিদ্ধ ও মাকরুহ সময় ছাড়া যে কোনো সময় অজু করার পর এ নামাজ আদায় করা যায়।

তাহিয়্যাতুল অজু অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল। বেশ কিছু হাদিসে এই নফল নামাজের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। এখানে আমরা কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি:

উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে মুসলমান সুন্দরভাবে অজু করে তারপর দাঁড়িয়ে মনোযোগের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম: ২৩৪)

ওসমান ইবনে আফফানের (রা.) আজাদকৃত গোলাম হুমরান থেকে বর্ণিত একদিন ওসমান (রা.) অজুর পানি চাইলেন। এরপর তিনি অজু করতে শুরু করলেন। তিনি তিনবার হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন, কুলি করলেন এবং নাক ঝাড়লেন। তিনবার তার মুখমন্ডল ধুলেন। ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। বাম হাত একইভাবে ধুলেন। মাথা মাসাহ করলেন। তার ডান ও বাম পা টাখনু পর্যন্ত ধুলেন। তারপর তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার এ অজুর মত অজু করতে দেখেছি। অজু শেষে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যাক্তি আমার এ অজুর মত অজু করবে এবং দাঁড়িয়ে একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে, নামাজে অন্তরে নিজের সঙ্গে অন্য কোনো কথা বলবে না, ওই ব্যাক্তির পুর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (সহিহ বুখারি: ১৬০, সহিহ মুসলিম: ২২৬)

আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদিন ফজরের সময় বেলালকে বললেন, হে বেলাল! ইসলাম গ্রহণ করার পর তুমি এমন কী আমল করেছ যে কারণে তুমি অনেক সাওয়াব লাভ করার আশা করতে পার। আমি (স্বপ্নে) জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার শব্দ শুনতে পেয়েছি। বেলাল (রা.) বললেন, আমি তো অনেক আশা করার মতো কোনো আমল করিনি। তবে রাতে বা দিনে যখনই আমি অজু করি, সে অজু দিয়ে যতটুকু পারি নামাজ আদায় করি। (সহিহ বুখারি: ১১৪৯, সহিহ মুসলিম: ২৪৫৮)

তাহিয়্যাতুল অজু আদায়ের পদ্ধতি অন্যান্য নফল নামাজের মতোই। অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করে নামাজ শুরু করবেন। নিয়ত আরবিতে করার প্রয়োজন নেই, কোনো দোয়া পড়ারও প্রয়োজন নেই। সুন্নত অনুসরণ করে উত্তমরূপে অজু করার পর নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে মনে মনে বলবেন, ‘দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল অজু আদায় করছি’। তারপর তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে মাধ্যমে নামাজ শুরু করবেন।

অন্যান্য নফল নামাজের মতো সুরা ফাতেহা পড়বেন, সুরা মেলাবেন, রুকু ও সিজদা আদায় করবেন, তারপর দাঁড়িয়ে আবার সুরা ফাতেহা পড়বেন, সুরা মেলাবেন, রুকু ও সিজদা করবেন, তারপর শেষ বৈঠক করে সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন।

যে সময় নামাজ নিষিদ্ধ অথবা নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ, সে সময় অজু করলেও তাহিয়্যাতুল অজু আদায় করবেন না।

তিন সময়ে যে কোনো নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ:

ফজরের নামাজের সময় থাকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। সূর্যোদয় যখন শুরু হয়, তখন থেকে সূর্য পুরোপুরি উঠে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নফল নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ। ওলামায়ে কেরামের মতে এ সময়ের ব্যাপ্তি ১০ মিনিট। আবহাওয়া অফিস থেকে সূর্যোদয়ের যে সময় জানানো হয়, তার ১০ মিনিট পর পর্যন্ত নামাজ আদায় নিষিদ্ধ থাকবে। সূর্যোদয়ের সময় ৫টা হলে নামাজ নিষিদ্ধ থাকবে ৫টা থেকে ৫টা ১০ মিনিট পর্যন্ত। এ সময় ওই দিনের ফজরের ফরজ আদায় করলেও তা শুদ্ধ হবে না।

দুপুরে সূর্য যখন ঠিক মধ্যাকাশে থাকে, তখন নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ। আলেমদের মতে এ সময়ের ব্যাপ্তি ৬ মিনিট; সূর্য মধ্যাকাশে আসার আগে তিন মিনিট এবং পরে তিন মিনিট।

সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে ডুবতে শুরু করে সেই সময় থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সব ধরনের নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ। এ সময়ে শুরু হয় সূর্যাস্তের ১০ মিনিট আগে থেকে। অর্থাৎ আবহাওয়া অফিস থেকে সূর্যাস্তের যে সময় জানা যায়, তার ১০ মিনিট আগে থেকে নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ হবে। সূর্যস্তের সময় ৬টা হলে নামাজ নিষিদ্ধ হবে ৫টা ৫১ মিনিট থেকে ৬টা পর্যন্ত।

আসরের নামাজ এ সময়ের আগেই পড়ে নেওয়া কর্তব্য। কেউ যদি কোনো কারণে ঠিক সময়ে আসরের নামাজ পড়তে না পারে, তাহলে সূর্য ডুবন্ত অবস্থায়ও ওই দিনের আসরের নামাজ পড়ে নেওয়া যাবে।

এ ছাড়া আরও দুই সময়ে নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ:

সূর্য পুরোপুরি উদিত হওয়ার পরও পুরোপুরি উজ্জ্বল হওয়ার আগ পর্যন্ত নফল নামাজ আদায় করা মাকরুহ।

আসরের নামাজ আদায়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোনো নফল নামাজ আদায় করা নিষিদ্ধ। তবে এ সময় কাজা নামাজ আদায় করা যায়।

এ পাঁচ সময়ে অজু করলে তাহিয়্যাতুল অজু আদায় করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

Lading . . .