Advertisement

গুচির বিক্রি কমেছে ২৫ শতাংশ, ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব

প্রথম আলো

প্রকাশ: ২২ আগস্ট, ২০২৫

গুচ্চির বিক্রি কমেছে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে। ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব আছে বলে মনে করছে তারা। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের একটি বিক্রয়কেন্দ্রেছবি: রয়টার্স
গুচ্চির বিক্রি কমেছে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে। ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব আছে বলে মনে করছে তারা। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের একটি বিক্রয়কেন্দ্রেছবি: রয়টার্স

বিশ্বখ্যাত বিলাসপণ্য ব্র্যান্ড গুচির মূল প্রতিষ্ঠান কেরিং বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে আশঙ্কার চেয়েও খারাপ ফল করেছে। প্রতিষ্ঠানটি গভীর সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতির জন্য তারা চলমান ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথাও তুলে ধরেছে।

এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে কেরিংয়ের বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৭০ কোটি ইউরোতে। যদিও বিশ্লেষক সংস্থা এলএসইজি অনুমান করেছিল, এ সময় বিক্রি হবে প্রায় ৩৯৬ কোটি ইউরোর।

কেরিংয়ের মোট আয়ের প্রায় অর্ধেকই আসে গুচি থেকে। কিন্তু এই সময়ে গুচির বিক্রি ২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৪৬ কোটি ইউরোতে।

প্রধান নির্বাহী ফ্রাঁসোয়া-অঁরি পিনো স্বীকার করেছেন, এই ফল হতাশাজনক। তাঁর দাবি, বিলাসবহুল এই গ্রুপকে ঘুরে দাঁড় করাতে প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে। পিনো আরও বলেন, ‘আমরা যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করছি, তা আমাদের সম্ভাবনার তুলনায় এখনো অনেক কম। তবে গত দুই বছরের পরিশ্রম ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছে।’

কেরিং আরও জানিয়েছে, অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও তারা দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক প্রবৃদ্ধির কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। কেরিং শুধু গুচি নয়, সেন্ট লরঁ, বোত্তেগা ভেনেতাসহ একাধিক নামকরা ব্র্যান্ডের মালিক। তবে এবার বিক্রি কমেছে সব বাজারেই। সবচেয়ে বড় ধাক্কা এসেছে জাপান ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে।

থার্ড ব্রিজের বিশ্লেষক ইয়ানমেই ট্যাং বলেন, কেরিং কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। কারণ, তাদের দুই প্রধান বিলাসবাজার চীন ও যুক্তরাষ্ট্র এখন চাপের মধ্যে।

নতুন নেতৃত্বে নজর

বেচাকেনা টানা দুর্বল থাকায় বিনিয়োগকারীরা প্রশ্ন তুলছেন, কেরিং আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না। এর প্রভাব পড়েছে কোম্পানির শেয়ারমূল্যে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারমূল্য কমেছে ৮ শতাংশ।

এ অবস্থায় জুন মাসে নতুন গ্রুপ সিইও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় গাড়িশিল্পের অভিজ্ঞ নির্বাহী লুকা দে মেওকে। তিনি আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব নেবেন।

ইউরোপীয় বিলাসপণ্য গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বারক্লেসের প্রধান ক্যারোল মাদজো সিএনবিসিকে বলেন, ব্যবসা পুনর্গঠন ও ব্র্যান্ড গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দে মেওয়ের ইতিবাচক রেকর্ড আছে।

তবে মেওয়ের সামনে কঠিন পথ। যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের আশঙ্কা আছে। সঙ্গে আছে ভোক্তা ব্যয় কমে যাওয়ার শঙ্কা, বিশেষ করে চীনা বাজারে।

কেরিংয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা আর্মেল পুলু মঙ্গলবার বলেন, ১৫ শতাংশ শুল্ক তাদের ধারণার মধ্যেই ছিল। মূল্য সমন্বয়ের মাধ্যমে তা সামাল দেওয়া সম্ভব। দ্বিতীয় প্রান্তিকেই কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।

পুলু বলেন, শরৎকালে দ্বিতীয় দফায় দাম বাড়ানোর কথাও ভাবা যেতে পারে। তবে সেটি করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে, ভোক্তাদের মনোভাব মাথায় রেখে।

ভাবমূর্তি ফেরানো বড় চ্যালেঞ্জ

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, কেরিংয়ের সামনে শুল্ক নয়, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ব্র্যান্ডের আকর্ষণ ও ভাবমূর্তি ফেরানো। এর মধ্যে গুচিকে নতুনভাবে দাঁড় করানোর দায়িত্ব পেয়েছেন নতুন শিল্পনির্দেশক দেমনা গভাসালিয়া।

কেরিংয়ের ডেপুটি সিইও ও ব্র্যান্ড উন্নয়ন প্রধান ফ্রানচেস্কা বেলেত্তিনি জানান, দেমনার হাত ধরে গুচির নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রথম ঝলক দেখা যাবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। পূর্ণাঙ্গ মজুত আসবে ২০২৬ সালের শুরুতে।

বিশ্লেষক ইয়ানমেই ট্যাং বলেন, কেরিংয়ের জন্য পণ্যের চেয়ে এখন বড় সমস্যা হলো শুল্ক। হার্মেসের মতো ব্র্যান্ড দাম বাড়িয়েও চাহিদা ধরে রাখতে পারে, কিন্তু গুচি বা সেন্ট লরঁর এখন সেই ক্ষমতা নেই।

বারক্লেসের মাদজো মনে করেন, নতুনত্ব আনতে পারলেই গুচির পক্ষে আবার শীর্ষে ওঠা সম্ভব। অভিনব পণ্য নিয়ে আসতে তাদের, অর্থাৎ যে ধরনের পণ্য আগে দেখা যায়নি, সে রকম কিছু আনতে হবে।

Lading . . .