তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষ জাহান্নামে যাবে কেন?
প্রকাশ: ১৬ জুলাই, ২০২৫

প্রশ্ন: আল্লাহ কি মানুষের ভাগ্যকে নির্ধারণ করে দিয়েছেন? যদি নির্ধারণ করে দেন তাহলে ভাগ্য কি পরিবর্তন করা যাবে না? যে সব মানুষ জাহান্নামে যাবে সেটা কি নির্ধারণ করে দেওয়া?
উত্তর: ভাগ্য বা তাকদির দুই প্রকার। যথা- ১. তাকদিরে মুবরাম; অর্থাৎ চুড়ান্ত, স্থির, অপরিবর্তনযোগ্য তাকদির। এ প্রকার তাকদিরে কোনো রকম পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হয় না।
২-তাকদিরে মুআল্লাক; অর্থাৎ ঝুলন্ত বা পরিবর্তনযোগ্য তাকদির। এ প্রকার তাকদিরে পরিবর্তন অথবা সংযোজন বা বিয়োজন হতে পারে।
এ প্রকার তাকদিরকে আল্লাহ তাআলা অন্য কাজের সাথে সম্পৃক্ত করে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখেন। যেমন- অমুক কাজটি না হলে এ কাজটি বাস্তবায়ন হবে না।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, লতিফ যদি পিতামাতার সেবাযত্ন করে, তবে জীবন দীর্ঘ ও সুখকর হবে। যদি সেবাযত্ন না করে, তাহলে দীর্ঘ হবে না, সুখকর হবে না।
বস্তুত তাকদিরে মুবরাম এবং তাকদিরে মুআল্লাক অর্থাৎ চূড়ান্ত ও ঝুলন্ত তাকদির কেবল বান্দার ইলম ও অনুভুতি হিসেবে। কিন্তু আল্লাহ তায়ালার ইলম ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী ঝুলন্ত বলে কিছুই নেই, বরং সবই মুবরাম।
কেননা, যেকোনো কাজ বা বিষয়ের শেষ ও চূড়ান্ত ফলাফল আল্লাহপাক অনাদিকাল হতেই অবগত আছেন।
এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আল্লাহ যা ইচ্ছে তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছে তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন। আর তারই কাছে আছে উম্মুল কিতাব। (সূরা আর রা’দ ৩৯)
এই আয়াতের তাফসীরে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা তার কিতাব (লাওহে মাহফুজে লিখিত তাকদির) থেকে যা ইচ্ছে তা মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছে তা প্রতিষ্ঠিত রাখেন। তবে উম্মুল কিতাব তথা মূল কিতাব ছাড়া; ওখান থেকে কোনো কিছু পরিবর্তন করা হয় না। (তাফসিরে বগবি, সংশ্লিষ্ট আয়াত)
ইমাম ইবনু কাসির রহ. বলেন, এ সবই আল্লাহর পূর্ণ জ্ঞানের প্রমাণ যে, তিনি সবকিছু হওয়ার আগেই তা জানেন। আর তিনি সেটা নির্ধারণ করেছেন এবং লিখে রেখেছেন। সুতরাং বান্দারা যা করবে, কিভাবে করবে: সেটা তার জ্ঞানে পূর্ব থেকেই বিদ্যমান। সৃষ্টির আগেই জানেন যে, এ সৃষ্টি তার ইচ্ছা অনুসারে আমার আনুগত্য করবে, আর এ সৃষ্টি তার ইচ্ছা অনুসারে আমার অবাধ্য হবে। আর তিনি সেটা লিখে রেখেছেন এবং জ্ঞানে সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন। এজন্যই তিনি বলেছেন, এ সবই লিপিতে (রেকর্ডে) আছে, এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ। (তাফসিরে ইবন কাসির ১০/১১৫)
সুতরাং বোঝা গেল, যারা জাহান্নামে যাবে তাদের কথাও আল্লাহ পূর্ব থেকেই অবগত আছেন। আর তিনি সেটাই লিখে রেখেছেন।
তবে এর অর্থ এই নয় যে, এই লিখে রাখার কারণে আল্লাহ বান্দাকে জান্নাত কিংবা জাহান্নামে যেতে বাধ্য করেন। বরং মানুষকে শাস্তি দেওয়া হয় আল্লাহপ্রদত্ত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সঠিক পথে চালানোর জন্য হিদায়াত বা দিকনির্দেশনা আসার পরেও তা ভুল পথে ব্যবহার করার কারণেই।
যেমন, একজন শিক্ষক তার কোনো ছাত্র সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হওয়ার কারণে পরীক্ষার আগে এই মন্তব্য করল যে, অমুক ছাত্র পাশ করবে কিংবা ফেল করবে। তারপর দেখা গেল, শিক্ষকের মন্তব্য সঠিক হয়েছে এবং ওই ছাত্র পরীক্ষায় বাস্তবেই পাশ করেছে কিংবা ফেল করেছে।
তাহলে বলা বাহুল্য যে, যদি ওই ছাত্র ফেল করে তাহলে এর জন্য শিক্ষককে দোষী সাব্যস্ত করা হয় না। বরং তখন ছাত্রের পড়া-লেখার প্রতি অবহেলা ও অমনোযোগিতাকেই দায়ী করা হয়।
এক্ষেত্রে পার্থক্য কেবল এতটুকু যে, মানুষের জ্ঞানের পরিধি সীমিত তাই কোনো বিষয়ে তার আগাম মন্তব্য বা বক্তব্য অনুমাননির্ভর, যা বাস্তবে সঠিক হতে পারে, ভুলও হতে পারে। পক্ষান্তরে আল্লাহ তায়ালার জ্ঞান অসীম এবং পরিপূর্ণ। তাই তার আগাম বক্তব্য ভুল হওয়ার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই।
আরও পড়ুন