সেনবাগে বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবি দুটি পক্ষের, স্বাগত জানাল আরেকটি পক্ষ
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা ও পৌর বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়েছে। দলের দুটি পক্ষ কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে পৃথকভাবে বিক্ষোভ করেছে। অপর একটি পক্ষ নতুন কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে। আনন্দ মিছিলে অংশ নেওয়া কর্মীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। এতে অন্তত চারজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলায় পুলিশ ও সেনাসদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার রাতে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সেনবাগ উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। উপজেলা বিএনপির ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক করা হয় মোক্তার হোসেন পাটোয়ারীকে। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের অনুসারী। ৫৮ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব করা হয় সৌদি আরব বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের অনুসারী আনোয়ার হোসেনকে। ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয় জাহাঙ্গীর হাসান চৌধুরীকে। তিনি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারী। তাঁকে কাজী মফিজ আহ্বায়ক হিসেবে চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা ও পৌর কমিটি বাতিলের দাবিতে আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিক্ষোভ করেছে কাজী মফিজুর রহমানের অনুসারীরা। অপর দিকে বিকেল চারটায় জয়নুল আবদিন ফারুকের অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। ফারুকের অনুসারীরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘোষিত কমিটি বাতিলের আল্টিমেটাম দিয়েছেন।
অপর দিকে বিকেল পাঁচটায় আহ্বায়ক কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ মিছিল করেছে সৌদি আরব বিএনপির নেতা আবদুল মান্নানের অনুসারীরা। তবে তাঁদের মিছিলটি শেষ হওয়ার পর অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন মারামারিতে জড়ান। এতে কমপক্ষে চারজন আহত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রান্ত (১৯) ও মো. শাহজাহান (২০) নামের দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা শহরে সেনাবাহিনীর সদস্য ও পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে।
পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে ভিপি মফিজুল ইসলামকে। তিনি সৌদি আরব বিএনপির নেতা মান্নানের অনুসারী। ৩৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে শহীদ উল্যাকে। আর ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে ফারুক বাবুলকে। এঁরা দুজনই বিএনপি নেতা জয়নুল আবদিন ফারুকের অনুসারী।
কমিটি বাতিলের দাবিতে অনুসারীদের বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা বিগত দিনে সেনবাগে আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, জেল খেটেছেন, তাঁদের বাদ দিয়ে কমিটি করা হয়েছে।’
মারামারিতে লিপ্ত হওয়া প্রসঙ্গে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে আনন্দ মিছিল করেছেন। মিছিল শেষে পেছনে থাকা কয়েকজনের মধ্যে কী বিষয় নিয়ে ভুল–বোঝাবুঝি এবং মারামারি হয়েছে, সেটি জানতে পারেননি। কেউ আহত হওয়ার কথাও তিনি শোনেননি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, আহ্বায়ক কমিটির কোনো সদস্যকে নিয়ে কারও যদি কোনো আপত্তি থাকে, সে ক্ষেত্রে লিখিতভাবে জানাতে পারেন। কিন্তু সেটি না করে এভাবে রাস্তায় নেমে প্রতিক্রিয়া দেখানো খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবে জেলা বিএনপি।
সেনবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হজরত আলী বলেন, বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল হয়েছে। বিকেলে এক পক্ষের আনন্দ মিছিল শেষে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজনের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। বড় কোনো সমস্যা হয়নি। কেউ আহত হওয়ার তথ্য তাঁর জানা নেই। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।