চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষার্থীর অনশন চলছে
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগসহ সাত দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অনশন চলছে। গতকাল বুধবার দুপুরে প্রক্টর কার্যালয়ের সামনে এ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলছে। অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২১ ঘণ্টা পার হলেও কোনো খোঁজ নেয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এ কর্মসূচি হচ্ছে। এতে এখন পর্যন্ত ৯ শিক্ষার্থী যুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল দুপুর ১২টায় আটজন এবং বেলা তিনটার দিকে একজন অনশন শুরু করেন। তাঁরা হলেন বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ওমর সমুদ্র, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সংগঠক ধ্রুব বড়ুয়া, শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর জশদ জাকির, সাংগঠনিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা, রাজনৈতিক শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আহমেদ মুগ্ধ, দপ্তর সম্পাদক নাইম শাহজাহান, নারী অঙ্গনের সংগঠক ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের সংগঠক ঈশা দে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (ইউপিডিএফ–সমর্থিত) সাধারণ সম্পাদক সুদর্শন চাকমা। এর মধ্যে জশদ জাকির বেলা তিনটার দিকে যুক্ত হয়েছেন।
প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ ছাড়া বাকি দাবির মধ্যে আছে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে আহত শিক্ষার্থীদের মানসম্মত চিকিৎসার নিশ্চয়তা, ক্যাম্পাসে নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা, হামলার ভিডিও প্রকাশকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রকৃত অপরাধীদের বিচার, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমন্বয় কমিটি গঠন ও সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন।
অনশনে থাকা রাম্রা সাইন মারমা বলেন, ‘অনশনের ২১ ঘণ্টায়ও সাড়া না দিয়ে প্রশাসন নির্লিপ্ততার প্রমাণ দিয়েছে। আমরা যৌক্তিক সাত দফা দাবি দিয়েছি। এই প্রক্টরিয়াল বডি দায়িত্ব নেওয়ার পর একাধিক গুপ্ত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপর নারী শিক্ষার্থীদেরও হেনস্তা করা হয়েছে। সম্প্রতি সংঘর্ষের ঘটনায়ও প্রশাসন চরম ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছে।’
অনশনে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী নাইম শাহ জান বলেন, প্রশাসন তাদের রাজনৈতিক সহযোগীদের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচারসহ নানা কৌশলে মনোবল ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে। সাত দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কোনোভাবেই সরবেন না।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন। সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক কোরবান আলী প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
পরে অধ্যাপক মো. কোরবান আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই ব্যাপারে মন্তব্য একটাই—চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ বিঘ্ন করার অপচেষ্টা যাঁরা করেন, তাঁরা শিক্ষার্থীদের সমর্থন কখনোই পাবেন না। আর কোনো কথা নেই।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গত ৩০ ও ৩১ আগস্ট কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০০ শিক্ষার্থী আহত হন। সংঘর্ষের পর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগ দাবি করে ‘অধিকার সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’। এ নিয়ে ৪ সেপ্টেম্বর তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেদিন রাতে তাঁরা মশালমিছিল করেন। মশালমিছিল শেষে প্রক্টর অফিসে লাল রং ছিটিয়ে প্রক্টরিয়াল বডির পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন শিক্ষার্থীরা।