টানা চার শিরোপার চেয়েও এবার তৃতীয় হওয়াকে এগিয়ে রাখছেন গুয়ার্দিওলা
প্রকাশ: ১৬ জুন, ২০২৫

টানা চার মৌসুম পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা হাতছাড়া হওয়া। লিগ শেষের অনেক আগেই লড়াই থেকে ছিটকে পড়া। ২০১৭ সালের পর প্রথমবার ট্রফিবিহীন মৌসুম। মোটা দাগে ম্যানচেষ্টার সিটির জন্য মৌসুমটি ছিল ব্যর্থ। তবে সাফল্য-ব্যর্থতার প্রচলিত সেই মানদণ্ডকে পাত্তা দিচ্ছেন না পেপ গুয়ার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটির কোচের কাছে, সাফল্যময় অনেক মৌসুমের চেয়ে এগিয়ে এবারের মৌসুম।
লিগ শিরোপ ধরে রাখতে না পারার যে যন্ত্রণা, ট্রফির প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার যে বেদনা, তাতে প্রবলভাবেই পুড়ছেন গুয়ার্দিওলা। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এমন অভিজ্ঞতাই তিনি চাইছিলেন।
“যখন আমরা জিততে পারছি না, তখন আমি ভুগতে চাই। বাজে অনুভূতির মধ্য দিয়ে যেতে চাই। ঘুমটা যেন খারাপ হয়। খারাপ পরিস্থিতি যখন আসে, তখন যেন সেটা আমার ওপর প্রভাব ফেলে… আমি চাই তা।”
“আমি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ… খাবারের স্বাদ জঘন্য লাগছে আমার… খুব বেশি খেতেও চাই না, কারণ সেই রাগটা জিইয়ে রাখতে চাই। এখন যদি এসব না হয়, তাহলে আর কখন হবে? জয় কিংবা পরাজয়, যেটা হোক… আমরা তো এই পৃথিবীতে আছি ভিন্ন অভিজ্ঞতার জন্য, একেক সময় একেক মেজাজে থাকার জন্য।”
প্রিমিয়ার লিগে এবার রানার্স আপও হতে পারেনি ম্যানচেস্টার সিটি। শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ১৩ পয়েন্ট পেছনে থেকে তারা হয়েছে তৃতীয়। তবে একটা পর্যায়ে পয়েন্ট তালিকায় তাদের অবস্থান ছিল আরও নিচে। এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়াও একসময় ছিল ভীষণ শঙ্কায়।
সেখান থেকে লড়াই করে যেভাবে তৃতীয় হয়েছে দল, সেটিই ট্রফির চেয়ে বেশি তৃপ্তি এনে দিয়েছে গুয়ার্দিওলাকে।
“আপনারা সুখ বিচার করেন জয় দিয়ে। একের পর এক জয় দিয়ে সাফল্য বিচার করেন। সেখানেই সমস্যা। বাজে মৌসুম বা ভালো মৌসুম দিয়ে আমি আমাকে বা আমার দলকে বিচার করব না। এই মৌসুমে তৃতীয় হওয়া, হাল না ছেড়ে দেওয়া, নইলে তো আমরা দশম বা দ্বাদশ হয়ে লিগ শেষ করতাম, এটা হয়তো টানা চার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের চেয়েও ভালো।”

“আমরা অনেক কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছি এবার। সেটির তীব্রতা বেড়ে গেছে চোটের কারণে, হালকা ভাবে নেওয়া, আমিও যথেষ্ট ভালো ছিলাম না… অনেক কারণেই হয়েছে। তবে আমার সময়ের বিশ্লেষণ করলে হয়তো এই মৌসুমটিই ছিল আগেরগুলোর চেয়ে ভালো। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নিয়েছি আমরা, যেখানে ছিটকে পড়ার দুয়ারে ছিলাম।”
৫৪ বছর বয়সী কোচ জানালেন, জয়ী দলের চেয়ে পরাজিত দলের সংবাদ সম্মেলন, সাক্ষাৎকার দেখতেই তিনি বেশি পছন্দ করেন। সাফল্যের সংজ্ঞাও তার কাছে ভিন্ন।
“সাফল্য হলো, পতন হওয়ার পর কতবার আপনি উঠে দাঁড়াতে পারলেন। পতন হলো, ঘুরে দাঁড়াও, আবার পতন হলো, উঠে দাঁড়াও। এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।”
“জয়ীরা তো একঘেঁয়ে। পরাজিতদের দেখাটা দারুণ। সেখান থেকেই সত্যিকার অর্থে শেখা যায়।”
ফুটবল ইতিহাসের সেরা কোচদের একজন মনে করা হয় গুয়ার্দিওলাকে। স্পেন, জার্মানি ও ইংল্যান্ড মিলিয়ে ১২টি লিগ শিরোপা জিতেছেন তিনি। তিন লিগেই টানা সবচেয়ে বেশি জয়ের রেকর্ড তার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন তিনবার। দুটি ভিন্ন ক্লাবের হয়ে ট্রেবল জয়ী মাত্র দুই কোচের একজন তিনি। আরও কত ট্রফি, দলীয় ও ব্যক্তিগত অর্জন-রেকর্ডের ইয়ত্তা নেই।
তার পরও নিজেকে বিশেষ কেউ মনে করেন না তিনি। তার ভাবনা ও দর্শন ভিন্ন।
“অনেক অনেক শিরোপা জিতেছি বলে কি নিজেকে স্পেশাল মনে হয় আমার? মোটেও না! ভুলে যান ওসব। যে ডাক্তার জীবন বাঁচায়, সে স্পেশাল। যারা পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছে, তারা জিনিয়াস। আমি? জিনিয়াস? কাম অন…!”
“বিনয়ী হওয়ার ভান ধরতে চাই না। অবশ্যই আমি ভালো। অনেক বছর ধরেই প্রমাণ করেছি, আমি ভালো… তবে যে সাফল্য আমি পেয়েছি, আমাকে সেজন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল। সময় আমি পক্ষে পেয়েছি, কখনও লিওনেল মেসিকে, কখনও অন্যদেরকে… এই জায়গাগুলোয় থাকতে অসাধারণ দল গড়েছি… কিন্তু অন্য কোনো কোচ সঠিক সময়ে যদি একই জায়গায় থাকত, হয়তো একইরকম করতে পারত।”
ফুটবল কোচ হিসেবে নিত্যদিনের যে চাপ, প্রত্যাশার বিষম ভার, এসব তিনি উপভোগই করেন।
“চাপ তো সবসময়ই থাকবে, কারণ প্রতিটি দিনই আমাদেরকে বিচার করা হচ্ছে। তবে দায়িত্বটিই এমন। কেউ আমার মাথায় বন্দুক ধরে কাজটি করাচ্ছে না। নিজেই বেছে নিয়েছি….।”
“ফুটবলে এমন কেউ নেই যে সবসময় জিততেই থাকে, কারণ এটা স্রেফ অসম্ভব। আমাদের সঙ্গে এটা হয়েছে এই মৌসুমে… মেনে নিতে হবে, উন্নতি করতে হবে, শিখতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য ভালো শিক্ষা হবে।”
আরও পড়ুন