প্রকাশ: ২৮ জুলাই, ২০২৫

এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)’র বহুল প্রত্যাশিত বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২৪শে জুলাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে এই সভার ওপর অনিশ্চয়তার কালো মেঘ আরও ঘনীভূত হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)-এর অনুপস্থিতি। শুধু ভারত নয়, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানসহ আরও কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিদের সরাসরি অনুপস্থিতি এবং আসন্ন এশিয়া কাপের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি করেছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেও, পর্দার আড়ালে তাদের কিছুটা দো-টানা কাজ করছে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই টানাপোড়েনে আগামী ১০ই সেপ্টেম্বর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপের যে আয়োজন হওয়ার কথা, সেটি থেকে ভারত সরে আসতে পারে। এই আসরের আয়োজকরাই যদি অংশ না নেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপ হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ভারতের এক সংবাদকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন- এই শঙ্কার কথা। সূত্রটি জানায়, ‘ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে বাংলাদেশে এসিসি’র সভার আয়োজন হচ্ছে। এটির প্রভাব পড়বে বেশ বড় ভাবে। শেষপর্যন্ত আয়োজনই হবে না এশিয়া কাপ। ভারতকে ছাড়া এই আসর সম্ভব নয়।’ আরেকটি গুঞ্জন আছে, ভারত হয়তো শেষ পর্যন্ত এশিয়া কাপের বিকল্প ভাবতে পারে। বিসিসিআই সম্ভবত সেই সময়ে একটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারে। আর শেষ পর্যন্ত যদি এশিয়াকাপ হয়ও ভেন্যু পরিবর্তন হয়ে তা আয়োজন হতে পারে শ্রীলঙ্কায়! অন্যদিকে, প্রশ্ন উঠেছে টেস্ট খেলুড়ে দল ভারত, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান ছাড়া এসিসি’র সভা আয়োজন সম্ভব কিনা তা নিয়েও। এসিসি’র সংবিধান অনুযায়ী, কোরামের জন্য পাঁচটি পূর্ণ সদস্য (টেস্ট খেলুড়ে) দেশের মধ্যে অন্তত তিনটির উপস্থিতি প্রয়োজন: ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান। যদি ভারত, শ্রীলঙ্কা (অনলাইন উপস্থিতি সত্ত্বেও সরাসরি অনুপস্থিতি) এবং আফগানিস্তান (যার উপস্থিতি নিশ্চিত নয়) এই সভা বর্জন করে, তাহলে কোরাম পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে, যা সভার বৈধতাকেও চ্যালেঞ্জ করবে।
বিসিসিআই’র অনড় অবস্থান ও বিসিবি’র ব্যাখ্যা
বিসিসিআই’র অনড় অবস্থানের মূল কারণ হলো- সভার ভেন্যু পরিবর্তন না করা। তারা নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং বাংলাদেশ-ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক টানাপোড়েনকে কারণ হিসেবে দেখাচ্ছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, যদি এসিসি’র সভা শেষ পর্যন্ত ঢাকাতেই হয়, তাহলে ভারত ১০ থেকে ২৮শে সেপ্টেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপও বর্জন করতে পারে। এই বর্জন কেবল এশিয়া কাপের আয়োজনকেই অনিশ্চিত করবে না, বরং আঞ্চলিক ক্রিকেটে ভারতের প্রভাব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলবে। অন্যদিকে, ঢাকায় এসিসি’র এই এজিএম আয়োজন নিয়ে ভারতের নেতিবাচক অবস্থানে বিসিবি’র মনোভাব কী, তা জানতে চাওয়া হলে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল দেশের একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানান- এসিসি’র বার্ষিক সভা এসিসিরই একটি ‘প্রোগ্রাম’, এবং বিসিবি কেবল স্বাগতিক হিসেবে এটি আয়োজন করছে। তিনি বলেন, ‘এসিসি’র পক্ষ থেকে আমাদের অনুরোধ করা হয়েছে এজিএমটি ঢাকায় আয়োজন করতে। স্বাগতিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব এসিসি’র পরামর্শে বৈঠকটি সুন্দরভাবে আয়োজন করা এর বেশি কিছু নয়। এসিসি যদি এখনো বলে বৈঠকটি বাংলাদেশে না করে অন্য কোনো দেশে করবে, তাতেও আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। বিসিবি এখানে কোনো পক্ষ নয়।’ এছাড়া, বিসিবি সভাপতি নিশ্চিত করেছেন যে, এরই মধ্যে ১৬-১৭টি সদস্যদেশের প্রতিনিধি ঢাকায় অনুষ্ঠেয় এজিএম-এ যোগ দেয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছেন এবং তাদের অন-অ্যারাইভাল ভিসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। অন্যান্য আয়োজনও চূড়ান্ত। যদিও তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি যে, আফগানিস্তান এই ১৬-১৭টি দেশের মধ্যে আছে কিনা, তবে জানিয়েছেন- শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের প্রধান শাম্মি সিলভা অসুস্থতার কারণে হয়তো ঢাকায় আসবেন না, তবে তিনি অনলাইনে সভায় অংশ নিতে পারেন।
এই পরিস্থিতি কেবল আসন্ন এশিয়া কাপের ভাগ্যকেই অনিশ্চিত করছে না, বরং আঞ্চলিক ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ সহযোগিতা ও সমন্বয়কেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। বিসিবি একদিকে স্বাগতিক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করছে, অন্যদিকে বিসিসিআই’র অসন্তোষ এড়ানোর এক নীরব চেষ্টাও তাদের মধ্যে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে এসিসি’র পরবর্তী পদক্ষেপ কী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
আরও পড়ুন