পেনাল্টিতে ‘আপত্তি’ আর্জেন্টিনার, তিক্ত অভিজ্ঞতা ব্রাজিলের
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

শেষটা সুখকর হলো না ফুটবলের দুই পরাশক্তির। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে নিজেদের শেষ ম্যাচে গতকাল হার দেখে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিরতির আগেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন এদিনের আর্জেন্টাইন অধিনায়ক নিকোলাস ওতামেন্দি। পরে পেনাল্টিতে এক গোল খেয়ে তা আর শোধ দিতে পারেনি লিওনেল মেসিহীন আলবিসেলেস্তেরা। পেনাল্টির সিদ্ধান্তে ম্যাচের পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন আর্জেন্টিনা গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। অন্য ম্যাচে ১-০ গোলে বলিভিয়ার কাছে হেরে বাছাইপর্ব শেষ করে ব্রাজিল। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে সেলেসাওদের ইতিহাসে এবারের পারফরম্যান্সই সবচেয়ে বাজে।
আর্জেন্টিনার ম্যাচে ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি) দেখে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজালে, ধারাভাষ্যকার তখনই বলেন যে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। হলোও তাই। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ইকুয়েডর রাইটব্যাক অ্যাঞ্জেলো প্রিসিয়াদোকে থামাতে ছুটে যান নিকোলাস তাগলিয়াফিকো। দু’জনই লাফিয়ে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে, তাগলিয়াফিকোর কনুইয়ের সঙ্গে প্রিসিয়াদো মুখে আঘাত পেয়ে মাটিতে পড়ে যান। তবে ভিডিও রিপ্লে দেখে মনে হয়নি ঘটনাটি ইচ্ছাকৃত ছিল। ম্যাচের পর মিক্সড জোনে মার্টিনেজ বলেন, ‘পেনাল্টিটা অন্যায্য। (ওতামেন্দির) লাল কার্ড হতে পারে, তবে পেনাল্টি নিয়ে বিতর্ক আছে, যেটি তাগলিয়াফিকোর বিপক্ষে যায়। এটি ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ঘরের বাইরে রেফারিরা আমাদের জন্য সবকিছু কঠিন করে তোলেন।’
সবশেষ ঘরের মাঠের ভেনেজুয়েলা ম্যাচের একাদশে পাঁচটি পরিবর্তন আনেন আর্জেন্টাইন বস। হয়তো এতো পরিবর্তনের জন্য বেশিরভাগ সময়েই ভুগতে হয় তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের। পুরো ম্যাচে ৫৮ শতাংশ বল নিজেদের পায়ে রাখা আর্জেন্টিনার গোলের দিকে ৮টি শটের মধ্যে সবগুলোই লক্ষ্যভ্রষ্ট। মেসির অবর্তমানে আর্মব্যান্ড পড়েন ওতামেন্দি। ৩১তম মিনিটে স্বাগতিকদের এনের ভ্যালেন্সিয়াকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। বারবার ফাউলের কারণে বিঘ্নিত হয় খেলা। তেমনই এক ফাউলের কারণে পক্ষে ভিএআর মনিটরে দেখে ইকুয়েডরের পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। যোগ করা ১৩তম মিনিটে সফল স্পটকিকে দলকে এগিয়ে নেন ভ্যালেন্সিয়া। ২০০৯ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বলিভিয়ায় ৬-১ গোলে হারের সেই বিপর্যয়ের পর, এবারই প্রথম কোনো ম্যাচে লাল কার্ডের সঙ্গে পেনাল্টি হজম করল আর্জেন্টিনা। বিরতির পর মাঠে ফিরে ১০ জনে পরিণত হয় স্বাগতিকরাও। দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ময়জেস। শেষপর্যন্ত, ১-০ গোলেই জয় নিশ্চিত করে ইকুয়েডর। তবে বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে চিন্তা নেই আর্জেন্টিনার, মূলপর্বের টিকিট মেলে আগেই। ১৮ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্টে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের শীর্ষে থেকেই বাছাইপর্ব শেষ করে আর্জেন্টাইনরা।
নিজেদের ম্যাচে বলিভিয়ার মাঠ এল আলতো স্টেডিয়ামে খেলে ব্রাজিল। প্রতিপক্ষের জন্য এই মাঠ যেন আতঙ্কের নাম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪ হাজার ১৫০ উঁচুতে অবস্থিত স্টেডিয়ামটি। এখানে ১-০ গোলের হারে তালিকার পাঁচে থেকে বাছাইপর্ব শেষ করে সেলেসাওরা। ব্রাজিলের সংগ্রহ ১৮ ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট, যেখানে সাফল্যের হার ৫১ শতাংশ। এটি তাদের বাছাইয়ের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। ৫৫.৬ শতাংশ সাফল্য ছিল ২০০২ বিশ্বকাপের আগে। যদিও সেবার নিজেদের পঞ্চম ও
শেষ শিরোপা জেতে সেলেসাওরা। আগের ফরম্যাট অনুযায়ী পঞ্চম স্থানে থেকে প্লে-অফ খেলতে হতো ব্রাজিলকে। তবে নতুন নিয়মে শীর্ষ ৬ দলের মধ্যে কার্লো আনচেলোত্তির ছেলেরা মূলপর্বের টিকিট পায় আগেই।
চিলির ম্যাচ থেকে বেশ কয়েকজনকে এদিন বিশ্রামে রাখেন কার্লো আনচেলোত্তি। এর প্রভাব দেখা গেছে মাঠে, আর উচ্চতাজনিত সমস্যা তো আছেই। আর্জেন্টিনার মতো এদিন ব্রাজিলও প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে গোল হজম করে পেনাল্টি থেকে। বলিভিয়ার একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন মিগুয়েল তেরসেরোস।
আরও পড়ুন