Advertisement

চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা চান ব্যবসায়ীরা

যুগান্তর

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

24obnd

চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচনে স্বচ্ছ ভোটার তালিকা চান ব্যবসায়ীরা। আগে যেখানে ১৩ হাজার ভোটার ছিল সেখানে খসড়া তালিকায় ভোটার করা হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ জনকে। সদস্যপদ নবায়নে অতিরিক্ত ফি নির্ধারণ, নবায়নের জন্য পর্যাপ্ত সময় না দেওয়াসহ নানা কারণে অনেক ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই তালিকায় ভোট হলে ব্যবসায়ীদের মতামতের যেমন প্রতিফলন ঘটবে না তেমনি অনেক ব্যবসায়ী তাদের নেতৃত্ব নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সাধারণ ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে নতুন প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই বছর পরপর চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন হওয়ার কথা। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের ১৬ বছরই চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচন হয়নি। ইলেকশনের পরিবর্তে সিলেকশনের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচন করে নিজেরাই বোর্ড গঠন করে চেম্বার পরিচালনা করে আসছেন। আওয়ামী লীগের লোকজন নিজেরাই সিন্ডিকেট করে পছন্দের লোকজনের কাছে পদ ভাগাভাগি করে বোর্ড গঠন করেছেন।

সূত্র জানায়, বিগত প্রায় ২০ বছর ধরে চট্টগ্রাম চেম্বারের নিয়ন্ত্রণ ছিল বন্দর-পতেঙ্গা আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি এমএ লতিফের হাতে। তিনি চেম্বারের প্রেসিডেন্ট ছিলেন একাধিকবার।

সর্বশেষ তিনি ২০১৪ সালে তিনি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমকে চেম্বারের প্রেসিডেন্ট করা হয়। তার পরে চেম্বারের প্রেসিডেন্ট করা হয় খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলমকে। তিনিও এমএ লতিফের ঘনিষ্ঠ এবং আওয়ামী লীগ দলীয় ব্যবসায়ী ছিলেন।

ফেডারেশন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চট্টগ্রাম চেম্বারের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। সর্বশেষ চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রেসিডেন্ট করা হয় এমএ লতিফের ছেলে ওমর হাজ্জাজকে। বয়সে একেবারেই তরুণ এই ব্যবসায়ীকেও সিলেকশনের মাধ্যমে প্রথমে পরিচালক পরে বোর্ডের প্রেসিডেন্ট করা হয়।

২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগ যেভাবে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে নানা কায়দায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখে ঠিক এইকইভাবে চট্টগ্রাম চেম্বারও কুক্ষিগত ছিল গত ১৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে।

সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, নির্বাচন না হওয়ার কারণে তারা পছন্দের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারেননি। ব্যবসায়ীদের দাবি-দাওয়াও চেম্বার নেতারা পূরণ করতে পারেননি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থেই তারা চেম্বারকে ব্যবহার করেছেন। এ অবস্থায় সরকার পতনের পর সাধারণ ব্যবসায়ীদের দাবি ও চাপের মুখে ওমর হাজ্জাজের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালনা বোর্ড পদত্যাগে বাধ্য হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চেম্বার পরিচালনার জন্য নিয়োগ করেন প্রশাসক। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ারা পাশাকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়।

সদস্যপদ যাচাই-বাছাই, নবায়ন, নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করাসহ নানা কার্যক্রম শেষে তিনি আগামী ২ নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ শিডিউল ঘোষণা করেন।

কিন্তু সাধারণ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদের মতামত নিয়ে সদস্যপদ যাচাই-বাছাই ও নবায়নসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ৯০ থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত পরিষদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা ছিল নতুন প্রশাসকের কিন্তু তিনি তা না করা দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে প্রশাসক হিসেবে থেকে গেছেন।

চেম্বারের যে সংবিধান বা গঠনতন্ত্র সে অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সদস্যপদ নবায়নের সময়সীমা থাকার কথা; কিন্তু প্রশাসক ১১ আগস্ট নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করেছেন। ১ সেপ্টেম্বর সদস্য পদ নবায়নের শেষ তারিখ ঘোষণা করেন। সংবিধান পরিপন্থিভাবে এটি করার কারণে হাজার হাজার সদস্য তাদের পদ নবায়ন করতে পারেননি। চট্টগ্রাম চেম্বারে ১৩ হাজার ৭০০ সদস্য রয়েছে। কিন্তু নবায়ন হয়েছে মাত্র ৬ হাজারের কিছু বেশি।

নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তি ফি আগে যেখানে ছিল ৭০০ টাকা থেকে সাড়ে ৮শ টাকা সেখানে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। সদস্য নবায়ন ফি ধার্য করা হয় ৫ হাজার টাকা। অস্বাভাবিক এই ফি বৃদ্ধির কারণেও চেম্বারের অনেক সদস্য তাদের সদস্যপদ নবায়ন করতে পারেননি। আবার ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়ী আগ্রহ থাকলেও সদস্য হতে পারেননি। যার ফল স্বরূপ চেম্বারের সদস্য বা ভোটার সংখ্যা নেমে আসে অর্ধেকে।

চেম্বারে আর্থিক-অনিয়ম দুর্নীতি থাকলেও সেগুলোর বিষয়েও প্রশাসক কোন ব্যবস্থা নেন নি। তারা চেম্বারের প্রশাসক আনোয়ারা পশাকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ অবস্থায় আনোয়ার পাশার অপসারণ দাবি ও নতুন প্রশাসক নিয়োগের জন্য বৈষম্যবিরোধী ব্যবসায়ী ফোরামের ব্যানারে আন্দোলনে নামেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তারা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও দেন।

এ অবস্থায় এক বছর পূর্ণ হওয়ায় চেম্বার থেকে আনোয়ারা পাশাকে সরিয়ে চট্টগ্রামের আরেক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নূরুল্লাহ নূরীকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। গত ৮ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে চেম্বারের নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তাকে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ব্যবসায়ী ফোরামের নেতা শহীদুল ইসলাম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, আমরা চাই একটি স্বচ্ছ ভোটার তালিকা। যাতে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ থাকবে। তারা তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করতে পারবেন। নতুন ভোটার ও সদস্যপদ নবায়নে অস্বাভাবিক ফি নির্ধারণের কারণে অনেক ব্যবসায়ী আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নতুন প্রশাসক দেখবেন এমনটাই আশা করেন তিনি।

গত ১১ আগস্ট নির্বাচনের যে শিডিউল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, শিডিউল অনুযায়ী আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বার নির্বাচন হওয়ার কথা। খসড়া ভোটার তালিকায় চেম্বারের অর্ডিনারি মেম্বার রয়েছে ৪ হাজার ১ জন এবং অ্যাসোসিয়েট মেম্বার রয়েছে ২ হাজার ৭৬৪ জন। পুরোনো তালিকায় এই সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ। তবে দ্বিগুণ হওয়ার পেছনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন প্যানেলের কারসাজি ছিল বলে সূত্র অভিযোগ করেছে। তারা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে দোকান কর্মচারী থেকে শুরু করে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের ভোটার করে পকেট ভোট তৈরি করেছিলেন।

Lading . . .