Advertisement

জাদুকাটার ১১০ কোটি টাকার বালি পাথর সরানোর আয়োজন

যুগান্তর

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

তিন দফা স্থগিতের পর কৌশল পালটে এবার ঢাকায় নিলাম হয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সীমান্ত নদী জাদুকাটার লুট হওয়া ১১০ কোটি টাকার বালি পাথর। মঙ্গলবার বিকালে বাংলাদেশ খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) সভা কক্ষে অতি গোপনে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কিন্তু মঙ্গলবারের নিলাম সম্পন্নের তথ্য জানালেও নিলামে কতজন অংশ নেন, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে কত টাকায়? কে পেয়েছেন? সেসব তথ্য মঙ্গলবার সন্ধ্যা অবধি জানাতে পারেননি তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। ইউএনও মেহেদী হাসান মানিক জানান, সহকারী কমিশনার ভূমি নিলামসংক্রান্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিএমডির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

তাহিরপুরের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহরুখ আলম শান্তনু বলেন, আমি নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে বিএমডির নিলাম ডাকে যুক্ত হই, নিলাম ডাক শেষ হয়েছে তবে বিস্তারিত বিএমডির লোকজন বলতে পারবেন।

মঙ্গলবার নিলাম আহ্বানকারী খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর (বিএমডি) সহকারী পরিচালক আজিজুল ইসলামের কাছে নিলামসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করা হয়। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠানো হয়। কিন্তু তাতে তিনি সাড়া দেননি।

সরেজমিন জানা গেছে, ঢাকায় বিএমডির ওই পাতানো নিলামের আড়ালে এ সিন্ডিকেটের মূল হোতা যুক্তরাজ্যে পলাতক সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য রণজিত চন্দ্র সরকারের ঘনিষ্ঠ সহচর আওয়ামী লীগ নেতা মোতালেব ওরফে ‘পাথ্থর মোতালেব’। তাহিরপুরের জাদুকাটা নদী তীরবর্তী ছড়ার পাড় গ্রামের মহর আলীর ছেলে তিনি।

উচ্চ আদালত ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার সুযোগ নিয়ে বিএমডি কিছু কর্মকর্তা, জেলা, উপজেলা, পুলিশের কিছু অসৎ অফিসার এ দুর্নীতির মহোৎসবে জড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন তাহিরপুরের জাদুকাটা নদী তীরবর্তী এলাকায় খনিজ বালি, পাথর, সিঙ্গেল, বোল্ডার, নুড়ি পাথর স্তূপ করে রাখতে দেখা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৪৩১ বাংলা সনের জাদুকাটা নদীর বালিমহাল-১, ২ ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর ওই বালিমহাল দুটির ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। গেল কয়েক বছর জাদুকাটা নদীতে পৃথকভাবে খনিজ পাথর মহাল ইজারা দেওয়া হয়নি। আর এ সুযোগ কাজে লাগান আওয়ামী লীগ নেতা পাথ্থর মোতালেব।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এক সময় টং দোকানে পান বিক্রি করে সংসার চালাতেন মোতালেব। পরে বালি-পাথরের অবৈধ বাণিজ্যে যুক্ত হয়ে এখন প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মালিক।

প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তার মদদে ড্রেজার, বোমা, সেইভ মেশিনে জাদুকাটায় অবৈধ কোয়ারি খনন করে নদীর তীর গ্রামের আশপাশে সরকারি খাস ভূমি থেকে, ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ১১০ কোটি টাকার খনিজ বালি, পাথর সিঙ্গেল বোল্ডার উত্তোলন করে মজুত করা হয়।

স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে পড়ে মোতালেব চক্র ৩ আগস্ট ১০ হাজার ৭৪৩ ঘনফুট পাথর জব্দ দেখিয়ে বিএমডির উপপরিচালক (বদলিকৃত) মো. মামুনুর রশীদকে দিয়ে নিলামের আয়োজন করান। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসনের হলরুমে গেল ৭ আগস্ট তৃতীয় দফায় ওই নিলামের আয়োজনের পর সমালোচনার মুখে ওই দিনের নিলাম স্থগিত হয়।

তবে মঙ্গলবার ঢাকায় খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর সভাকক্ষে সেই নিলাম সম্পন্ন হয় অতি গোপনে। নিলাম অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণকারীরা নিলাম ডাকে অংশ নেন। মোতালেবের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে জাদুকাটা বোল্ডার পাথর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দাবি করে চাঁদা তোলা, বালি-পাথর সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নন বলে দাবি করেন। নিজ বাড়িতে পাথর বোল্ডার ও পাথর ভাঙার মেশিন নেই বলেও দাবি করেন তিনি। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, জাদুকাটা নদীর পূর্ব তীরে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত সব বালি পাথর জব্দ করতে তাহিরপুরের ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Lading . . .