Advertisement

শিক্ষার্থীদের জন্য স্মার্ট কার্ড চালু করা দরকার

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২ জুন, ২০২৫

সুমাইয়া তাবাসসুম
সুমাইয়া তাবাসসুম

একজন ছাত্রী হিসেবে আমি শুধু পড়তেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসিনি, একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে উঠতে এসেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রতিদিন আমার চিন্তা করতে হয় যে পরের দিন কী খাব, কীভাবে অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করব, সেগুলো নিয়ে। শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ বাড়িয়ে শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীদের অর্থসহায়তা ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

উন্নত বিশ্বের তুলনায় গবেষণা খাতে আমরা যোজন যোজন পিছিয়ে রয়েছি। উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সঙ্গে গবেষণাকাজে যুক্ত হন। আমাদের সেই সুযোগ হয় না। কারণ, এ বাবদ তহবিল বা অর্থায়নের সংকট। পর্যাপ্ত অর্থায়ন পেলে দেশেই অনেকে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ নেবেন। প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব স্তরে শিক্ষাবৃত্তি বাড়ানো দরকার। যেমন, বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষার্থীকে বছরে ছয় হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হয়। প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে পান এসব শিক্ষার্থী। এই অর্থ দিয়ে এক সপ্তাহের খাবার ব্যয়ই পূরণ হয় না।

বর্তমানে শুধু বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়ার সুবিধা রয়েছে। দেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এ ধরনের সুবিধা আরও কিছু ক্ষেত্রে দেওয়া প্রয়োজন। আমার প্রস্তাব হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদি স্মার্ট কার্ড করা যেতে পারে। এই কার্ড দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ওষুধ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সেবা সাশ্রয়ী মূল্যে (ভর্তুকি) নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগ হলের অবস্থা মানসম্মত নয়। হলগুলো উন্নত করা প্রয়োজন। শুধু অবকাঠামো নয়, হলে খাবারের মান, ইন্টারনেটসহ অন্যান্য সেবাও উন্নত করা দরকার। দেশে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব বেশি কাজ করা হয় না। অথচ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার মনে হয় শিক্ষা খাতের বাজেটেও এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকা উচিত। আমাদের শিক্ষাপদ্ধতি খুব বেশি কর্মসংস্থান সহায়ক নয়। চীন, জাপানের মতো দেশ কারিগরি বা ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়। আমাদেরও এ-সংক্রান্ত নীতিকাঠামো তৈরি করা দরকার।

জুলাই আন্দোলনটা হয়েছে মূলত বৈষম্য সামনে রেখে। ফলে এই বাজেট যেন আবার বৈষম্য বাড়িয়ে না দেয়, সেটি মনে রাখা জরুরি। এ জন্য শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। জুলাই-পরবর্তী সময়ের এই বাজেটে যেন একটা সরকারি দলিল হয়ে থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই আন্দোলন সরকার কাঠামোর কাছে অনেক প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিল। এই বাজেটে যেন সেসব প্রশ্নের উত্তর থাকে। ভবিষ্যতে আবার যেন শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে রাস্তায় নামতে না হয়।

সুমাইয়া তাবাসসুম , শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Lading . . .